ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কৃষি

‘সরকার দেখে না, আর গিরস্থি করতাম না’

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১০৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৬, ২০১৯
‘সরকার দেখে না, আর গিরস্থি করতাম না’

হবিগঞ্জ: দুই লাখ ৬৯ হাজার টাকা খরচে ৩৫ কিয়ার (এক কিয়ার= ৩৩ শতক) জমি চাষ করতাছি (করেছি)। আন্দাজ (অনুমান) করতাছি ধান অইবো (হবে) বেশি অইলে ৪২০ মণ। চলতি বাজারে ৫০০ টাকা মণ দরে যার দাম দুই লাখ ১০ হাজার টাকা। হিসাব কইরা (করে) দেখলাম লোকসান অইবো ৫৯ হাজার টাকা। পাঁচটা মাস নিজেসহ বউ-সন্তানদের পরিশ্রম না অয় বাদ ওই দিলাইলাম (দিলাম)। আসলে আমরার (আমাদের) কষ্ট সরকার দেখে না। তাই এইবারের পরে আর গিরস্থি (কৃষি কাজ) করতাম না।

রোপা আমন চাষে লোকসানের শঙ্কায় হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জ উপজেলার হিলালপুর গ্রামের প্রান্তিক কৃষক ওয়ারিশ মিয়া আক্ষেপ নিয়ে বাংলানিউজকে এভাবেই বলছিলেন।

কৃষক ওয়ারিশের হিসাব অনুযায়ী- জমির পরিমাণ ৩৩ শতাংশে হয় ১ কিয়ার।

তিনি চাষ করছেন ৩৫ কিয়ার। প্রতি কিয়ারে জমির রমজমা (বর্গাচাষ) চার হাজার, হাল চাষ ৭শ’, সার ও কীটনাশক এক হাজার, বীজ ক্রয়ে ৩শ’, রোপন করতে ৬শ’, ধান কাটতে ৯শ’, আনুষঙ্গিক খরচ হয় আরও ২শ’ টাকা। সব মিলিয়ে এক কিয়ারে খরচ দাঁড়িয়েছে সাত হাজার ৭শ’ টাকা।

অন্যদিকে, তার অনুমানে এক কিয়ার জমিতে ধান ফলবে বেশি হলে ১২ মণ। বর্তমানে স্থানীয় আড়তদাররা ধান কিনছেন প্রতি মণ ৫শ’ টাকায়। সে হিসেবে ১২ মণ ধানের মূল্য দাঁড়ায় ছয় হাজার টাকা। আর খরচ হয়েছে সাত হাজার ৭শ’ টাকা। প্রতি কিয়ারে তার লোকসান হচ্ছে এক হাজার ৭শ’ টাকা।

ওয়ারিশ মিয়া জানান, ভাদ্র থেকে পৌষ মাস পাঁচ মাস পরিশ্রমের পর এবার রোপা আমন ঘরে তোলার পালা। ধান কাটার সময় আসার সঙ্গে সঙ্গেই স্থানীয় আড়তদাররা একজোট হয়ে কমিয়ে দিয়েছেন ধানের দর। যে কারণে লোকসানের মুখে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে পড়েছেন বিপাকে। একইভাবে গ্রামের সামছুল, তোহেল মিয়া, নূর মিয়া, আব্বাস উদ্দিন, শাজাহান মিয়াসহ অনেকেই তার মতো লোকসানের মুখে দিশেহারা।  

হিলালপুর গ্রামের সামছুল বাংলানিউজকে বলেন, গত বোরো মৌসুমে ৩০ কিয়ার জমি চাষে লোকসান হয়েছিল ৫০ হাজার টাকা। সারা বছর বাবা-মা, ভাই-বোনকে নিয়ে কষ্টে-সৃষ্টে কয়েক মাস কাটিয়েছি। এবার রোপা আমনেও লোকসান হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে পূর্ব পুরুষের ঐতিহ্যবাহী এ পেশা ছেড়ে দেওয়া ছাড়া আমাদের আর পথ থাকবে না।

সরেজমিনে দেখা যায়, পিরিজপুর, হিলালপুর, জলসুখাসহ আশপাশের হাওরে চার থেকে পাঁচ দিনের মধ্যই রোপা আমন কাটা শুরু হবে। দাম নিয়ে হতাশায় রয়েছেন কৃষক পরিবার। এ ব্যাপারে দ্রুত সরকারের সহযোগিতা কামনা করছেন তারা।

হবিগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক তমিজ উদ্দিন খান বাংলানিউজকে বলেন, এবারে রোপা আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭৯ হাজার ২১৫ হেক্টর। চাষ হয়েছে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে ৯২ হাজার ১৫ হেক্টর। এছাড়া সম্ভাব্য ধান উৎপাদন ধরা হয়েছে দুই লাখ ২০ হাজার মেট্রিক টন।  

তবে ধানের মূল্য নিয়ে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি নিয়ে কথা বলেননি।

হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. কামরুল হাসান বাংলানিউজকে বলেন, কৃষকদের ন্যায্যমূল্য পাওয়ার ব্যাপারে জেলা প্রশাসন উদ্যোগ নেবে। এছাড়া কেউ যদি সিন্ডিকেট গড়তে চান, সে ব্যাপারে জেলা প্রশাসন বরাবর অভিযোগ দিতে কৃষকদের প্রতি আহ্বান রইলো।

বাংলাদেশ সময়: ১৬০৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৬, ২০১৯
এসআরএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।