ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কৃষি

ছুটির দিনে কৃষি-জ্ঞান নিতে মেলায় ভিড়

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩২৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩, ২০২০
ছুটির দিনে কৃষি-জ্ঞান নিতে মেলায় ভিড়

কুষ্টিয়া: কৃষির সব সেবা, প্রযুক্তি, আধুনিক জাত ও যন্ত্রপাতি নিয়ে কুষ্টিয়ার মিরপুরে চলছে তিন দিনের ‘কৃষি মেলা’। মেলার মাধ্যমে কৃষির আধুনিক যন্ত্রপাতি, সনাতন যন্ত্রপাতি, সব ফসলে সনাতন এবং আধুনিক জাত, ফসল উৎপাদন কৌশল, নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন সম্পর্কে কৃষকরা একযোগে জানতে পারছে।

‘বৃহত্তর কুষ্টিয়া ও যশোর অঞ্চল কৃষি উন্নয়ন প্রকল্প’ -এর আওতায় উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের আয়োজনে বৃহস্পতিবার (০২ জানুয়ারি) থেকে উপজেলা কৃষি অফিস চত্বরে শুরু হওয়া এ মেলায় ভিড় করছেন কৃষক/কৃষাণী, সাধারণ ভোক্তা ও শিক্ষার্থীরা।

শুক্রবার (০৩ জানুয়ারি) ছুটির দিন হওয়ায় সকাল থেকেই এ মেলায় ভিড় লক্ষ্য করা গেছে।

এবারের মেলায় বিভিন্ন ক্যাটাগরির ২৫টি স্টল বসেছে।

উপজেলা কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে দেওয়া বিভিন্ন স্টলের মাধ্যমে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা সাধারণ কৃষক ও দর্শনার্থীদের কৃষি পণ্য উৎপাদন, যন্ত্রপাতি ব্যবহার, বিভিন্ন আধুনিক প্রযুক্তি সম্পর্কে অবগত করছেন। দেখাচ্ছেন সনাতন ও আধুনিক পদ্ধতিতে চাষাবাদের পার্থক্য, কৃষি যান্ত্রিকীকরণ ও নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনের বিভিন্ন কৌশল।  

উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের পাশাপাশি মেলায় স্টল ও পণ্য প্রদর্শনীর মাধ্যমে কৃষি প্রযুক্তি সম্পর্কে দর্শনার্থীদের এর সঙ্গে পরিচিত করছেন স্থানীয় উদ্যোক্তা, কৃষিজাত পণ্য উৎপাদনকারী, রপ্তানিকারক ও মডেল কৃষকরা।

মেলায় ঘুরতে আসা কৃষক কামাল হোসেন বাংলানিউজকে জানান, মেলায় এসে অনেক ভালো লাগছে। কৃষির প্রায় সবকিছুই এখানে দেখছি। আমি ধানের আধুনিক ও সনাতন জাত সম্পর্কে জানতে পেরেছি। বর্তমান সময়ে উচ্চ ফলনশীল জাত সম্পর্কে বিস্তারিত শুনেছি। কীভাবে উৎপাদন করতে হবে তা জানতে পেরেছি।  

কৃষক মারুফ হোসেন বাংলানিউজ জানান, কৃষি মেলায় আমি জৈব সার তৈরি করা শিখেছি। আমরা বাড়ির আঙ্গিনায় এসব জৈব সার কীভাবে সহজেই উৎপাদন করতে পারবো তা জেনেছি। এছাড়া কীভাবে বিষমুক্ত উপায়ে চাষ করতে পারবো তা জানতে পেরেছি। আমি চিন্তা করছি, বাড়ির আঙ্গিনায় এসব নিজে চেষ্টা করবো।

মনিরুল ইসলাম নামে এক দর্শনার্থী বাংলানিউজকে জানান, আমি মাশরুম সম্পর্কে অনেক শুনেছি। তবে এখানে এসে তা দেখলাম। কীভাবে চাষ করা যায় সেটাও জানতে পেরেছি।

উপজেলার মডেল কৃষক আব্দুল মোমিন বাংলানিউজকে জানান, আমরা কৃষক সংগঠনের (সিআইজি) মাধ্যমে নিরাপদ ফসল উৎপাদন করি। কম খরচে খুব সহজেই আমরা বিভিন্ন চাষাবাদ করি। সেগুলো কীভাবে চাষাবাদ করি তা এ মেলায় প্রদর্শন করেছি। এছাড়া আধুনিক চাষ কীভাবে করলে লাভবান হওয়া যায় তা অনান্য কৃষকদের কাছে বলে তাদের উদ্বুদ্ধ করছি।

