ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কৃষি

কুষ্টিয়ায় হেক্টর প্রতি ফলন বাড়ছে ফসলের

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৪৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৮, ২০১৯
কুষ্টিয়ায় হেক্টর প্রতি ফলন বাড়ছে ফসলের

কুষ্টিয়া: মাটির ধরন ও পরিবেশ অনুযায়ী বাংলাদেশের মাটিকে ৩০টি কৃষি পরিবেশ অঞ্চলে ভাগ করা হয়েছে। স্বল্প বৃষ্টিপাত সম্পন্ন এলাকায় অবস্থিত ‘কৃষি পরিবেশ অঞ্চল-১১’। দেশের দক্ষিণ অঞ্চলের জেলা কুষ্টিয়া এ অঞ্চলে অবস্থিত।

গঙ্গাবাহিত পলি মাটির কারণে এই অঞ্চলের প্রধান ফসল ধান। কুষ্টিয়া অঞ্চলের মাটি উঁচু এবং মাঝারি উঁচু জমিতে হালকা বুনটের বেলে হতে দোআঁশ এবং নিচু ও মাঝারি নিচু জমিতে পলি দোআঁশ থেকে এটেল দোআঁশ বুনট বিশিষ্ট।

তাই ধান ভিত্তিক দুই ফসলি ও তিন ফসলি জমি এ এলাকার প্রধান শস্য বিন্যাস।

ধান ছাড়াও এ জেলায় গম, ভুট্টা, সরিষা, তিল, চিনাবাদাম, ছোলা, মটর, খেসারি, মাসকলাই, মুগ, মরিচ, পেঁয়াজ, রসুন, আদা, হলুদ, ধনিয়া, আলু, পটল, বেগুনসহ বিভিন্ন প্রকার সবজি ছাড়াও আখ, পাট তামাক চাষ হয়ে থাকে।

জেলা কৃষি অফিসের দেওয়া তথ্যমতে, বিগত কয়েক বছরের তুলনায় কুষ্টিয়ায় প্রায় সব ধরনের কৃষি পণ্যের উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে।

২০০৮-০৯ সালে কুষ্টিয়ায় ধানের হেক্টর প্রতি ফলন ছিল ২ দশমিক ৫৭ মেট্রিকটন। যা ২০১৬-১৭ সালে বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় ৩ দশমিক ৩৮ মেট্রিক টন। শতকরা ৩১ দশমিক ৫০ শতাংশ বেশি। ২০১৮-১৯ সালে আবাদ হয়েছিল ১ লাখ ৪৮ হাজার ৪৩৫ হেক্টর, উৎপাদন হয়েছিল ৫ লাখ ৮৫৯ মেট্রিক টন।  

২০০৮-০৯ সালে গমের হেক্টর প্রতি ফলন ছিল ২ দশমিক ৩৮ মেট্রিকটন। যা ২০১৬-১৭ সালে বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় ৩ দশমিক ৬০ মেট্রিকটন। শতকরা ৫১ শতাংশ বেশি। ২০১৮-১৯ সালে আবাদ হয়েছিল ৯ হাজার ২৯৫ হেক্টর, উৎপাদন হয়েছিল ৩৬ হাজার ২৫০ মেট্রিকটন।  

২০০৮-০৯ সালে ভুট্টার হেক্টর প্রতি ফলন ছিল ৬ দশমিক ০৩ মেট্রিক টন। যা ২০১৬-১৭ সালে বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় ১০ দশমিক ৬০ মেট্রিকটন। শতকরা ৭৬ শতাংশ বেশি। ২০১৮-১৯ সালে আবাদ হয়েছিল ৮ হাজার ৪৭৫ হেক্টর, উৎপাদন হয়েছিল ৯০ হাজার ৩৭০ মেট্রিকটন।
 
