ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

কবি জীবনানন্দের জন্মজয়ন্তীতে প্লাস্টিক সামগ্রীকে ‘না’

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১০৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১০, ২০২৪
কবি জীবনানন্দের জন্মজয়ন্তীতে প্লাস্টিক সামগ্রীকে ‘না’

বরিশাল: ১৮৯৯ খ্রিষ্টাব্দের ১৭ ফেব্রুয়ারি জন্মগ্রহণ করা কবি জীবনানন্দ দাশের ১২৫তম জন্মজয়ন্তী বরিশালে ভিন্নভাবে উদযাপিত হতে যাচ্ছে।

জীবনানন্দ জন্মজয়ন্তী উদযাপন পর্ষদের উদ্যোগে এবারের এ আয়োজনে কোনো ধরনের প্লাস্টিক বা প্যানাফ্লেক্স সামগ্রী ব্যবহার হচ্ছে না।

সেই সঙ্গে জন্মজয়ন্তীর গোটা আয়োজন প্রথমবারের মতো কবি জীবনানন্দ দাশের প্রাতিষ্ঠানিক পাঠশালা ব্রজমোহন বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে আগামী ১৭ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত হবে।

অনুষ্ঠানে সবাইকে থাকার আমন্ত্রণ জানিয়ে শনিবার (১০ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে বরিশাল রিপোর্টার্স ইউনিটির বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ জননী সাহান আর বেগম স্মৃতি মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করেন জীবনানন্দ জন্মজয়ন্তী উদযাপন পর্ষদ।

জীবনানন্দ জন্মজয়ন্তী উদযাপন পর্ষদের আহ্বায়ক কবি ও শিক্ষাবিদ প্রফেসর দীপঙ্কর চক্রবর্তী বলেন, জীবনানন্দ দাশের মৃত্যুর পর বুঝতে পারা গেছে তিনি কত বড় কবি ছিলেন। সাধারণ জীবনযাপন করেও তিনি অসাধারণ কবিতা লিখেছেন। বিগত দিনের ধারাবাহিকতায় কবি জীবনানন্দ দাশের ১২৫তম জন্মজয়ন্তীতে বরিশালের অনেকে অনেক কিছুই করবে। তবে আমরা একটু ভিন্নতায় গুরুত্ব দিয়েছি।

তিনি আরও বলেন, কোনো কিছু উদযাপনের পেছনে দুটি জিনিস কাজ করে। একটি হলো মনে করিয়ে দেওয়া। আর একটি হলো প্রচার। আর আমরা স্থানীয় প্রচারকে গুরুত্ব দিয়েই সাংবাদিক বন্ধুদের সঙ্গে বসলাম। আশা করি, আপনাদের লেখনীর মধ্য দিয়ে জীবনানন্দ দাশের ১২৫তম জন্মজয়ন্তী সম্পর্কে আরও বেশি মানুষ জানবে। তাকে নিয়ে ভাববে।

এ সময় জীবনানন্দ জন্মজয়ন্তী উদযাপন পর্ষদের সদস্য জাহিদ আব্দুল্লাহ রাহাত বলেন, যারা কবি জীবনানন্দকে ধারণ করেন, তারা প্রাণ-প্রকৃতি, ধানসিঁড়ি, রূপসী বাংলাকে দেখতে পান। কবি জীবনানন্দ দাশের ১২৫তম জন্মজয়ন্তীতে এ বোধের জায়গাটিতে ঝাঁকুনি দেওয়ার একটা সময় হয়েছে। আমরা এমন একটি আয়োজন করতে চাই, যা দীর্ঘমেয়াদে এ শহরে একটি কার্যকরী অনুকরণ সৃষ্টি করতে পারে।

