ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কৃষি

কৃষকদের কাছে গিয়ে বই পড়ে শোনায় 'কৃষকের বাতিঘর' 

মো. জাহিদ হাসান জিহাদ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৫১ ঘণ্টা, জুন ৩, ২০২২
কৃষকদের কাছে গিয়ে বই পড়ে শোনায় 'কৃষকের বাতিঘর' 

কুষ্টিয়া: লাইব্রেরি মানেই সাজানো গোছানো বইয়ের তাক, চুপচাপ পরিবেশ, আর নিঃশব্দে বই পড়া। চাইলে কোনো বই খাতায় এন্ট্রি করে নিয়ে যাওয়া যাবে পড়ার জন্যও।

 

তবে আরও একটি বিশেষ যে দিক 'কৃষকের বাতিঘর' লাইব্রেরিকে আলাদা মাত্রা দিয়েছে, তা হলো- এ লাইব্রেরিতে মানুষ যতটা আসে, তার থেকে বেশি লাইব্রেরিই যায় এলাকার মানুষের কাছে।

বলছিলাম কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার আমলাতে অবস্থিত 'কৃষকের বাতিঘর’ লাইব্রেরির কথা। এ লাইব্রেরি দীর্ঘদিন ধরেই কাজ করে যাচ্ছে এলাকার জ্ঞানপিপাসু মানুষদের জন্য। বিশেষ করে নিরক্ষর কৃষকদের উন্নয়নে রাখছে বিশেষ ভূমিকা।

লাইব্রেরিটির কার্যক্রমে দেখা যায়, এ গ্রন্থাগারের স্বেচ্ছাসেবকরা গ্রামের কৃষকদের কাছে, মাঠে গিয়ে গিয়ে তাদের বই পড়ে শুনিয়ে আসেন। জানান চাষের আধুনিকতা, জীবনমান উন্নয়নের গল্প, সাহিত্য, ভ্রমণসহ নানাবিধ বিষয়ে। এছাড়া গ্রামীণ নারীদের উন্নয়নেও একই ধরনের কার্যক্রম পরিচালনা করছে এ গ্রন্থাগার। যা জীবনমান উন্নয়নে সহায়তা করছে গ্রামের চাষি এবং সাধারণ মানুষদের।

কৃষকের বাতিঘর লাইব্রেরির উদ্যোক্তা এবং সাধারণ সম্পাদক হোসাইন মোহাম্মদ সাগর জানান, দেশ এগিয়ে গেলেও আমাদের গ্রামের কৃষকরা এখনো অনেক পিছিয়ে। এ পিছিয়ে পড়া কৃষকদের উন্নয়নের জন্য আমাদের কার্যক্রম। আমাদের একটি সংগঠনও আছে একই নামে। এ লাইব্রেরি এবং সংগঠনের মাধ্যমে আমরা কৃষকদের জীবনমান উন্নয়ন, সাংস্কৃতিক চর্চা, গ্রামীণ ঐতিহ্যবাহী খেলাধূলার উন্নয়ন, মানবিক মূল্যবোধ উন্নয়ন, কৃষকদের আধুনিক চাষে উদ্বুদ্ধ করা ও চাষাবাদ সংক্রান্ত যে কোনো প্রয়োজনে সহযোগিতা করা, গ্রামের নারীদের জীবনমান উন্নয়নে ভূমিকা রাখা, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের প্রয়োজন অনুযায়ী বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করা, কৃষক-নারী ও শিশুদের উন্নয়নসহ গ্রামীণ জীবনমান উন্নয়নে বিভিন্নভাবে উন্নয়নমূলক সামাজিক কার্যক্রমের মাধ্যমে ভূমিকা পালনের চেষ্টা করি।

তিনি বলেন, কৃষকদের অগ্রাধিকার রয়েছে, তবে সাধারণ জনগণও এ লাইব্রেরির সুযোগ-সুবিধা পান। এছাড়া সব থেকে বড় যে বিষয়টি, তা হলো শিক্ষার্থীদের পাঠ্যবইয়ের বাইরে অন্যান্য বই পড়তে উদ্বুদ্ধ করা, নেতৃত্ব শেখানো। তারা যখন কৃষকদের বই পড়ে শোনান, তার আগে নিজেরা সেই বইটি ভালো করে পড়েন, যাতে তিনি সেটি পড়ে কৃষকদের ভালোমতো বোঝাতে পারেন। এদিক থেকে তাদের উন্নয়নটাও অনেক বেশি। আর যারা বই পড়ে শোনান, কাজের ওপর ভিত্তি করে তাদের জন্যও থাকে বিশেষ পুরস্কারের ব্যবস্থা।

