ঢাকা: কড়াইল- যেখানে আপনি খুঁজে পাবেন বাংলাদেশের নানা প্রান্তের মানুষকে। ঠিক তিন বছর আগে এখানে জার্মান সাংস্কৃতিক কেন্দ্র গ্যাটে ইনস্টিটিউটের সহায়তায় পাড়া লিমিটেড কাজ শুরু করে।
গবেষণাভিত্তিক স্থাপত্যকলা নিয়ে গত ১০ বছর ধরে কাজ করছে ‘পাড়া’। তিন বছর আগে সেই উদ্দেশ্যেই তারা গবেষণা শুরু করে কড়াইলে কীভাবে একটি সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণ করা যায়। যেখানে কড়াইলবাসীর সঙ্গে শহরের মানুষেরা সংস্কৃতি চর্চায় অংশ নেবেন, সেই সঙ্গে এই স্থানটি দক্ষতা উন্নয়নে কাজ করার একটি হাব হয়ে উঠবে। শুরুতে জরিপের মাধ্যমে তারা জানতে চায় কড়াইলের মানুষ কেমন স্থান চায়, তাদের কী কী প্রয়োজন একটি সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে। কড়াইলবাসীর চাওয়ার ওপর ভিত্তি করে তাদের অংশগ্রহণের মাধ্যমে পাড়া একটি সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের মডেল নির্মাণ করে। সেই মডেল মাথায় রেখেই কড়াইলের এরশাদ মাঠে তৈরি হয়েছে এই সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে। পাড়া এই কেন্দ্র নির্মাণের পাশাপাশি কাজ করেছে কড়াইলের তরুণদের মানোন্নয়নে। এ তরুণরাই এই সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের নাম দিয়েছে ‘মাচান’। যার অর্থ মঞ্চ বা উঁচু কোনো স্থান। কারণ তারা বিশ্বাস করে এই প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে তারা কড়াইলের মানুষের পাশাপাশি বাইরের পৃথিবীকে সঙ্গে নিয়ে জীবনের গল্প বোনার কাজ করে যাবে, কাজ করবে মানুষের কল্যাণে। এ কেন্দ্রের মাধ্যমে সারা বিশ্বে তারা ছড়িয়ে দেবে তাদের আওয়াজ। ভবিষ্যৎ তত্ত্বাবধানে ও রক্ষণাবেক্ষণে পাড়া এ তরুণ ও কড়াইলের বাকি বাসিন্দাদের নিয়ে একটি তত্ত্বাবধায়ক দলও গঠন করে। যারা এই কেন্দ্র পরিচালনা, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও নতুন নেতৃত্ব নির্মাণে কাজ করবে।
পাড়া, গ্যাটে ইন্সটিটিউট বাংলাদেশ, জার্মান ফেডারেল ফরেন অফিস ও ফ্লোটিং ই ভি সবাই মিলে এই কেন্দ্রের রূপদানে কড়াইলবাসীকে সহায়তা করে। এ মহাযজ্ঞের অর্থায়ন করে জার্মান ফেডারেল ফরেন অফিসের কালচারাল ইকোনমি প্রকল্প। কড়াইলের সংস্কৃতিকে জানান দিতেই কড়াইল সিটি অব কালচার।
