জন্ম তার চা বাগানেই। আর সবার মতো তিনিও চা বাগানের অন্য শ্রমিক হয়ে যেতে পারতেন।
সম্প্রতি জাগছড়া চা বাগানে গিয়ে ‘সফল চাষির কথা’ জিজ্ঞেস করতেই লোকমুখে সাধনের নাম পুনোচ্চারিত হলো। উপস্থিত সবাই তাদের বাগানিভাষায় কথা বলতে বলতে বুঝিয়ে দিলো- এ এলাকায় সাধন সিং রাউতিয়াই একজন সফল চাষি। আধুনিক পদ্ধতিতে সারাবছর কৃষিকাজ করে চলেছেন তিনি। এখন স্বপ্ন তার প্রশিক্ষণ নিয়ে ছাগলের খামার করার।
পরমুহূর্তেই হঠাৎ তার উপস্থিতি। ব্যস্ত হয়ে নিজের কৃষিক্ষেতের দিকে যাচ্ছেন। পরিচয়পূর্ব শেষ করতেই দূর থেকে ‘টেকটেক, টেকটেক’ শব্দ ভেসে আসছে কানে। জিজ্ঞেস করতে সাধন জানান, মেশিন দিয়ে হালচাষ চলছে। কিছুদিন পরেই ধান লাগাবো।

তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ‘আগে তো স্থানীয় কৃষি অফিস থেকে নানান সুযোগ-সুবিধা পেতাম। গত এক বছরে পাই না। ’
কথা বলতে বলতে সাধন আমাকে তার কৃষি বাগানটি দেখার আমন্ত্রণ জানান। তার বাগানে যেতে হলে যে পাহাড়িছড়া পেরুতে হবে তা জানা ছিল না। অগত্যা জুতা হাতে নিয়ে পাহাড়িছড়া পেরুতে হলো। কী স্নিগ্ধতার প্রশান্তি- সেই পানিতে!
তার বাগানে গিয়ে দেখা গেছে, ঝিঙার মতো মোটাতাজা হয়ে ঝুলছে ‘ধুন্দল’। দারুণ দেখতে। মুগ্ধতায় চোখ ফেলানো যায় না। ধুন্দল ছাড়াও এ সবজিটির অপর নাম ধুঁধুঁল বা ধুন্দুল। এর বৈজ্ঞানিক নাম Luffa aegyptiaca। এরা শসা-লাউ পরিবারের এবং ঝিঙা গণের উদ্ভিদ।
তার ক্ষেতের এ ধুন্দল সম্পর্কে সাধন বলেন, দশ শতাংশ জায়গাজুড়ে এ সবজিটি লাগিয়েছি। ১৫০ টাকার এক প্যাকেট বীজসহ প্রায় ৩ হাজার টাকার মতো খরচ হয়েছে। তিন মাস পরে প্রায় ৮ হাজার টাকা মতো ধুন্দল বিক্রি করেছি। বাজারে এখন এর কেজি প্রায় ৪০/৪৫ টাকা করে।

কীটনাশক ছিটানোর কতদিন পর বাজারজাত করা হয়েছে- এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, কীটনাশক স্প্রে করার পরদিন আমরা কখনই কোনো সবজি গাছ থেকে তুলে বাজারজাত করি না। ন্যূনতম এক সপ্তাহ থেকে দশ দিন পরে তুলি। ততদিনে কীটনাশকের হালকা ক্ষতির দিকটি একদম কেটে যায়। ধুন্দুলের ক্ষেত্রেও তাই।
ঘণ্টা পেরিয়ে গেল দ্রুত। বিদায়ের পালা এবার। নানা কথার ভেতর হঠাৎ সাধনের মুখ থেকে ছাগলের খামার করার স্বপ্নটি বের হয়ে এলো। আমিও তার সেই স্বপ্নকথার শ্রবণদাতা হয়ে রইলাম।
বাংলাদেশ সময়: ১২০০ ঘণ্টা, আগস্ট ২২, ২০১৯
বিবিবি/আরবি/