ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কৃষি

৫ থেকে ৮৫ ভেড়া, তবু অভাবী গোলজার!

বেলাল হোসেন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৩৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১১, ২০১৯
৫ থেকে ৮৫ ভেড়া, তবু অভাবী গোলজার! খামারের ভেড়া নিয়ে মাঠে গোলজার/ছবি: বাংলানিউজ

বগুড়া: প্রায় সাত বছর আগের কথা। শখের বশে পাঁচটি দেশি জাতের ভেড়া কেনেন গোলজার রহমান। নিজ বাড়িতেই পালন শুরু করেন ভেড়াগুলো। মাত্র বছরখানেকের মাথায় কয়েকটি ভেড়া বাচ্চাও জন্ম দেয়। বাচ্চাগুলোর সেবাযত্নে কোনো ক্রুটি রাখেননি তিনি।

সময়ের ব্যবধানে বেড়ে উঠতে থাকে বাচ্চাগুলো। সঙ্গে বিষাদময় গোলজারের চোখে-মুখে ধরা দেয় নতুন স্বপ্ন।

সেই স্বপ্নের বাস্তবরূপ দিতে ভেড়ার পেছনে সার্বক্ষণিক শ্রম দিতে থাকেন অভাবী গোলজার রহমান। তার পাশে দাঁড়িয়ে যান স্ত্রীও। বর্তমানে তিনি একজন সফল ভেড়ার খামারি।
 
বর্তমানে তার খামারে রয়েছে ৮৫টি ভেড়া। দূর হয়েছে সংসারের অভাব। কিন্তু এখনো কিছু কাজ বাকি রয়েছে। খামার তৈরির মতো নিজস্ব কোনো জায়গা জমি করতে পারেননি তিনি। এখনো অন্যের জায়গায় তাকে রাখতে হয় প্রিয় ভেড়াগুলো। তবে এ কাজে সবার সহযোগিতা পান গোলজার।  
 
বগুড়ার সোনাতলা উপজেলার মধুপুর ইউনিয়নের ছাতিয়ানতলা গ্রামের বাসিন্দা গোলজার রহমান। তার বাবার নাম মধু ব্যাপারি। অনেক আগেই মারা গেছেন তিনি।
 
বাবা পেশায় ছিলেন মাংস ব্যবসায়ী। বাবার হাত ধরেই গোলজার রহমানও রপ্ত করে নেন সেই ব্যবসা। কিন্তু এই ব্যবসা করে অভাবী পরিবারের অভাব কিছুতেই দূর করতে পারছিলেন গোলজার রহমান। এরই মধ্যে বিয়ে করেন তিনি। শুরু করেন ছোটখাটো ভিন্ন ব্যবসা। তবু অবস্থার কোনো পরিবর্তন হচ্ছিলো না। উল্টো পরিবারে স্থান করে নেয় চরম অভাব।
 
কিন্তু হাল ছাড়েননি লেখাপড়া না জানা গোলজার। এরই মধ্যে পাঁচটি দেশি জাতের ভেড়া কেনেন। নিজ বাড়িতেই সেই ভেড়াগুলো লালন পালন করতে থাকেন। নির্ধারিত সময়ে সেগুলো বাচ্চা দেয়। একটা সময় বড় হয়ে ওঠে। এরপর তাকে আর পিছু তাকাতে হয়নি।   
      
তিনি জানান, ভেড়া পালনের কাজে তাকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করে তার স্ত্রী। শখের বশে পাঁচটি ভেড়া পালন শুরু করার পর থেকে প্রত্যেক বছরই ভেড়া বাড়তে থাকে। বর্তমানে তার খামারে ৮৫টি ভেড়া রয়েছে। কিন্তু অতি দরিদ্রতার কারণে ভেড়াগুলো রাখার জায়গা নিয়ে সমস্যা দেখা দেয়। এছাড়া স্থানীয়ভাবে কোনো চারণভূমিও নেই।
 
বছরচারেক আগের কথা। ভেড়াগুলো নিয়ে চলে যান পাশের তেকানী চুকাই নগর ইউনিয়নের কাচারী বাজার এলাকায়। সেখানে আছাব্বর নামের এক ব্যক্তি তাকে একটি পরিত্যাক্ত ঘর ছেড়ে দেন। বিনা ভাড়ার সেই ঘরে ভেড়াগুলো রাখতে শুরু করেন। এখনো সেই ঘরই তার ভেড়ার খামার।  
 
গোলজার রহমান বাংলানিউজকে জানান, গ্রামটির পাশ দিয়ে যমুনা নদী অতিবাহিত। বর্তমানে নদীতে জেগে উঠেছে অসংখ্য চর। প্রত্যেক দিন সকালে ভেড়াগুলো নিয়ে তিনি চলে যান যমুনার চরাঞ্চলে। সেখানে ঘাস বা লতাপাতা খাওয়ানো শেষে সন্ধ্যায় ফিরে আসেন ঘরে।
 
তিনি আরও জানান, এখন তার কোনো অভাব নেই। পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ ভালোই আছেন। কেননা অর্থের প্রয়োজন দেখা দিলেই বিক্রি করেন খামারের ভেড়া। সেই টাকায় পরিবারের চাহিদা মেটান। এভাবেই চলছে গোলজার রহমানের জীবন-জীবিকা। এছাড়া এলাকার লোকজন ভেড়ার খামারি হিসেবে তাকে এক নামে চেনেন। যোগ করেন এই খামারি।   
 
সোনাতলা উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. রহমত উন নবী বাংলানিউজকে জানান, এ উপজেলার মধ্যে গোলজার রহমানের ভেড়ার খামার সবচেয়ে বড়। তিনি একজন সফল খামারি। তার খামারের ভেড়ার কোনো সমস্যা দেখা দিলে খামারে গিয়ে বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়।  
 
বাংলাদেশ সময়: ১০৩০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১০, ২০১৯
এমবিএইচ/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।