ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কৃষি

ফেনীতে বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে নানা স্বাদের ‘কুল’

সোলায়মান হাজারী ডালিম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৩৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৬, ২০২২
ফেনীতে বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে নানা স্বাদের ‘কুল’ কুল বাগান।

ফেনী: ফেনীতে বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদ শুরু হয়েছে নানা স্বাদের কুল। ফেনী সদর উপজেলার কাজিরবাগে ৪০ শতক জমিতে কাশ্মীরী, বল সুন্দরী, বাউকুল, আপেল কুলসহ নানা জাতের কুল চাষ করছেন কৃষক আছমত আলী।



জেলা কৃষি বিভাগ বলছে, আসমত আলীর দেখা-দেখি জেলার অন্য কৃষকরাও কুল চাষাবাদে ঝুঁকবেন। ফেনীর মাটি ও জলবায়ু এর চাষাবাদের জন্য বেশ উপযোগী। কৃষক আছমত আলীর কুল বাগানে গিয়ে দেখা যায়, ফলে নুয়ে পড়ছে গাছগুলো। সবুজ কুল গাছগুলো ভরপুর হয়ে আছে নানা রঙের কুলে।

তিনি জানান, মেঘনা নদীর ভাঙনে বিলীন হয়ে যায় তার বাড়ি। সব হারিয়ে বেশ কয়েক বছর আগে চলে আসেন ফেনীতে। ফেনী সদর উপজেলার কাজির বাগ ইউনিয়নের হানিফ মজুমদার বাড়িতে পরিবারসহ ভাড়া বাসায় থাকেন। দীর্ঘদিন রিকশা ও ভ্যান চালিয়ে ক্লান্ত হয়ে ঝুঁকেছেন কৃষিতে। বন্যা, রোদ ও কুয়াশায় সেখানেও গুনছিলেন লোকশান। স্থানীয় উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা লুৎফর রহমানের পরামর্শে নামেন কুল চাষে। অবশেষে বন্যা, রোধ সহিষ্ণু কুল চাষে তিনি ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন। এ ফল চাষাবাদকে অনেক সম্ভাবনা বলেও মনে করছেন তিনি।  

কৃষক আছমত আলীর এ কুল বাগান পরিদর্শন করেন জেলা প্রশাসক আবু সেলিম মাহমুদ-উল-হাসান। এ সময় জেলা প্রশাসক বলেন, এ ধরনের ফল চাষে কৃষক লাভবান হচ্ছে। আবার এ লাভ ও উৎপাদন দেখে অন্যান্য কৃষকও উদ্বুদ্ধ হচ্ছে। এতে কৃষি বিভাগের উৎপাদন ও সমৃদ্ধ কৃষির লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক তারিক মাহমুদুল ইসলাম বলেন, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার একটি বড় লক্ষ্য পুষ্টি নিশ্চিত করা। সে লক্ষ্যে এবং সরকার কৃষিকে বাণিজ্যিকীকরণ করার লক্ষ্যে বর্তমান কৃষিবান্ধব সরকার উচ্চ মূল্যের ফল, বিভিন্ন শাক-সবজি এবং ফসল উৎপাদনে গুরুত্ব দিচ্ছে। এ লক্ষ্য সফল করতে কাজিরবাগে এ বরই চাষে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, বাগানে ৪০ শতক জায়গায় ১শটি চারা লাগানো হয়েছে। কৃষক একবছরে যে লাভ পাচ্ছে তাতে সে যেমন লাভবান হবে তেমনি দেশও লাভবান হবে। পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে। পাশাপাশি দেশ বাণিজ্যিক কৃষিতে এগিয়ে যাবে। এ বছরের চেয়ে পরের বছরগুলোতে দ্বিগুণ লাভবান হবেন। কারণ প্রথম বছর কিছু স্থায়ী খরচ হয়। যা পরের বছরগুলোতে হবে না।  কুলচাষি আছমত আলী জানান, গত বছরের মার্চ মাসে পাবনা থেকে বল সুন্দরী, কাশ্মীরী, আপেল কুল ও বাউকুল জাতের ১০শ চারা এনে রোপন করেছিলাম। এর মধ্যে বল সুন্দরী ও কাশ্মীরী প্রতি পিস চারা ৮০ টাকা, আপেল কুল প্রতি পিস চারা ১৫ টাকা, বাউকুল প্রতি পিস চারা ১২ টাকা দিয়ে কিনেছেন।  প্রতি গাছে ৯ থেকে ১২ কেজি ফলন হয়েছে। প্রতি কেজি ১শ টাকা দরে বাগান থেকে অনেকে এসে কুল কিনে নিচ্ছে।

চলতি মৌসুমে এখন পর্যন্ত ২০ হাজার টাকা বিক্রি হয়েছে। চলতি মৌসুমে বাগান থেকে ১ লাখ টাকার বেশি কুল বিক্রি করতে পারবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

তিনি জানান, চারা, চার পাশের বেড়া, ওপরের বিশেষ নেট ও জমি তৈরিসহ আনুষাঙ্গিক কাজে ৭০ হাজার টাকার মত খরচ হয়েছে। এর মধ্যে কিছু স্থায়ী খরচ রয়েছে যা পরের বছরগুলোতে আর লাগবে না। তিনি আশা করছেন, লাভের পরিমাণ পরের বছরগুলোতে আরও বাড়বে।  

সাহাব উদ্দিন নামের এক ক্রেতা বলেন, ভেজালমুক্ত কুল কিনতে এখানে এসেছি। প্রাকৃতিকভাবে উৎপাদিত কুল কিনতে মানুষের আগ্রহ বেশি। সচরাচর এভাবে সরাসরি বাগান থেকে সংগ্রহ করা সম্ভব হয় না। তাই এখানে এসেছি। ফেনী সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শারমীন আক্তার বাংলানিউজকে বলেন, উপজেলা কৃষি বিভাগের উদ্বুদ্ধকরণের মাধ্যমে এ কৃষক আছমত আলী এ বাগানটি করেছেন। তাকে এ বিষয়ে সব ধরনের সহযোগিতা কৃষি বিভাগ থেকে দেওয়া হবে।

স্থানীয় উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা লুৎফুল করিম মজুমদার জানান, কৃষি বিভাগ সবসময় এ চাষির পাশে থেকে কাজ করেছে। বিভিন্ন রোগবালাই প্রতিরোধে এবং পরিচর্যা বিষয়ে পরামর্শসহ দিক-নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

সফল কুলচাষি কৃষক আছমত আলী বলেন, তার নিজের কোন জমি না থাকলেও স্থানীয় বিভিন্ন মানুষ থেকে জমি বর্গা ও ইজারা নিয়ে প্রায় ৩শ শতক জমিতে তিনি কুল চাষের পাশাপাশি সিম, টমেটো, বেগুন, আলু, করলা, মেটে আলু, ,লাল,পালংশাকসহ বিভিন্ন শীত ও গ্রীষ্মকালীন সবজিরও আবাদ করেন।  

বাংলাদেশ সময়: ১০৩৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৬, ২০২২
এসএইচডি/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।