ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কৃষি

কৃষিতে অবদান: প্রথমবার এআইপি কার্ড পাচ্ছেন ১৩ জন 

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১৪৯ ঘণ্টা, জুলাই ২৫, ২০২২
কৃষিতে অবদান: প্রথমবার এআইপি কার্ড পাচ্ছেন ১৩ জন 

ঢাকা: বাণিজ্যিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি- সিআইপির মতো কৃষিক্ষেত্রে অবদানের জন্য প্রথমবারের মতো এআইপি কার্ড দেবে সরকার।

চারটি ক্যাটাগরিতে ১৩ জনকে ২০২০ সালের জন্য ‘কৃষিক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি (এগ্রিকালচারালি ইম্পর্ট্যান্ট পারসন- এআইপি)’ কার্ড দেবে কৃষি মন্ত্রণালয়।

তারা সিআইপিদের মতো বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা ভোগ করবেন। আগামী ২৭ জুলাই (বুধবার) ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে মনোনীতদের হাতে এআইপি কার্ড তুলে দেওয়া হবে।

এজন্য ১৩ জনকে এআইপি হিসেবে মনোনীত করে আদেশ জারি করেছে কৃষি মন্ত্রণালয়। রোববার (২৪ জুলাই) তালিকাটি গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়েছে। ‘কৃষিক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি নীতিমালা, ২০১৯’ অনুযায়ী এ সম্মাননা দেওয়া হচ্ছে।

নীতিমালা অনুযায়ী ‘কৃষি উদ্ভাবন জাত/প্রযুক্তি’ ক্যাটাগরিতে চারজন, ‘কৃষি উৎপাদন/বাণিজ্যিক খামার স্থাপন ও কৃষি প্রক্রিয়াকরণ শিল্প’ ক্যাটাগরিতে ছয়জন, ‘স্বীকৃত বা সরকার কর্তৃক রেজিস্ট্রিকৃত কৃষি ফসল/ মৎস্য/প্রাণিসম্পদ/বনজসম্পদ উপখাতভুক্ত সংগঠন’ ক্যাটাগরিতে একজন এবং ‘বঙ্গবন্ধু কৃষি পুরস্কারে স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত’ ক্যাটাগরিতে দুজন এআইপি নির্বাচিত হয়েছেন।

কৃষি উদ্ভাবন জাত/প্রযুক্তি: বাউ ধান-৩ ও লবণাক্ততাসহিষ্ণু বাউ সরিষা-১, ২ ও ৩ এর জাত উদ্ভাবন করে মনোনীত হয়েছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিপার্টমেন্ট অব জেনেটিক্স অ্যান্ড প্ল্যান্ট ব্রিডিংয়ের অধ্যাপক ড. লুৎফুল হাসান।

দুটি বীজ আলুসহ মোট ১০টি সবজির (মরিচ, বেগুন, শসা, লাউ, চিচিঙ্গা, চালকুমড়া, ধুন্দল, মিষ্টি কুমড়া ও ক্যারোলাস) জাত উদ্ভাবন ও বাজারজাতকরণের জন্য এআইপি মনোনীত হয়েছেন দিনাজপুর বীরগঞ্জের এ আর মালিক সিডস প্রাইভেট লিমিটেডের (গবেষণা ও উন্নয়ন কেন্দ্র) ব্যবস্থাপনা পরিচালক আতাউস সোপান মালিক।

মেহগনি ফলের বীজ থেকে তেল তৈরি, যা থেকে জৈব বালাইনাশক প্রস্তুত করা হয়; মেহগনি খৈল/জৈব সার প্রস্তুত এবং মেহগনি পাতা থেকে চা তৈরি করে এআইপি হচ্ছেন বাগেরহাটের ফিউচার অর্গানিক ফার্মের সৈয়দ আব্দুল মতিন। তিনি ‘বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার, ১৪১৮’ এ ব্রোঞ্জ পদক পেয়েছিলেন। আলিম পাওয়ার টিলার উদ্ভাবন (কপিরাইট করা) করে এআইপি হচ্ছেন সিলেটের আলিম ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের আলিমুছ ছাদাত চৌধুরী।

কৃষি উৎপাদন/বাণিজ্যিক খামার স্থাপন ও কৃষি প্রক্রিয়াকরণ শিল্প : এ ক্যাটাগরিতে মনোনীত হয়েছেন- নাটোরের দৃষ্টান্ত এগ্রো ফার্ম অ্যান্ড নার্সারির মো. সেলিম রেজা। তিনি কৃষি উৎপাদন, বাণিজ্যিক খামার স্থাপন ও কৃষি প্রক্রিয়াকরণ শিল্প স্থাপন এবং ‘বঙ্গবন্ধু কৃষি পুরস্কার, ১৪১৯’ এ রৌপ্য পদক পেয়েছিলেন। বাণিজ্যিক কৃষি খামার স্থাপন ও বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে উজ্জ্বল ভূমিকা রাখা এবং ‘বঙ্গবন্ধু কৃষি পুরস্কার ১৪২৩’ এ ব্রোঞ্জ পদক পাওয়ায় মনোনীত হয়েছেন ঠাকুরগাঁওয়ের মো. মেহেদী আহসান উল্লাহ চৌধুরী।

