ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কৃষি

শনির দশা কাটছে না রাজশাহীর আমের

শরীফ সুমন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০০৭ ঘণ্টা, মে ২৯, ২০২০
শনির দশা কাটছে না রাজশাহীর আমের

রাজশাহী: আবহাওয়ার তারতম্যের কারণে আম গাছগুলোতে মুকুলই এসেছিল কম। আবার মুকুল আসার পরপরই শুরু হয় করোনাকাল। তাই অনেকটা অবহেলা আর অযত্নেই এ বছর বেড়ে উঠছে রাজশাহীর আম। পর্যাপ্ত লোকবলের অভাবে গাছের পাতায় সময় মতো ছত্রাকনাশক স্প্রে করা হয়নি। প্রয়োজনের সময় গাছের গোড়ায় দেওয়া হয়নি পানির সেচও। এরপরও প্রাকৃতিকভাবে যে ফলন হয়েছে; বলা হচ্ছিল- তা দিয়েই রাজশাহীসহ পুরো দেশের আমের চাহিদা পূরণ সম্ভব।

কিন্তু বিধিবাম! একের পর এক প্রাকৃতিক দুর্যোগে পর্যুদস্ত হয়ে পড়েছে উঠতি আমের ফলন। কোনোভাবেই যেন শনির দশা কাটছে না! মৌসুমের শুরু থেকে ঝড়-ঝঞ্ঝা লেগেই আছে।

এর ওপর আঘাত হেনেছে সাইক্লোন ‘আম্পান’। আর আম্পান যেতে না যেতেই রাজশাহীর ওপর দিয়ে আবারও বয়ে গেছে কালবৈশাখী।

হালে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে পড়ে এর ধকল কোনোভাবেই সামলে উঠতে পারছে না রাজশাহীর আম। করোনা পরিস্থিতির মধ্যে এমনিতেই আম বাজারজাত নিয়ে এবার রাজ্যের চিন্তা ভর করেছে রাজশাহীর আম চাষি ও ব্যবসায়ীদের ওপর। তার মধ্যে একের পর এক প্রাকৃতিক আঘাতে ক্ষত-বিক্ষত হচ্ছে উঠতি আমের ফলন।

দেশের উপকূলে প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় ‘আম্পান’ আঘাত হানে গত ২০ মে। তবে তাণ্ডব চালায় উত্তরের বিভাগীয় শহর রাজশাহীতেও। এরপর আরেক দফায় রাজশাহীর বাগানের আম ঝরায় ২৬ মে রাতের কালবৈশাখী। এই ঝড়ের তাণ্ডবে গোদাগাড়ী, পবা, চারঘাট ও বাঘা উপজেলায় থাকা বাগানগুলোয় প্রচুর আম ঝরে গেছে।
ছবি: বাংলানিউজঘূর্ণিঝড় আম্পানের দিন বাগানের কমপক্ষে ২০ ভাগ আম ঝরে গেছে বলে জানিয়েছেন রাজশাহীর বাঘা উপজেলার বাউসা গ্রামের আম চাষি আমিনুল ইসলাম। আর পরের কালবৈশাখীতে আরও অন্তত ১০ ভাগ আম ঝরেছে। পর পর দুই দফার ঝড়ে অনেক বাগানের আম ঝরে পড়ায় তিনি লোকসানের আশঙ্কা করছেন এবার।

সরেজমিন পরিদর্শন করে স্ব স্ব উপজেলার চাষি ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে স্থানীয়ভাবে চালানো এক জরিপের পর রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, ওই ঝড়ের তাণ্ডবে রাজশাহীর ১৫ শতাংশ আম ঝরে গেছে।

এতে আম চাষি ও ব্যবসায়ীরা ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করছেন। তবে কৃষি বিভাগ বলছে, এই ঝড়-শিলাবৃষ্টির মাঝেই রাজশাহীর আম বেড়ে ওঠে। ক্ষতি খুব একটা হবে না। এরপরও আম্পানে রাজশাহীর ক্ষতিগ্রস্ত আম বাগান মালিকরা ক্ষতিপূরণ পাবেন। এ জন্য সরকারের কাছে মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ১১০ কোটি টাকা চেয়েছে কৃষি বিভাগ।

