ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কৃষি

তদবিরে বাড়তি চাল বরাদ্দ মিললেও মেলেনি বরাদ্দপত্র

বেলাল হোসেন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩০১ ঘণ্টা, জুলাই ১৬, ২০১৮
তদবিরে বাড়তি চাল বরাদ্দ মিললেও মেলেনি বরাদ্দপত্র চালের বাজার। ছবি: বাংলানিউজ

বগুড়া: চালকল ছাড়াও একাধিক ব্যবসা রয়েছে মো. মোখলেছুর রহমানের। বাড়ি বগুড়ার শেরপুর উপজেলার দুবলাগাড়ী এলাকায়। ব্যবসাও একই এলাকায়। এ উপজেলার একজন বড় মাপের ধান-চাল ব্যবসায়ী মোখলেছুর। একইসঙ্গে তিনি এ জেলার একজন লাইসেন্সধারী মিলার।

সেই হিসেবে বোরো মৌসুমের চাল দিতে সরকারের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন এই ব্যবসায়ী। এরইমধ্যে বাড়তি বরাদ্দ পেতে তিনি সরকারের সংশ্লিষ্ট কয়েকটি দফতরে তদবির শুরু করেন।

তদবিরে কাজও হয়। সম্প্রতি তার তদবিরে শেরপুর উপজেলায় এক হাজার মেট্রিকটন ও সারিয়াকান্দি উপজেলায় এক হাজার মেট্রিকটন বাড়তি চাল বরাদ্দ আসে। সারিয়াকান্দি উপজেলায় সরকারি দলের একজন প্রভাবশালী নেতা বাড়তি বরাদ্দের পেছনে তদবির করেন বলে জানা যায়।

কিন্তু বিধি বাম! বাড়তি বরাদ্দ আসলেও ব্যবসায়ী মোখলেছুর রহমানের নামে কোনো বরাদ্দপত্র আসেনি। বাড়তি দুই হাজার মেট্রিকটন চালই বগুড়া জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক বরাবর এসেছে। এরইমধ্যে লাইসেন্সধারী মিলাররাও বিষয়টি জেনে গেছেন। তারা এখন নিয়মানুযায়ী বাড়তি বরাদ্দের ওই চাল বণ্টন করে দিতে স্ব স্ব উপজেলার খাদ্য নিয়ন্ত্রকের ওপর চাপ সৃষ্টি করছেন।

সব মিলে ঘটনাটি নিয়ে জেলার মিলারদের মধ্যে তোলপাড় চলছে। একইসঙ্গে জেলার একাধিক মিলার সরকারি দলের বেশ কয়েকজন নেতা ও জনপ্রতিনিধির মাধ্যমে চালের বাড়তি বরাদ্দ পেতে জোর তদবির চালিয়ে যাচ্ছেন বলেও সংশ্লিষ্ট বিভাগের একটি দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে।

সোমবার (১৬ জুলাই) বেলা সাড়ে ৩টার দিকে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে মোখলেছ চালকলের সত্ত্বাধিকারী মো. মোখলেছুর রহমান ঢাকায় অবস্থান করছেন জানিয়ে বাংলানিউজকে বলেন, তদবির করে চাল আমি বরাদ্দ নিয়েছি। কিন্তু আমার কাছে বরাদ্দের কোনো কাগজপত্র নেই। তাই বরাদ্দকৃত ওই চালকে আপাতত আমার চাল বলতে পারছি না। এ জন্য ঢাকায় আছি। দেখি আমার নামে কোনো কাগজপত্র আছে কি-না। কালকে মঙ্গলবার (১৭ জুলাই) শেরপুর সাক্ষাতে বাকি আলাপ করা যাবে।

জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. মাইন উদ্দিন তদবির করে বাড়তি চাল বরাদ্দ আনার বিষয়টি বাংলানিউজকে নিশ্চিত করে জানান, দুই হাজার মেট্রিকটন চাল তার বরাবর বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এটা শুধু শেরপুর বা সারিয়াকান্দি উপজেলার জন্য নয়, গোটা জেলার জন্য। এসব চাল নিয়মানুযায়ী মিলারদের মধ্যে বিভাজন করে দেওয়া হবে।

এদিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে খাদ্য বিভাগেরে একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, বগুড়াসহ দেশের বেশির ভাগ এলাকায় চালের বাজার দিন দিন কমছে। সেই অনুপাতে ধানের বাজার কমছে না। আবার চাতাল বন্ধ করলে শ্রমিক পাওয়া কঠিন হয়ে যায়। এসব কারণে আপাতত লোকসান শিকার করেই চাতাল চালু রাখতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের।  

ব্যবসায়ীরা বোরো মৌসুমের চাল সরকারকে দিতে মরিয়া। কারণ সরকার প্রতিকেজি সেদ্ধ চাল ৩৮ টাকা ও আতব চাল ৩৭ টাকায় ক্রয় করছে যা বর্তমানের বাজারের চেয়ে কেজিতে কয়েকটা বেশি। এতে ব্যবসায়ীরা ব্যাপকভাবে লাভবান হচ্ছেন। আর সেই লোভ থেকেই যে-যার  মতো করে প্রভাব খাটিয়ে বাড়তি বরাদ্দ আনতে উঠে পড়ে লেগেছেন। বাড়তি বরাদ্দ পেতে মেট্রিকটন প্রতি আড়াই থেকে তিন হাজার টাকা অনৈতিক সুবিধা গুণতে হয় বলেও সূত্রটির দাবি।

সংশ্লিষ্ট সূত্র আরও জানায়, চলতি বোরো মৌসুমে এ জেলার ১২ টি উপজেলায় সরকারিভাবে ৯২ হাজার ৫৩১ মেট্রিকটন সেদ্ধ ও আতব চাল সংগ্রহ করা হবে। প্রতিকেজি সেদ্ধ চালের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৮ টাকা ও আতব চালের দাম ৩৭ টাকা। এ জেলায় লাইসেন্সধারী মিলার রয়েছেন প্রায় এক হাজার ৯৫৬ জন।

সোমবার (১৬ জুলাই) পর্যন্ত প্রায় ৭৩ হাজার মেট্রিকটন চাল সংগ্রহ করা হয়েছে এ জেলায়। স্থান সংকুলান না হওয়ায় নির্ধারিত চাল সংগ্রহে ভাটা পড়েছে। আগামী ৩১ আগস্ট পর্যন্ত বোরো মৌসুমের চাল সংগ্রহ অভিযান অব্যাহত থাকবে।  

বাংলাদেশ সময়: ০৪৫৮ ঘণ্টা, জুলাই ১৭, ২০১৮
এমবিএইচ/এনএইচটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।