ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কৃষি

বছরে নষ্ট হচ্ছে ৩০ হাজার কোটি টাকার শস্য

নিউজ ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৩৪ ঘণ্টা, মে ১৬, ২০১৮
বছরে নষ্ট হচ্ছে ৩০ হাজার কোটি টাকার শস্য

ঢাকা:  গত ২০১৫-১৬ অর্থবছরে চাল, গম, ভুট্টা, পেয়াঁজ, আলু, সব ধরনের ফল ও সবজির উত্পাদন ছিলো প্রায় ৬ কোটি টন। এসব খাদ্যশস্য উত্পাদক থেকে শুরু করে ভোক্তা পর্যায়ে পৌঁছাতেই নষ্ট হয়েছে প্রায় ৭৭ লাখ ৫০ হাজার টন। যার বাজার মূল্য প্রায় ৩০ হাজার ৪০০ কোটি টাকা।

বুধবার (১৬ মে) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ক্রিশ্চিয়ান-এইডের সহায়তায় খাদ্য অধিকার বাংলাদেশ আয়োজিত ‘খাদ্যের অপচয়রোধে রাষ্ট্রের ভূমিকা ও খাদ্য অধিকার’ শীর্ষক এক জাতীয় সেমিনারে এ তথ্য উঠে আসে।  

খাদ্য অধিকার বাংলাদেশের ভাইস চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহীম খালেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ কৃষি সাংবাদিক ফোরামের (বিজেএএফ) সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক সাহানোয়ার সাইদ শাহীন।

মূল প্রবন্ধে তিনি বলেন, গবেষণায় ২০১৫-১৬ অর্থবছরে উত্পাদিত শস্যের পোস্ট হারভেস্ট লস ও আর্থিক মূল্য বের করা হয়েছে। খাদ্যশস্য, সবজি ও ফলমূলের ১০-২৫ শতাংশ পর্যন্ত ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে উত্পাদক থেকে শুরু করে মধ্যস্বত্বভোগী, সংগ্রহকারী, মজুদদার, পাইকার ও খুচরা ব্যবসায়ীর হাতবদলে।  

গড়ে উত্পাদিত শস্যের প্রায় ১৩ শতাংশই নষ্ট হচ্ছে। ক্ষতি হওয়া এসব শস্যের আর্থিক মূল্য মোট বাজেটের প্রায় ১০ শতাংশ এবং বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির প্রায় ৩০ শতাংশ। দেশের এ অপচয়রোধ করা গেলে খাদ্যশস্য আমদানি শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা সম্ভব বলে জানান শাহিন।

খোন্দকার ইব্রাহীম খালেদ বলেন, খাদ্যশস্যের অপচয় দেশের প্রবৃদ্ধিকে খেয়ে ফেলছে। অপচয়ের মাধ্যমে মানুষের অধিকার ও খাদ্য নিরাপত্তাকে বাধাগ্রস্ত করছে। খাদ্যশস্যের এ ধরনের অপচয় খাদ্য নিরাপত্তার জন্য যেমন হুমকি, তেমনি খাদ্য অধিকারকেও বঞ্চিত করছে। সার্বিকভাবে পুষ্টি নিরাপত্তাকে করছে বাধাগ্রস্ত। আর দেশের অর্থ ও সম্পদের অপচয়ও হচ্ছে। ফলে খাদ্যের অপচয়রোধে রাষ্ট্রের উদ্যোগের পাশাপাশি সামাজিক আন্দোলন প্রয়োজন। শস্য সংরক্ষণ ও পরিবহনের ক্ষেত্রে ছোট ছোট প্রযুক্তি দ্রুত কৃষকের কাছে পৌঁছাতে হবে। আর কৃষকের ভর্তুকি বাড়াতে হবে।

স্বাগত বক্তব্যে খাদ্য অধিকার বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক এবং ওয়েভ ফাউন্ডেশন-এর নির্বাহী পরিচালক মহসিন আলী বলেন, দেশে খাদ্যশস্য উত্পাদন ও সংরক্ষণের ক্ষেত্রে সরকারের সক্ষমতা যেমন বৃদ্ধি পেয়েছে কিন্তু ব্যবস্থাপনা, খাদ্যশস্যের সহজলভ্যতা এবং নীতি ও কর্মসূচির যথাযথ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে রয়ে গেছে অনেক সীমাবদ্ধতা। খাদ্যের অপচয়ের কারণে খাদ্য ও স্বাস্থ্য নিরাপত্তায় হুমকি যেমন হচ্ছে তেমনি পণ্যের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে। দারিদ্র্যতা কমিয়ে আনা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। তাই খাদ্য অধিকার আইন প্রণয়ন ও তার যথাযথ বাস্তবায়ন জরুরি।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের (ডিএই) সাবেক মহাপরিচালক ও হরটেক্স ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কৃষিবিদ মো. মনজুরুল হান্নান বলেন, প্রযুক্তির অভাব, শস্য শুকানোর পদ্ধতিগত ক্রুটি, বিপণন পর্যায়ে দুর্বলতা, সীমিত গুদামজাতকরণ, দুর্বল পরিবহনজাতকরণ এবং প্যাকেজিংয়ের অভাবেই শস্যের অপচয় হচ্ছে। উত্পাদন ক্ষেত্রে অপচয়ের পাশাপাশি খাদ্যগ্রহণের ক্ষেত্রে এ অপচয়রোধ করতে পারলে আমরা ৫ শতাংশ খাদ্য অপচয় রোধ করতে পারবো।  

দেশের নাজুক পুষ্টি পরিস্থিতিতে খাদ্য অপচয়রোধের কোনো বিকল্প নেই জানিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. খালেদা ইসলাম বলেন, খাদ্য অপচয়রোধ করতে পারলে আমরা অধিক সংখ্যক লোকের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারবো। পাশাপাশি পুষ্টির যোগান দিতেও সক্ষম হবো।

বাংলাদেশ সময়: ২৩৩০ ঘণ্টা, মে ১৬, ২০১৮
এমআইএস/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।