ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কৃষি

ফেনীর কৃষিতে স্বপ্ন দেখাচ্ছেন লক্ষ্মীপুরের ভূমিহীন আছমত আলী

সোলায়মান হাজারী ডালিম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৪৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৮, ২০২২
ফেনীর কৃষিতে স্বপ্ন দেখাচ্ছেন লক্ষ্মীপুরের ভূমিহীন আছমত আলী

ফেনী: কৃষক আছমত আলী। প্রমত্তা মেঘনার করাল গ্রাসে ভিটে-মাটি হারিয়ে পরিণত হন জলবায়ু উদ্বাস্তু হিসেবে।

লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার ফলকন ইউনিয়নের হাজির হাটে পৈত্রিক নিবাস হলেও সেখানে এখন তার কিছুই নেই, সব গেছে নদীর পেটে। দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে বসবাস করছেন ফেনী শহরের ফলেশ্বর এলাকায়। চার সন্তান-স্ত্রী নিয়ে ভাড়া একটি টিনশেডের ঘরেই তার বসবাস।  

নিজের এক টুকরো জমি না থাকলেও ৩০০ শতক জমিতে তিনি চাষাবাদ করছেন বিভিন্ন জাতের শাক-সবজি ও ফলমূল। সাম্প্রতিক সময়ে জেলায় সর্বপ্রথম বাহারি জাতের কুল বাণিজ্যিকভাবে চাষ করে রীতিমতো অবাক করে দিয়েছেন ভূমিহীন এ কৃষক। নিজের ফসলি জমি ভিটে-মাটি না থাকলেও ফেনীর কৃষিতে দৃষ্টান্ত স্থাপন করছেন তিনি।  

ফেনী সদর উপজেলার কাজির বাগ ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা লুৎফর করিম বলেন, জমি না থাকলেও কৃষিতে আগ্রহ ও অনেক চেষ্টা আছে আছমত আলীর। সেই আগ্রহ ও চেষ্টার ফলেই সে এখন সফল কৃষক। তার কৃষিকাজ দেখতে ফেনীর জেলা প্রশাসক আবু সেলিম মাহমুদ-উল হাসানসহ জেলার ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তারা এসেছেন।  

জানতে চাইলে কৃষক আছমত আলী বাংলানিউজকে বলেন, ঘর-বাড়ি হারিয়ে ফেনীতে ঠাঁয় হয়েছে একটি ভাড়া বাসায়। রিকশা চালিয়েছি। আরও অনেক রকম কাজ করে খেয়েছি। চাষাবাদ করার মতো এক টুকরো জমিও ছিল না। স্থানীয়দের কাছ থেকে জমি বর্গা ও ইজারা নিয়ে চাষাবাদ শুরু করেছি। খুব বেশি লাভবান না হলেও শাক-সবজি চাষ খারাপ না। মাঝে মধ্যে ভারি বৃষ্টি ও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। তবুও বারবার ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছি। এখন এলাকার প্রায় ৩০০ শতক জমিতে শাক-সবজি চাষাবাদ করছি।  

তিনি বলেন, কৃষি বিভাগের উপ-সহকারী কৃষি অফিসার লুৎফর কবিরের পরামর্শে গত বছরের মার্চ মাসে পাবনা থেকে বলসুন্দরী, কাশ্মিরী, আপেল কুল ও বাউকুল জাতের ১০০ চারা এনে রোপণ করেছিলাম। সেই গাছগুলোতে এখন ফলন এসেছে। ভাল দামে বিক্রিও হচ্ছে। এ কুল বাগানটি এখন সারা জেলায় প্রশংসিত হচ্ছে। প্রতিদিন জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে ক্রেতারা বাগানে আসছেন কুল ও বিভিন্ন সবজি কিনতে।  

আছমত আলীর ছেলে মো. ইব্রাহিম জানান, তাদের বাবা সারাদিন এ সবজি ক্ষেতেই পড়ে থাকেন। সারাদিন কষ্ট করে ফসল ফলান। সেই ফসল বিক্রি করে সংসার চালান।  

আছমত আলীর স্ত্রী মিনারা বেগম বলেন, তার স্বামী শাক-সবজি চাষের কাজ খুব পছন্দ করেন। অন্য কাজ তেমনটা পছন্দ করেন না। আর সে কারণেই নিজের জমি না থাকলেও অন্যদের কাছ থেকে টাকা দিয়ে জমি ইজারা নিয়ে চাষাবাদ করেন।  

ফেনী সদর উপজেলা কৃষি অফিসার শারমীন আক্তার বলেন, কৃষক আছমত আলীর কৃষির প্রতি খব আগ্রহ। নতুন নতুন চাষাবাদ নিয়ে তার চিন্তা-চেতনা ও গবেষণা আছে। তার এ আগ্রহ দেখে কৃষি বিভাগ থেকে তাকে সবজির প্রদর্শনী প্লট দেওয়া হয়েছিল। কুল চাষের ব্যাপারেও তাকে সর্বাত্মক সহযোগিতা দেওয়া হয়েছে।  

তিনি আরও বলেন, ইতোমধ্যেই এ কৃষক জেলায় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।  

কুল চাষের পাশাপাশি মাচায় তরমুজ চাষ করতেও আগ্রহ প্রকাশ করেছেন এ কৃষক। তাকে এ ব্যাপারে বীজ, সার ও যাবতীয় পরামর্শ কৃষি বিভাগ থেকে দেওয়া হবে।  

শারমীন আক্তার বলেন, ফেনীর কৃষিতে চাষিদের স্বপ্ন দেখাতে শুরু করেছেন আছমত আলী। তার সবজি ও কুল বাগানটি দেখার জন্য জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে অন্য চাষিরাও আসছেন। তিনি কুল চাষের পাশাপাশি সিম, টমেটো, বেগুন, আলু, করলা, মেটে আলু, লাল শাক, পালং শাক, মুলা ও মুলার শাকসহ বিভিন্ন শীত ও গ্রীষ্মকালীন সবজিরও চাষাবাদ করেন।  

বাংলাদেশ সময়: ০৯৪৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৮, ২০২২
এসএইচডি/আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।