লাইব্রেরির স্বেচ্ছাসেবক জিনিয়া ইসলাম বলেন, আমরা গ্রামে গ্রামে গিয়ে কৃষক এবং গ্রামের নারীদের বিভিন্ন বিষয়ে বই পড়ে শোনাই, বিশেষ করে যারা নিরক্ষর। তাদের যে জানার কত আগ্রহ, কত প্রশ্ন, সেগুলোর উত্তর দিতে পারলে, সঠিক তথ্য জানাতে পারলে আমাদের ভালো লাগে। আর এগুলো করতে গিয়ে আমরা যারা স্বেচ্ছাসেবক আছি, তারাও অনেক কিছু জানতে পারি। আবার এ কাজের জন্য লাইব্রেরি থেকে বই উপহার পাই। আমাদের জন্য এটা খুবই আনন্দের।

এ এলাকার কৃষক এবং কৃষকের বাতিঘর লাইব্রেরির সদস্য মো. ইয়াসিন বলেন, এ লাইব্রেরির কাজের ফলে আমরা এখন অনেক কিছু সহজেই জানতে পারি। যেমন আগে ফসল চাষ করতাম বাপ-দাদার কাছ থেকে শেখা পদ্ধতিতে। কিন্তু এখন লাইব্রেরির আপা-ভাইয়ারা আমাদের নতুন নতুন চাষের কৌশল বলে দেন। এতে ফসল ভালো হয়। আর মাঝে মধ্যে গান-কবিতা-গল্পও শোনান, আবার পুরস্কারও দেন।

লাইব্রেরিটি নিয়ে এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তি, বিদ্যানুরাগীরাও বেশ আশাবাদী। এ বিষয়ে কথা হয় বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার প্রাপ্ত মিরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রমেশ চন্দ্র ঘোষের সঙ্গে। তিনি বলেন, যুবসমাজকে সুস্থ সুন্দর জীবন দিতে হলে বইয়ের কোনো বিকল্প নেই। বই পারে একটি সুন্দর সমাজ দিতে। কৃষকের বাতিঘর লাইব্রেরির মাধ্যমে সেই কাজটি যেমন খুব সুন্দরভাবে হচ্ছে, ঠিক তেমনি লাভবান হচ্ছেন কৃষকরাও। কেননা তারা পড়তে না পারলেও এ লাইব্রেরির মাধ্যমে জানতে পারছেন প্রয়োজনীয় চাষ পদ্ধতিসহ অন্যান্য নানান বিষয়।

করোনার মধ্যে ২০২১ সালে কার্যক্রম শুরু করা এ লাইব্রেরিটিতে এখন প্রায় ৩০০ বই রয়েছে। অস্থায়ী কার্যালয় থেকেই পরিচালনা করছে সব কার্যক্রম। প্রাথমিকভাবে আমলা ইউনিয়নে কার্যক্রম পরিচালনা করলেও আগামীতে পরিসর বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন লাইব্রেরির সভাপতি মো. সামসুল হক।  

তিনি জানান, লাইব্রেরির কার্যক্রমে বর্তমানে সম্পৃক্ত আছেন এলাকার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষার্থীরা। তাদের অবদানে একটু একটু করে এগিয়ে যাচ্ছে কৃষকের বাতিঘর। আর এ লাইব্রেরিটি কৃষকদের প্রতি গুরুত্ব বেশি দিলেও সাধারণ মানুষও পান সেবা।

মিরপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কামারুল আরেফিন বলেন, কৃষকদের উন্নয়নে এমন কাজ প্রশংসনীয়। সরকারের পাশাপাশি ব্যক্তিগত উদ্যোগে এভাবে কৃষকদের জন্য কাজ করছে “কৃষকের বাতিঘর” নামের লাইব্রেরি। যা থেকে নিরক্ষর কৃষকরাও কৃষি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারছেন। এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানাই।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৩৪৬ ঘণ্টা, জুন ০৩, ২০২২
এসআই
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।