তিনি আরও বলেন, প্রথমত প্রথমবারের মতো জীবনানন্দ দাশকে নিয়ে কোনো আয়োজন ব্রজমোহন বিদ্যালয়ে হচ্ছে। আমরা জানি, জীবনানন্দ এ প্রতিষ্ঠানটির একজন কৃতি শিক্ষার্থী ছিলেন। যিনি ভালো ফলাফলের কারণে প্রতিবছর শিক্ষা বৃত্তি পেতেন। এ কৃতি শিক্ষার্থীর কল্যাণে বাংলা সাহিত্যে ব্রজমোহন বিদ্যালয় নামটি অক্ষয় হয়ে থাকবে- এ বিষয়টি বিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষকরা হয়তো বুঝবে আশা করি। প্রতিবছর এ মানের অন্তত একটি আয়োজন তারা করবেন। আর এবার কবি জীবনানন্দ দাশের ১২৫তম জন্মজয়ন্তী আয়োজনটিতে কোনো ধরনের প্লাস্টিক বা প্যানাফ্লেক্স সামগ্রী ব্যবহার হচ্ছে না, যা আজকালকার যেকোনো আয়োজনে প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু চাইলেই আসলে এসব এড়ানো যায়, এটা আমরা প্রমাণ করতে পারি। জীবনানন্দের আয়োজনে পরিবেশ ক্ষতির কারণ হয়, এমন কিছু আমরা করতে পারি না। এছাড়া আমাদের অনুষ্ঠানের প্রধান গেটটি দেশীয় অনুষঙ্গ দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে।  

জাহিদ আব্দুল্লাহ রাহাত বলেন বলেন, আয়োজনে ব্রজমোহন বিদ্যালয়ের পুরাতন ভবনটিকে ব্যাকড্রপ হিসেবে নান্দনিকভাবে উপস্থাপন করা হবে। সেই সঙ্গে শিক্ষার্থীরা সরাসরি মঞ্চে অভিনয় করবেন, দেয়ালিকা তৈরি করবেন এবং জীবনানন্দবিষয়ক কুইজ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করবেন, যা তাদের চর্চায় কার্যকরী ভূমিকা রাখবে। অনুষ্ঠানস্থলে জীবনানন্দবিষয়ক বইয়ের একটি স্টল থাকবে। পাশাপাশি জীবনানন্দের লোগো সম্বলিত কাঁধে ঝোলানো ব্যাগ, নোটপ্যাড, কলম ও একটি প্রকাশনার প্রদর্শনী থাকবে।  ব্রজমোহন বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের তৈরি জীবনানন্দ স্মরণে একটি ‘দেয়ালিকা’ থাকবে।

আর্থিক সংকটের সময়ে কবি জীবনানন্দ যে কিছু গানও লিখেছিলেন তা একেবারেই অনাবিষ্কৃত ছিল। আমরা জীবনানন্দের ১৫টি গান পেয়েছি। (জীবনানন্দ দাশ: বিকাশ প্রতিষ্ঠার ইতিবৃত্ত-দেবীপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায়, পৃষ্ঠা: ৫৮৫) যার মধ্যে বাছাই করে পাঁচটি গানের সুর ও সঙ্গীতায়োজন করা হয়েছে, যা এপার বাংলা-ওপার বাংলা মিলে সম্ভবত প্রথমবারের মতো পরিবেশিত হতে যাচ্ছে। গানগুলোর সুর ও সঙ্গীতায়োজন করেছেন ব্রজমোহন বিদ্যালয়ের শিক্ষক মৈত্রী ঘরাই, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সোহেল রানা, সরকারি বরিশাল কলেজের ইংরেজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সঞ্জয় হালদার, নজরুল ও উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত শিল্পী রিপন কুমার গুহ।

এছাড়া প্রথমবারের মতো মঞ্চে পারফর্মিং আর্টের মাধ্যমে আকাশলীনা, বনলতা সেন, বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি, অদ্ভুত আঁধার এক ও আবার আসিব ফিরে এ পাঁচটি কবিতার দৃশ্যায়ন করবেন ব্রজমোহন বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

অনুষ্ঠানে কোনো প্রধান ও বিশেষ অতিথি নেই জানিয়ে তিনি বলেন, সবাইকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি, আমরা সবার উপস্থিতিও কামনা করছি। তবে যারা নিবিষ্ট মনে জীবনানন্দকে নানাভাবে চর্চা করছেন, ধারণ করছেন, তাদের মধ্যে বরিশালেই জন্ম এমন তিনজন তরুণকে এ আয়োজনে অতিথি করা হচ্ছে।  

বাংলাদেশ সময়: ২০৫৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১০, ২০২৪
এমএস/আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।