ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কৃষি

মাশরুম চাষে সফল পলাশ কুসুম চাকমা

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৩২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০১৯
মাশরুম চাষে সফল পলাশ কুসুম চাকমা সফল মাশুরুম চাষি রাঙামাটি সদর উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান পলাশ কুসুম চাকমা। ছবি: বাংলানিউজ

রাঙামাটি: দেশে মাশরুম উৎপাদন প্রায় ৩০ বছর ধরে চললেও এটি এখনো লাভজনক পণ্য হিসেবে গুরুত্ব পায়নি। তাই বলে হতাশা নেই এ পেশার সঙ্গে জড়িত চাষিদের। চালিয়ে যাচ্ছেন চাষবাস। কেউ কেউ অনুকরণীয়ও হয়ে উঠছেন।

বিশেষ করে পাহাড়ে জনপ্রিয়তা পেয়েছে এ কৃষিজ পণ্য চাষ। পাহাড়ের অধিকাংশ বাসিন্দা জুম বা ফলের চাষের পাশাপাশি বাড়ির ছোট্ট আঙিনায় করছেন মাশরুম চাষ।

অনেকে স্থানীয় কৃষি বিভাগ, মাশরুম উৎপাদন কেন্দ্র, বিভিন্ন বেসরকারি এনজিও কিংবা যুব উন্নয়ন থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে বাণিজ্যিক আকারে মাশরুম চাষ করছেন।  

মাশরুম চাষ করে যারা অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে উঠেছেন, তাদের একজন রাঙামাটি সদর উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান ও জেলা শহরের রাঙাপানি এলাকার বাসিন্দা পলাশ কুসুম চাকমা। তিনি তার পরিবারের সহযোগিতা নিয়ে দু’বছর ধরে মাশরুম চাষ করে যাচ্ছেন। আর্থিকভাবে এখন বেশ স্বাবলম্বী।

পলাশ কুসুম চাকমা বাংলানিউজকে বলেন, পাহাড়িরা প্রকৃতভাবে চাষাবাদ নির্ভর পরিশ্রমী জাতি। সারাবছর জুম চাষ, ফলের চাষ, শুকর পালন প্রভৃতি নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করে। পাশাপাশি পাহাড়িদের জনপ্রিয় একটি খাবারের নাম মাশরুম। তাই বাজার করার সময় প্রতিদিন মাশরুম কিনে আনতে হয়।
সফল মাশুরুম চাষি রাঙামাটি সদর উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান পলাশ কুসুম চাকমা ও তার স্ত্রী তারা বীণা চাকমা ।  ছবি: বাংলানিউজ
পলাশ কুসুম জানান, শখ করে একদিন বাড়ির খালি জায়গায় মাশরুম চাষ শুরু করেন। দেখেন অল্প জায়গায় ভালো উৎপাদন হয়েছে। তাই সিদ্ধান্ত নিলেন বাণিজ্যিকভাবে মাশরুম চাষ শুরু করবেন। এজন্য স্থানীয় মাশরুম কেন্দ্র থেকে ১৫ দিনের একটি প্রশিক্ষণ নেন তিনি। পাশাপাশি স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়াতে থাকে।

এরপর তাদের পরামর্শ নিয়ে ২০১৬ সালের শেষের দিকে বাড়ির পরিত্যক্ত পাঁচ শতাংশ জায়গার ওপর শেড তৈরি করে গড়ে তোলেন মাশরুম চাষ কেন্দ্র।  ঘর নির্মাণ বাবদ বাদে মাশরুম চাষে পুঁজি মাত্র ৫০ হাজার টাকা।  এরপর পেছনে আর ফিরে তাকাতে হয়নি তার উৎপাদনের প্রথম ধাপেই আয় হয় দেড় লাখ টাকা।

পলাশ কুসুম বলেন, উন্নত জাতের মাশরুম বীজ সংগ্রহ করা হয় স্থানীয় সরকারি মাশরুম সেন্টার থেকে। কী জাতের বীজ দিয়ে মাশরুমের চাষ করছেন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, প্রিয় টু, প্রিয় টেন, এসকে এবং ডাব্লিউ জাতের বীজ ব্যবহার করা হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, বর্তমানে প্রতিবছর মাশরুম থেকে তিন লাখ টাকা আয় হয়। পাশাপাশি মাশরুমের টাকার আয় দিয়ে অন্য একটি জায়গায় সোনালী জাতের মুরগির খামার গড়ে তুলেছি। সেই খামারে বর্তমানে ৫০০টি মুরগি রয়েছে। প্রতিদিন গড়ে ১০০ থেকে ১২০টি ডিম পাওয়া যায়। মাশরুম আর মুরগির খামারের আয় দিয়ে বেশ ভালো।

এ কাজে পলাশের স্ত্রী তারা বীণা চাকমা এবং শ্যালিকা সন্ধ্যা রাণী চাকমা সহযোগিতা করছেন বলেও জানান তিনি।

এ বিষয়ে রাঙামাটি সদর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা হারুনুর রশীদ ভূঁইয়া বাংলানিউজকে বলেন, মাশরুম চাষে আমাদের প্রধান সমস্যা হলো- এর গুণাগুণ এবং সবজি হিসেবে মাশরুম যে এক অনন্য খাবার হতে পারে তা প্রচার-প্রচারণার মাধ্যমে মানুষের মাঝে ছড়াতে পারিনি। এছাড়া মাশরুম বাণিজ্যিক এবং সংরক্ষণ করার ক্ষেত্রে আমরা বেশ পিছিয়ে রয়েছি।

কৃষি বিভাগ বর্তমানে ঘরে ঘরে ব্যাপক হারে মাশরুম উৎপাদনের প্রচারণা চালাচ্ছে। পাশাপাশি এর বাণিজ্যিক বিভিন্ন অসুবিধা দূর করতে এবং এর সংরক্ষণ কিভাবে করা যায় তার উপায় বের করতে কাজ করছে।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৩২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০১৯
জিপি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।