২০০৮-০৯ সালে সরিষার হেক্টর প্রতি ফলন ছিল ১ দশমিক ২৬ মেট্রিকটন। যা ২০১৬-১৭ সালে বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় ১ দশমিক ৫০ মেট্রিক টন। শতকরা ১৯ শতাংশ বেশি। এছাড়া ৫৩৭টি মৌ বাক্স সরিষা ক্ষেতে স্থাপনের মাধ্যমে ৬৫২০ মধু আহরণ করা হয়। ২০১৮-১৯ সালে আবাদ হয়েছিল ৬ হাজার ৭৫০ হেক্টর, উৎপাদন হয়েছিল ৯ হাজার ৭৮৮ মেট্রিক টন। .২০০৮-০৯ সালে ডাল জাতীয় ফসলের গড় হেক্টরপ্রতি ফলন ছিল ১ দশমিক ২৪ মেট্রিক টন। যা ২০১৬-১৭ সালে বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় ১ দশমিক ৫৭ মেট্রিক টন। যা শতকরা ২৭ শতাংশ বেশি। ২০১৮-১৯ সালে আবাদ হয়েছিল ১৮ হাজার ৯৫ হেক্টর, উৎপাদন হয়েছিল ২৬ হাজার ৬৫১ মেট্রিক টন।

২০০৮-০৯ সালে মসলা জাতীয় (মরিচ, পেঁয়াজ, রসুন, আদা, হলুদ, ধনিয়া) চাষ হয়েছিল ৫ হাজার ৯১৫ হেক্টর। হেক্টর প্রতি ফলন ছিল ৮ দশমিক ৬০ মেট্রিক টন। যা ২০১৬-১৭ সালে বৃদ্ধি পেয়ে চাষ হয় ১১ হাজার ২০ হেক্টর। ফলন ১২ দশমিক ৩৯ মেট্রিক টন। ২০১৮-১৯ সালে আবাদ হয়েছিল ১৫ হাজার ৯৯৮ হেক্টর, উৎপাদন হয়েছিল ১ লাখ ৭৮ হাজার এক মেট্রিক টন।  

২০০৮-০৯ সালে সবজি আবাদ হয়েছিল ৮ হাজার ৮৭৫ হেক্টর। উৎপাদন ছিল এক লাখ ৩৩ হাজার ১৬৮ মেট্রিকটন। যা ২০১৬-১৭ সালে বৃদ্ধি পেয়ে আবাদ হয় ৯ হাজার ৩৮৫ হেক্টর। ফলন হয় ২ লাখ ৩৪ হাজার ৫২৫ মেট্রিকটন। শতকরা ৩৬ শতাংশ বেশি। ২০১৮-১৯ সালে আবাদ হয়েছিল ৮ হাজার ৩০০ হেক্টর, উৎপাদন হয়েছিল ২ লাখ ৪ হাজার মেট্রিক টন।  

২০০৮-০৯ সালে পাটের আবাদ হয়েছিল ২৫ হাজার ২৬০ হেক্টর প্রতি ফলন ছিল ১১ দশমিক ৫০ মেট্রিক টন। যা ২০১৬-১৭ সালে বৃদ্ধি পেয়ে আবাদ হয় ৪২ হাজার ৩৮০ হেক্টর। হেক্টর প্রতি ফলন হয় ১২ মেট্রিক টন। যা শতকরা ১২ শতাংশ বেশি।

কুষ্টিয়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (শস্য) কৃষিবিদ রঞ্জন কুমার বাংলানিউজকে বলেন, কুষ্টিয়ার মাটি কৃষি কাজের জন্য উপযোগী। এছাড়া বর্তমানে নতুন নতুন ফসলের জাত, বিভিন্ন সময়ে সরকারি দেওয়া প্রণোদনা, ফসল উৎপাদনে বিভিন্ন কর্মসূচি, প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এছাড়া কৃষি পরামর্শের জন্য আমরা কৃষি অফিসের মাধ্যমে কৃষকের দোড়গোড়ায় সেবা পৌঁছে দিচ্ছি। এছাড়া বর্তমানে কৃষিবান্ধব সরকারের নীতিমালাও বড় ধরনের অগ্রণী ভূমিকা পাচ্ছে।

এছাড়া আমরা জেলা কৃষি অফিস থেকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আধুনিক চাষাবাদ, নিরাপদ উপায়ে ফসল উৎপাদনে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করছি। আইপিএম কৃষক মাঠ স্কুল, মাঠ দিবস, কৃষক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কৃষকদের আধুনিক চাষাবাদে উদ্বুদ্ধ করা, সহজ কৃষি উপকরণ প্রাপ্তির কারণেই উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে। আগামীতেও এ জেলায় সব ধরনের কৃষি পণ্যের উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে বলে আমরা আশা করছি।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৪০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৮, ২০১৯
এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।