ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কৃষি

চা-বাগানে পানি নির্গমনের জন্য বিশাল ড্রেন!

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩০১ ঘণ্টা, এপ্রিল ২০, ২০২১
চা-বাগানে পানি নির্গমনের জন্য বিশাল ড্রেন! চা বাগানে পানি নির্গমনের জন্য বিশাল ড্রেন। ছবি: বাংলানিউজ

মৌলভীবাজার: চা বৃষ্টিপাতের আশীর্বাদপুষ্ট ফসল। পানি ছাড়া চা গাছের অস্তিত্ব মৃতপ্রায়।

চা উৎপাদনের সূচনা কাল থেকে চা শিল্পতে প্রয়োজনীয় পানির যোগান দিতে হয়েছে। পানির কোনোই বিকল্প নেই। কিন্তু অতিবৃষ্টিও আবার অভিশাপ হয়ে দেখা যায়। অতি বৃষ্টি বা গোড়ায় পানি আটকে থাকা চা গাছের জন্য মারাত্মক হুমকিস্বরূপ।  

আর পানি ব্যবস্থাপনার এক্ষেত্রে কৃত্রিম পানির ব্যবস্থা অপেক্ষা প্রাকৃতিক পানির প্রতি চা বাগানগুলো অনেক বেশি পরিমাণে আস্থাশীল। সমভূমি ও নিচু-সমভূমিতে পানি নির্গমনের ব্যবস্থাপনা তাই একটি প্রয়োজনীয় বিষয় চা শিল্পাঞ্চলের জন্য।  

জন্মগতভাবে উঁচু টিলায় আবাদযোগ কৃষিজাত পণ্য চা। কিন্তু বাংলাদেশে উঁচু টিলা অপেক্ষা সমতলভূমির পরিমাণ বেশি থাকায় সেটাকেই চা আবাদের জন্য বেছে নিতে হয়েছে বাগান কর্তৃপক্ষদের। আর যাদের প্রাকৃতিক সুবিধাগত কারণে চায়ের উঁচু টিলা রয়েছে তাদের সোনায় সোহাগা।  

চা বাগানে এখন চলছে জরুরি পানি নির্গমন ব্যবস্থাটির সংস্কার বা নতুনভাবে খনন করে ব্যবস্থাটি পাকাপোক্তকরণ। চা বাগানের প্রতিটি সেকশন (নির্বাচিত একেকটি চা এলাকা) এর ড্রেনগুলো নতুনভাবে গভীর হয়ে উঠেছে। এমন বিশাল ড্রেনের দিয়ে বর্ষার বিরতিহীন পানি দ্রুত গতিতে গিয়ে চা বাগানের পাহাড়ি ছড়ায় নেমে পড়ে।  

মৌলভীবাজার জেলার সিনিয়র টি-প্লান্টার ইবাদুল হক বাংলানিউজকে এ প্রসঙ্গে বলেন, চা গাছ কিন্তু জলবদ্ধতা সহ্য করতে পারে না। একটা চা গাছের শিকড় প্রায় সাড়ে তিন ফুট নিচে যায়। যদি আমরা ড্রেনগুলো (নালা) চার ফুট গভীর না করি তাদের চা গাছগুলো পুষ্টিগত সমস্যায় ভুগবে। সাড়ে তিন ফুট নিচে গিয়ে চা গাছগুলো জলের ছোঁয়া পায়। এতে করে সে তার প্রয়োজনীয় উপাদান সংগ্রহ করে নেয়। আর যদি সঠিক পদ্ধতিতে ড্রেন খনন না করা হয় তখন চাগাছগুলো জলের অভাবে উৎপাদনক্ষমতা হারায় এবং এ সময় চা গাছ মারা যায়।  এমন ড্রেন দিয়ে বর্ষার পানি দ্রুত নেমে যায়।  ছবি: বাংলানিউজতিনি আরও বলেন, ওই শিড়কটাকে ন্যূনতম এক ফুট গ্যাপ (দূরত্ব) আমাদের রাখতে হয়। ফলে ওই চার ফুট ডিপ (গভীর) করা হয়। শিকড়ের মাথায় যাতে জলের ছোঁয়া না লাগে। আর শিকড়ের মাথা জল আটকে গেলে এটাকে বলে জলাবদ্ধতা, এর কারণে চা বাগানগুলো ধীরে ধীরে হলুদ হয়ে মারা যায়।  

আগাম বর্ষার কথা উল্লেখ করে ইবাদুল বলেন, আমাদের সামনে যে বর্ষামৌসুম আসছে তার আগেই পানির লেয়ার (স্তর) এর সঠিক বিন্যাস করতে হবে। চা গাছের শিকড় যেনো পানির ছোঁয়া না পায়। কোনো অবস্থাতেই পানি যেন আটকে না থাকে। পানিকে চা গাছের গুড়ি থেকে দ্রুত নেমে যেতে হবে। ড্রেনটা যদি চারফুট গভীর হয় তাহলে শিকড়ের গোড়ায় পানি আটকে থাকে না। শিকড় থেকে এক ফুট থেকে ছয় ইঞ্চি দূরে থাকে। এজন্যই এই গভীর ড্রেন করা হয়।  

‘টিলায় চা গাছ হলে সুবিধা হলো পানি আটকে থাকে না। কিন্তু সমতল ভূমিতে হলে ড্রেন করতেই হবে। চা বাগানের জলবদ্ধতা দূর করতে প্রয়োজন গভীর ড্রেন। শুধুই তা-ই নয়, প্রতিটি ড্রেন চার ফুট গভীর করতেই হবে। ’ 

চা বাগানে সমতল ভূমির ড্রেনগুলো চার ফুট গভীর আর ১৮ ইঞ্চি পাশ হয়ে থাকে। এর ফলে জলবদ্ধতা দূর হয়ে চা গাছের উৎপাদন বাড়ে বলে জানান সিনিয়র ম্যানেজার ইবাদুল হক।

বাংলাদেশ সময়: ১২৫৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ২০, ২০২১
বিবিবি/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।