ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কৃষি

আউশের বাম্পার ফলনে কৃষকের মুখে হাসি

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮০৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৭, ২০২১
আউশের বাম্পার ফলনে কৃষকের মুখে হাসি ছবি: বাংলানিউজ

বরগুনা: বরগুনায় মাঠে মাঠে এখন পাকা ধান, আর তাতে দোল খাচ্ছে কৃষকের সোনালী স্বপ্ন। যতদূর চোখ যায় সোনালী ধানের আভায় হারিয়ে যেতে হয়।

 

এদিকে, আউশের বাম্পার ফলনে খুশির বন্যা বইছে কৃষকদের চোখে-মুখে। কেউ ধান কাটছেন, কেউ মাড়াই করছেন, কেউ আবার মাড়াই করা ধান রোদে শুকাতে ব্যস্ত। কোথাও আবার ধান কেনার জন্য হাজির পাইকার কিংবা ব্যবসায়ীরা।  

কৃষকরা বাংলানিউজকে জানান, মৌসুমের শুরুর দিকে প্রয়োজনীয় রোদ, মধ্যভাগে বৃষ্টি এবং শেষ দিকে অল্প কিছুদিন রোদ থাকায় এবার আউশের ফলন ভালো হয়েছে। বরগুনাজুড়ে চলছে আউশ ধান কাটা, মাড়াই ও বিক্রির মহোৎসব।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে বরগুনায় ৩৬ হাজার হেক্টর জমিতে আউশ আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। গত বছর ফলন ভালো হওয়ায় এবং আশানুরূপ মূল্য পাওয়ায় এ বছর লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি জমিতে আবাদ করেছেন কৃষকরা। চলতি বছর বরগুনায় মোট ৪৭ হাজার ৫৭৩ হেক্টর জমিতে আউশের আবাদ হয়েছে। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ১২ হেক্টর বেশি।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, আউশ ধান মূলত প্রকৃতি নির্ভর। এ ধানের বীজ বপনের উপযুক্ত সময় ১৫-৩০ চৈত্র (৩০মার্চ-১৫ এপ্রিল)। সাধারণভাবে ২০-২৫ দিনের চারা রোপণ করা উচিত। সে সময় জমিতে ছিপছিপে পানি থাকলেই চলে। ১ হেক্টর জমিতে ৮-১০ কেজি বীজের চারা লাগে। সারিতে চারা রোপণ করতে হবে। প্রতিটি সারির দূরত্ব ২০-২৫ সেমি. এবং চারার দূরত্ব ১৫-২০ সেন্টিমিটার হবে। আউশ ধান কাটার উপযুক্ত সময় ১৫ শ্রাবণ-২০ ভাদ্র (৩০জুলাই-০৪ সেপ্টেম্বর)। প্রাকৃতিক কারণে আউশ রোপণে প্রতিবন্ধকতা থাকলেও এ বছর সব বাধা কাটিয়ে উঠেছেন কৃষকরা। পোকা-মাকড় ও আগাছা দমনসহ বিভিন্ন বিষয়ে উপযুক্ত সময়ে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য চাষিদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে। যে কারণে এ বছর আউশের আবাদ দেরিতে হলেও ধানের ভালো ফলন হয়েছে।



সদর উপজেলার আয়লা পতাকাটা ইউনিয়নের ইটবাড়িয়া গ্রামের কৃষক জালাল হাওলাদার বলেন, বর্ষার শুরুতে জমিতে পানি জমে থাকায় আউশ ধান রোপণে দেরি হয়েছিল। তবে, প্রয়াজনীয় রোদ বৃষ্টি ও কৃষি বিভাগের পরামর্শ থাকায় ভালো ফলন হয়েছে, এতে আমরা খুশি।

বরগুনা সদর, আমতলী, তালতলী, বেতাগী ও পাথরঘাটা ঘুরে দেখা যায়, আউশ ধান ঘরে তুলতে কৃষাণ-কৃষাণী কারও বিশ্রাম নেই। চারদিকে এখন ধান কেটে ঘরে তোলার প্রতিযোগিতা। কৃষকরা অতিরিক্ত শ্রমিক নিয়ে নিজ নিজ জমির ধান কাটছেন। কেউ আবার মেশিন দিয়ে মাড়াই করছেন, খড় থেকে ধান ছাড়াচ্ছেন, কোথাও আবার রাস্তায় খড় ও ধান রোদে শুকাচ্ছেন।

বেতাগী উপজেলার কাজিরাবাদ ইউনিয়নের গোলাম সরোয়ার মুন্না বাংলানিউজকে বলেন, এবার শুরু থেকে পানি বেশি থাকায় অনেক ক্ষতি হয়েছে। ৮ একর জমিতে আউশ ধান চাষ করেছি, ফলনও ভালো হয়েছে। ধান তুলতে ও শুকাতে কিছুটা কষ্ট পেতে হচ্ছে। আকাশে কিছু সময় বৃষ্টি, আবার কিছু সময় রোদ এবং বৃষ্টির পানিতে উঠান ভেজা থাকায় ধান শুকাতে সমস্যা হচ্ছে। তবে ভালো ফলন হওয়ায় সব কষ্টই সার্থক মনে হয়।

তালতলী উপজেলার তেঁতুলবাড়িয়ার কৃষক আ. সেকান্দর জমাদ্দার বাংলানিউজকে বলেন, বর্ষার ভরা মৌসুমে ভারী বৃষ্টি হওয়ায় প্রায় ২০ একর জমিতে আউশ চাষাবাদ করতে পেরেছি। যখন শীষ আসে তখন বৃষ্টি বেশি হওয়ায় কিছুটা ক্ষতি হয়েছিল। তবে, সবশেষে ফসল অনেক ভালো হওয়ায় এখন মনে আনন্দ লাগছে।  

আরেক কৃষক আজাহার আলী হাওলাদার বলেন, বর্ষা মৌসুমে জমিতে পানি জমে থাকে। এ বছর বেশি বৃষ্টি হওয়ায় চাষাবাদ দেরিতে হয়েছে। যে কারণে সব জমিতে চাষাবাদ করা সম্ভব হয়নি।  

এ বিষয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আবদুর রশীদ বাংলানিউজকে বলেন, এ বছর বরগুনায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি জমিতে আউশ ধানের চাষ হয়েছে। ফলন ভালো হওয়ায় কৃষকরা খুশি। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে ফসল উৎপাদনে সব ধরনের সহযোগিতা করা হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ০৮০০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৭, ২০২১
এমএমজেড/এসআরএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।