ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কৃষি

বৈরী আবহাওয়া-ব্লাস্টরোগে স্বপ্নভঙ্গ বোরো চাষিদের

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১৩২ ঘণ্টা, মে ৬, ২০১৮
বৈরী আবহাওয়া-ব্লাস্টরোগে স্বপ্নভঙ্গ বোরো চাষিদের ক্ষতিগ্রস্ত ধান

দিনাজপুর: উত্তরাঞ্চলে দিনাজপুরের প্রায় অধিকাংশ লোকজন কৃষির উপর নির্ভরশীল। গত বছর বন্যায় ফসলি জমি নষ্ট হয়ে যাওয়ায় এ জেলার কৃষি নির্ভর মানুষদের ব্যাপক লোকসান গুনতে হয়। বন্যার লোকসান পুশিয়ে নেওয়ার স্বপ্ন নিয়ে চলতি বোরো চাষাবাদ শুরু করে।

স্থানীয় কৃষকদের সেই স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হতে চলেছে গত কয়েকদিনের ঝড়-বৃষ্টি ও ফসলি ক্ষেতে ব্লাস্ট রোগের আক্রমণে। কয়েকদিন আগেই ধানের কচি ডগার বুক ছেদ করে বের হয়ে আসা ধানের শীষগুলো পরিপূর্ণ যৌবন হয়ে আসছে।

ধানের শীষের যৌবনকালে জেলার চিরিরবন্দর, খানসামা, সদর, বিরলসহ বিভিন্ন এলাকার ফসলি জমিতে আক্রমণ করেছে ব্লাস্ট রোগ।

ব্লাস্ট রোগের আক্রমণে ধানের শীষের ভেতরে আসা সদ্য দানা ও সবুজ পাতা। ব্লাস্ট রোগ হতে ফসলি ক্ষেতকে রক্ষা করতে প্রতিনিয়ত পরিচর্যা করেও ব্যর্থ হচ্ছে কৃষক। এই রোগ থেকে ফসলি জমি রক্ষা করতে কৃষকদের গুনতে হচ্ছে অতিরিক্ত অর্থ। বর্তমান ফসলি জমির এ পরিস্থিতে সবচেয়ে বিপদের সম্মুখীন এখন বর্গা চাষিরা। ধার-মহাজন করে চাষাবাদ করে বকেয়া পরিশোধ নিয়ে চিন্তিত তারা। তবে কৃষি বিভাগ বলছে নিয়মিত সঠিক পরামর্শে পরিচর্যা করলে এ রোগ নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব।

অপরদিকে গত কয়েকদিনের ঝড়-বৃষ্টিতে ধানের শীষে আসা সদ্য কচি দানাসহ হেলে-ভেঙে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে গাছ।

কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে দিনাজপুর জেলার ১৩ উপজেলার মোট ১ লাখ ৭৩ হাজার ৬৫০ হেক্টর জমিতে বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ নিয়ে চাষাবাদ শুরু করে কৃষক। যা পরবর্তীতে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যায়। এবার প্রতি হেক্টর জমিতে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪ দশমিক ৭৫ থেকে ৫ মেট্রিক টন ধান। যা মোট জমির উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা দাঁড়ায় প্রায় ৬ লাখ ৮৫ হাজার মেট্রিক টন ধান।

এদিকে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার প্রভাবে ও ব্লাস্টরোগ থেকে ফসলি জমি রক্ষার্থে কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা সরকারি ও সাপ্তাহিক ছুটি বাতিল করে মাঠপর্যায়ে কৃষকদের সহযোগিতা করে যাচ্ছেন। তবে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া ও ব্লাস্টরোগের আক্রমণে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা করছে স্থানীয় কৃষকরা।

জেলার বিরল উপজেলার পলাশবাড়ী এলাকার বর্গা চাষি মো. জোবায়দুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, প্রতিবারের মতো এবারও তিনি অন্যের সাতবিঘা জমি বর্গা নিয়ে চাষ করছেন। গত কয়েকদিনের ঝড়-বৃষ্টিতে তার অনেকাংশ জমির ধান শীষসহ গাছ ভেঙে ও হেলে পড়ে নষ্ট হয়ে গেছে। এছাড়াও দেখা দিয়েছে ব্লাস্টরোগের আক্রমণ। রোগ থেকে ফসলকে রক্ষা করতে প্রতিনিয়ত পরিচর্যা করতে হচ্ছে। রোগ থেকে বাঁচাতে পরিচর্যার কাজে ব্যয় হচ্ছে অতিরিক্ত খরচা। মহাজনদের কাছ থেকে ধারের টাকা দিয়ে চাষাবাদ করেছেন। ধান উৎপাদনে খরচা না উঠলে মহাজনদের টাকা পরিশোধ করবে কি করে এখন সার্বক্ষণিক এই চিন্তায় করেন তিনি।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক ড. তৌহিদুল ইকবাল বাংলানিউজকে জানান, ব্লাস্ট একটি ছত্রাকজনিত রোগ। রোগটি বৈরী আবহাওয়ায় দ্রুত এক গাছ থেকে অন্য গাছে ছড়ায়। চিন্তার কোনো কারণ নেই। সঠিক পরিচর্যার মাধ্যমে রোগটিকে নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। তবে দ্রুত পরিচর্যা করে রোগাক্রান্ত পাশের জমিকে এই রোগের হাত থেকে রক্ষা করতে হবে। এজন্য কৃষি বিভাগ থেকে কৃষকদের সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে। সুষ্ঠুভাবে ফসল ঘরে তোলার জন্য ছুটি বাতিল করে কৃষকের পাশেই আছেন কৃষি কর্মকর্তারা।

বাংলাদেশ সময়: ০৭২৯ ঘণ্টা, মে ০৬, ২০১৮
এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।