সাংস্কৃতিক কেন্দ্র ‘মাচান’ এর উদ্বোধন করতে, মাচান পরিচালনা পর্ষদ, পাড়া, গ্যাটে ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ সম্মিলিতভাবে আয়োজন করছে চার দিনব্যাপী বিশাল এক উৎসবের। মজা-করি নামের এই উৎসব চলবে ডিসেম্বরের ৬, ৭ ও ১৩, ১৪ তারিখ পর্যন্ত। যেখানে থাকছে প্রায় ৫০ জন শিল্পীর চিত্রকর্ম প্রদর্শনী, ইন্সটলেশন, স্ক্রিনিং। এছাড়া থাকছে পাঁচটি আলোচনা সভা, পাঁচটি সাংস্কৃতিক আয়োজন, খেলা, প্রতিযোগিতা। পাড়া’র চার দিনব্যাপী ডিজাইন উৎসবের আয়োজনে শামিল হয়েছে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স, বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট, বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্র্যাফট কাউন্সিল, আলোকি। সংগঠনগুলো তাদের নিজ নিজ কাজের প্রতিফলন হিসেবে সংযুক্ত হয়েছে আলোচনা সভা, কর্মশালাগুলোতে। উৎসবে বেশ কিছু কর্মশালার আয়োজনে থাকছে আবর্জনা থেকে ব্যবহার্য পণ্য উৎপাদন, ফটোগ্রাফি, প্রাকৃতিক রঙ দিয়ে পণ্য তৈরি, ভাস্কর্য নির্মাণ, ফেলনা জিনিস থেকে চিত্রকর্ম তৈরি ইত্যাদি।
সাংস্কৃতিক আয়োজনে থাকছে ফারিয়া উলফাতের তালবাহানা, বেলাত গানের দলের গান, ফুলকির পরিবেশনাসহ আরও নানা উদ্যোগ। এছাড়া কড়াইলের বাসিন্দাসহ উৎসবের দর্শনার্থীদের জন্য থাকছে বিভিন্ন খেলার আয়োজন।
উৎসবটি আয়োজিত হচ্ছে কড়াইলে সদ্য নির্মিত সাংস্কৃতিক কেন্দ্র ‘মাচানে’, এরশাদ মাঠে, কড়াইলে ঘাটপাড়ে, বিভিন্ন গলিতে, রিকশা গ্যারেজসহ ঢাকার আলিয়ঁস ফ্রসেজ ও শালা নেইবারহুড আর্ট স্পেসে।
উৎসবকে মাথায় রেখে পাড়া আয়োজন করেছে একটি ডিজাইন প্রতিযোগিতার, যেখানে প্রায় ১০০ স্থাপত্যকলার শিক্ষার্থী অংশ নিয়েছে। ইতোমধ্যে তারা তাদের কাজ জমা দিতে আরম্ভ করেছে। যার থেকে পাড়া সেরা তিনজন প্রতিযোগীকে পুরস্কৃত করবে। প্রতিযোগিতার মূল উপপাদ্য ছিল ভবিষ্যতের ঢাকা বা কড়াইলের ল্যান্ডস্কেপ কেমন হবে? প্রতিযোগিতার কাজগুলোও প্রদর্শিত হবে মজা-করি উৎসবে। পাড়া ও জার্মান সাংস্কৃতিক কেন্দ্র গ্যাটে ইনস্টিটিউট বাংলাদেশের সম্মিলিত প্রজেক্ট কড়াইল সিটি অব কালচার বছরের শুরুতে আয়োজন করেছিল আর্টিস্ট রেসিডেন্সি প্রোগ্রাম যেখানে নয়টি গ্রুপ অংশগ্রহণ করে। মজা-করি উৎসবে তাদেরও কাজ প্রদর্শিত হবে।
এমন আরও সব আয়োজন নিয়ে শুরু হচ্ছে চার দিনব্যাপী মজা করি উৎসব। আর এখান থেকেই যাত্রা শুরু করবে কড়াইলের একমাত্র সাংস্কৃতিক কেন্দ্র ‘মাচান’। মাচানের সঙ্গে যুক্ত তরুণ দল জানায় সামনের দিনগুলোতেও আয়োজনে মুখর থাকবে এই কেন্দ্র। যেখানে শুধু বিনোদন নয় হবে সংস্কৃতি, দক্ষতার আদান-প্রদান। যেই স্থানে কড়াইলের সঙ্গে জুড়ে যাবে পুরো ঢাকার মানুষ। এখান থেকেই সবাই একসঙ্গে বুনবে নিজেদের গল্প।
বাংলাদেশ সময়: ১১২১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৪, ২০২৪
আরআইএস