বাণিজ্যিকভিত্তিতে ফল বাগান ও নার্সারি স্থাপন, বাংলাদেশে ভিয়েতনামের খাটো জাতের নারিকেলের বাগান স্থাপন এবং ‘বঙ্গবন্ধু কৃষি পুরস্কার ১৪২৩’ এ ব্রোঞ্জপদক পাওয়ায় ঝালকাঠির এশা ইন্টিগ্রেটেড এগ্রিকালচারাল ফার্মের মো. মাহফুজুর রহমান মনোনীত হয়েছেন।

কেঁচো সার উৎপাদন ও সম্প্রসারণের জন্য পিরোজপুরের জাগো কেঁচো সার উৎপাদন খামারের মালিক মো. বদরুল হায়দার বেপারী এবং ফল, সবজি, মৎস্য উৎপাদন ও পশু পালনের সাফল্যের জন্য পটুয়াখালীর বাউফলের নূর জাহান গার্ডেনের মো. শাহবাজ হোসেন খান মনোনীত হয়েছেন।

এছাড়া এই ক্যাটাগরিতে কুমিল্লার নাঙ্গলকোট রেলস্টেশন সংলগ্ন বিছমিল্লাহ মৎস্য বীজ উৎপাদন কেন্দ্র ও খামারের মো. শামছুদ্দিন (কালু) মনোনীত হয়েছেন। তিনি বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে মৎস্য চাষ ও সমন্বিতভাবে আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে রেণু উৎপাদনে অবদান রাখায় এই স্বীকৃতি পাচ্ছেন।

স্বীকৃত বা সরকার কর্তৃক রেজিস্ট্রিকৃত কৃষি ফসল/মৎস্য/প্রাণিসম্পদ বনজসম্পদ উপখাতভুক্ত সংগঠন : এ ক্যাটাগরিতে মনোনীত হয়েছেন নওগাঁ’র শাহ কৃষি তথ্য পাঠাগার ও জাদুঘর স্থাপনকারী মো. জাহাঙ্গীর আলম শাহ। পাঠাগার ও জাদুঘর স্থাপন এবং ‘বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার ১৪২০’ এ রৌপ্যপদক পাওয়ায় এই স্বীকৃতি পাচ্ছেন।

বঙ্গবন্ধু কৃষি পুরস্কারে স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত : ‘বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার-১৪১৭’ ব্রোঞ্চ পদক ও ‘বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার-১৪২০’ এ স্বর্ণপদক পাওয়ায় পাবনার ঈশ্বরদীর জয়নগরের নুরুন্নাহার কৃষি খামারের মোছা. নুরুন্নাহার বেগম এবং ‘বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার-১৪০৩’ এ রৌপ্য পদক ও ‘বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার-১৪০৪’ এ স্বর্ণপদক পাওয়ায় এ ক্যাটাগরিতে মনোনীত হয়েছেন পাবনার ঈশ্বরদীর মা-মণি কৃষি খামারের মো. শাজাহান আলী বাদশা। এছাড়া লবণাক্ততা সহিষ্ণু সরিষার জাত উদ্ভাবন করে মনোনীত হয়েছেন ড. লুৎফুল হাসান।

কৃষিক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি নীতিমালা, ২০১৯’ অনুযায়ী, মনোনীতরা এআইপি কার্ডের সঙ্গে মন্ত্রণালয় থেকে একটি প্রশংসাপত্র পাবেন। এআইপির মেয়াদ হবে এক বছর (চলতি বছরের জুলাই থেকে পরের বছরের জুন মাস পর্যন্ত)। এআইপিরা সচিবালয়ে প্রবেশের জন্য পাস পাবেন। বিভিন্ন জাতীয় অনুষ্ঠান ও সিটি/মিউনিসিপ্যাল করপোরেশনের নাগরিক সংবর্ধনায় আমন্ত্রণ পাবেন। বিমান, রেল, সড়ক ও জলপথে ভ্রমণে সরকার পরিচালিত গণপরিবহনে আসন সংরক্ষণে অগ্রাধিকার পাবেন।  

একজন এআইপি’র ব্যবসা বা দাপ্তরিক কাজে বিদেশে ভ্রমণের জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ভিসা পেতে সংশ্লিষ্ট দূতাবাসকে উদ্দেশ করে লেটার অব ইন্ট্রোডাকশন ইস্যু করবে। একজন এআইপি তার স্ত্রী, পুত্র, কন্যা, মাতা, পিতা ও নিজের চিকিৎসার জন্য সরকারি হাসপাতালের কেবিন সুবিধা প্রাপ্তিতে অগ্রাধিকার পাবেন এবং বিমানবন্দরে ভিআইপি লাউঞ্জ-২ ব্যবহারের সুবিধা পাবেন।

কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে জানা গেছে, কৃষিক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি নির্বাচনের জন্য সুপারিশ দিতে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের নেতৃত্বে ১০ সদস্যের কমিটি করেছিল মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। গত বছরের জুনে এ কমিটি করা হয়। কমিটি কৃষিক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি নির্বাচনের জন্য কৃষি মন্ত্রণালয়ের চূড়ান্ত বাছাই কমিটির প্রণীত সুপারিশ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের জন্য সুপারিশ দেয়।

বাংলাদেশ সময়: ০১৪৮ ঘণ্টা, জুলাই ২৫, ২০২২
জিসিজি/এমএইচএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।