তিনি আরো বলেন, আমরা যন্ত্রের সাহায্যে খুব কম সময়ে এবং কম খরচে কীভাবে বীজ-সার বপণ, চারা রোপণ, শস্য কর্তন, মড়াই ও ঝাঁড়াই করি। সেগুলো এ মেলাই তুলে ধরেছি।

মেলায় স্টল নিয়েছে মিরপুর উপজেলার সফল মৌ খামারী মধু মামুনও।

মধু মামুন বাংলানিউজকে জানান, আমি কীভাবে মধু উৎপাদন করি সেগুলো এ মেলায় প্রদর্শন করেছি। আশা করছি এগুলো অন্যরা দেখে উপকৃত হবে।

দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী শারমিন আক্তার বাংলানিউজকে জানান, পাঠ্যবইয়ে দেশি লাঙ্গল দেখেছি। বাস্তবে কখনো দেখিনি। এ মেলায় দেশি লাঙ্গল, জোয়াল দেখলাম। সেই সঙ্গে বর্তমান সময়ের বিভিন্ন কৃষি প্রযুক্তি সম্পর্কে জানতে পারলাম। এছাড়া নাম না জানা অনেক সবজি ও ফলের নাম জানতে পেরেছি।

মেলায় ঘুরতে আশা শিক্ষক হাবিবুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, কীভাবে আমাদের এলাকায় তরমুজ উৎপাদন করা হয় সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছি। ভালো লাগলো কৃষি বিষয়ক সবকিছু একসঙ্গে দেখে।

গৃহিণী টুম্পা খাতুন বাংলানিউজকে জানান, মেলায় এসে দেখলাম বাড়ির আঙ্গিনায় যেসব জমি পড়ে থাকে সেখানে কীভাবে সবজি উৎপাদন করতে পারি। কী কী সবজি উৎপাদন করতে পারি। কীভাবে বাড়িটাকে সুন্দর করে সাজাতে ও রোগমুক্ত রাখতে পারি।

উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল মালেক ও সাদ্দাম হোসেন বাংলানিউজকে জানান, আমরা মেলায় বিভিন্ন স্টলের মাধ্যমে কৃষি সম্পর্কে সবাইকে জানাচ্ছি।  

মিরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রমেশ চন্দ্র ঘোষ বাংলানিউজকে জানান, কৃষি মেলায় আমরা নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন এবং আধুনিক প্রযুক্তি সম্পর্কে কৃষক ও দর্শনার্থীদের পরামর্শ দিচ্ছি। সেই সঙ্গে আমরা ফসলের সনাতন ও আধুনিক জাত চাষের মধ্যে পার্থক্য দেখাচ্ছি। কৃষি যান্ত্রিকীকরণের সুবিধা এবং আধুনিক ও নিরাপদ ফসল উৎপাদনের কৌশল তুলে ধরছি।

বৃহত্তর কুষ্টিয়া ও যশোর অঞ্চল কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের মনিটরিং কর্মকর্তা সেলিম হোসেন বাংলানিউজকে জানান, কৃষি সম্পর্কে বিভিন্ন প্রযুক্তি একযোগে কৃষকদের মাঝে তুলে ধরার জন্য আমরা ৩ দিনের এ মেলার আয়োজন করেছি। আশা করি এতে কৃষকরা উপকৃত হচ্ছে।

মিরপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কামারুল আরেফিন বাংলানিউজকে জানান, কৃষি মেলার মাধ্যমে কৃষকরা কৃষি সম্পর্কে জানতে পারছে। নতুন প্রযুক্তির সঙ্গে পরিচিত হচ্ছে। এছাড়া প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকেই কৃষকরা তাদের উৎপাদিত পণ্য প্রদর্শনের সুযোগ পাচ্ছে। এবারে মেলায় দর্শনার্থীদের উপস্থিতিও লক্ষ্য করার মতো।  

কুষ্টিয়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (শস্য) হাসিবুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, কৃষি মেলার মধ্যদিয়ে কৃষকরা নতুন প্রযুক্তি ও নতুন উদ্ভাবিত ফসলে জাত সম্পর্কে জানতে পারছে। নতুন কৃষি প্রযুক্তি কৃষকের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে এ মেলার মাধ্যমে। এতে কৃষকরা বেশি লাভবান হবে।

তিন দিনের এ মেলা চলবে শনিবার (০৪ জানুয়ারি) বিকেল পর্যন্ত। বিকেলে মেলায় অংশগ্রহণকারীদের পুরষ্কার দেওয়া হবে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে।  

বাংলাদেশ সময়: ১৮২০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৩, ২০২০
এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।