সদ্য সমাপ্ত সাইক্লোন আম্পানের তাণ্ডবে রাজশাহীর বিভিন্ন উপজেলায় থাকা বাগান থেকে ১৫ শতাংশ আম ঝরে পড়েছে বলে জানিয়েছেন রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আলিম উদ্দিন। তিনি বলেন, পরের কালবৈশাখীতে এত পরিমাণ আম ঝরেনি। দুই দফার ঝড় মিলে মোটের ওপরে রাজশাহীর বাগানগুলোতে প্রায় ১৫ শতাংশ আমই ঝরেছে বলা যায়।
ছবি: বাংলানিউজএমন পরিস্থিতিতে চলতি মৌসুমে রাজশাহী অঞ্চলের ক্ষতিগ্রস্ত বাগান মালিকদের সরাসরি সরকারি প্রণোদনার আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি মনিরুজ্জামান মনি। তাহলে আশঙ্কিত লোকসান কাটিয়ে তারা আবারও ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন। তা না হলে এবার স্থানীয় অনেক আম চাষি ও ব্যবসায়ী পথে বসবেন বলেও মনে করেন এই ব্যবসায়ী নেতা।

আর আম্পানে বাগানের ১৫ শতাংশ আম ঝরেছে উল্লেখ করে রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শামসুল হক বাংলানিউজকে বলেন, পরের ঝড়ে এক শতাংশের বেশি আম ঝরেনি। কেবল পদ্মা নদীর কিনারায় যেসব বাগান রয়েছে, সেখানে কিছু আম ঝরেছে। রাজশাহীর এমন আম ঝড়-শিলাবৃষ্টির মাঝেই টিকে থাকে। তাই আপাত দৃষ্টিতে চাষিরা লোকসানের আশঙ্কা করলেও শেষ পর্যন্ত ক্ষতি খুব একটা দেখা দেবে না। বাগান থেকে পুরোদমে আম নামানো শুরু হলে আর বাজারে দাম ভালো পেলে চাষিরা লাভ করবেন বলে মনে করেন রাজশাহীর এই ঊর্ধ্বতন কৃষি কর্মকর্তা।

এরপরও আম্পানে রাজশাহীর ক্ষতিগ্রস্ত আম বাগান মালিকরা ক্ষতিপূরণ পাবেন। এ জন্য সরকারের কাছে ১১০ কোটি টাকা চাওয়া হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

একই কথা বলেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর রাজশাহী অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক সুধীন্দ্রনাথ রায়ও। তিনি বলেন, এখনও বাগানগুলোতে যে পরিমাণ আম আছে, তা সঠিকভাবে পরিচর্যা ও বাজারজাত করতে পারলে ভালো দাম পাওয়া যাবে। এরপরও সার্বিক পরিস্থিতি মনিটরিং করবেন বলেও জানান অতিরিক্ত পরিচালক।
ছবি: বাংলানিউজকরোনা পরিস্থিতিতে কৃষিবিভাগ ফসলের ক্ষয়ক্ষতির জরিপ করেছে উল্লেখ করেছেন রাজশাহী জেলা প্রশাসক মো. হামিদুল হক। তিনি বলেন, গাছ থেকে পরিপক্ব আম নামানো, বিষমুক্ত আম বাজারজাতকরণ, করোনা পরিস্থিতির মধ্যে আম বিপণন ও দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহের জন্য এরইমধ্যে সব প্রস্তুতি শেষ করা হয়েছে। রাজশাহীর প্রত্যেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এখন বিষয়গুলো মনিটরিং করছেন। আর নতুন কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না এলে এই ক্ষতি সামলে ওঠা যাবে মনে করছেন।

এদিকে, আম পাড়ার সময় হয়ে গেলেও করোনা পরিস্থিতি, ঈদ ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে এখনও রাজশাহীর বাগানগুলো থেকে আম নামাতে শুরু করেননি চাষি ও ব্যবসায়ীরা। জ্যৈষ্ঠ মাসের দুই সপ্তাহ চলছে এরপরও গাছেই রয়েছে গুটি আম। এরইমধ্যে রাজশাহীর বাগানগুলোতে বিভিন্ন জাত স্বাদের আম পরিপক্ব হয়ে উঠতে শুরু করেছে। তবে সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী সপ্তাহ থেকে শুরু হচ্ছে আম বাণিজ্য।

বাংলাদেশ সময়: ১০০৫ ঘণ্টা, মে ২৯, ২০২০
এসএস/টিএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।