ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

দ্য ইয়ং হিটলার আই নিউ (পর্ব-১৭)

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১১৯ ঘণ্টা, জুলাই ১০, ২০১৬
দ্য ইয়ং হিটলার আই নিউ (পর্ব-১৭)

মূল: অগাস্ট কুবিজেক
অনুবাদ: আদনান সৈয়দ

[লেখক অগাস্ট কুবিজেক ছিলেন কুখ্যাত নাজি বাহিনীর জনক অ্যাডলফ হিটলারের ছেলেবেলার বন্ধু। তার জনপ্রিয় গ্রন্থ ‘দ্য ইয়ং হিটলার আই নিউ’ থেকে জানা যায়, হিটলার তার প্রথম যৌবনে গান গাইতেন, ধ্রুপদী সঙ্গীতের সমঝদার ছিলেন, ছিলেন একজন প্রেমিক ও ছবি আঁকায় তার ছিলো আজন্ম ঝোঁক।

তিনি যেনো এক অন্যরকম হিটলার! লেখক অগাস্ট কুবিজেক গ্রন্থটির মাধ্যমে হিটলারের জীবনের অনেক অজানা অধ্যায়কে উন্মোচন করার চেষ্টা করেছেন: অনুবাদক]
পর্ব ১৭
সপ্তম অধ্যায়

স্টেফেনি

সত্যি কথা বলতে এটা বলা সঠিক হবে না যে, স্টেফেনি ছাড়া আমার বন্ধুর যুবক বয়সে ভালোবাসার কথাটি সেই সময়ে আরও কেউ জানতো। এই ভালোবাসার গল্পটি তার ষোল বছর বয়স থেকে শুরু হয়েছিল এবং চার বছর পর্যন্ত সেটি তার জীবনের সঙ্গে লেপ্টে ছিলো। আমি ভয় পাচ্ছি এই ভেবে যে, আমার বন্ধুর ভালোবাসার সত্যি ঘটনাটা শুনে অনেকেই হয়তো ভাববেন, কেন আমি তা আপনাদের সামনে প্রকাশ করতে গেলাম। এই মেয়েটির সঙ্গে অ্যাডলফের প্রেমের সম্পর্কটি ছিলো অনেক শ্রদ্ধা আর ভালোবাসার। যদিও বর্তমান যুগে প্রেম-ভালোবাসার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কটিও খুব স্বাভাবিকভাবে চলে আসে। আবার এটা অনেকেই খুব অস্বাভাবিক বলবেন যে, দু’জন  প্রেমিক-প্রেমিকা একত্রে বসে আছে অথচ তাদের মধ্যে ‘কিছুই হয়নি’।

আমি আগেভাগেই আপনাদের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি এ কারণেই যে, আমি মেয়েটির যে ডাক নামটি উল্লেখ করেছি তা ছিলো আদতে তার বিবাহিত নাম। যারা অ্যাডলফকে নিয়ে গবেষণা করেন তাদের সবার জন্যেই আমি এই বিষয়টা আগেভাগেই পরিষ্কার করে নিতে ভালোবাসি। স্টেফেনি সম্ভবত অ্যাডলফের চেয়ে এক বা দুই বছরের বড় হয়ে থাকবে। পরবর্তীতে স্টেফেনি অনেক উচ্চপদস্থ একজন সামরিক কর্মকর্তাকে বিয়ে করেছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় স্টেফেনি বিধবা হয়ে ভিয়েনায় অবস্থান করে। পাঠক, আপনারা বুঝতেই পারছেন কেন আমি স্টেফেনি সম্পর্কে আগেভাগেই খোলামেলা আলাপ করতে চেয়েছিলাম।

১৯০৫ সালের বসন্তের কোন এক বিকেলে আমরা দুই বন্ধু মিলে প্রতিদিনের মতোই হাটছিলাম। হঠাৎ করে অ্যাডলফ আমার হাত দু’টো জোর করে ধরলো এবং বললো, আমি এই সুন্দরী সোনালি চুলের মেয়েটি নিয়ে কী ভাবছি। আমি তখন লক্ষ্য করলাম, লেন্ডস্ট্রেসের রাস্তায় একটি মেয়ে তার মায়ের সঙ্গে হেঁটে বেড়াচ্ছে। অ্যাডলফ বললো, তোমাকে একটা কথা জনাতে চাই, ‘আমি এই মেয়েটার প্রেমে পড়েছি’।

স্টেফেনি ছিলো অসাধারণ সুন্দরী একটি মেয়ে। যেমন সে লম্বা তেমন দেখতেও হালকা-পাতলা গড়নের। তার চুল ছিলো ঘন এবং চুলগুলো সে সবসময় পেছন দিকে ঝুলিয়ে রাখতো। তার চোখ জোড়া ছিলো অসাধারণ-উজ্জ্বল এবং আকর্ষণীয়। তার প্রসাধন ছিলো ব্যতিক্রমধর্মী, যাতে বোঝা যেতো যে, সে অসম্ভব রকম ভালো এবং সম্ভ্রান্ত কোনো পরিববার থেকে এসেছে।

হেনস জিভনির তোলা স্টেফিনির ছবিটি ছিলো ওরফার শহরে। সে যখন স্কুলের গণ্ডি মাত্র পার হয়েছে এবং সম্ভবত অ্যাডলফের সঙ্গে তার পরিচয় ঠিক তার আগের সময়ের। তখন স্টেফেনির বয়স সতের অথবা খুব বড়জোর আঠার হবে। ছবিটাতে দেখা যায়, একটি অসাধারণ হালকা-পাতলা সুন্দরী মেয়ের অবয়ব। তার ছবিটি ছিলো অকৃত্রিম এবং সাধারণ। চুল ছিলো কায়দা করে বাঁধা যা তার মুখের অভিব্যক্তিকে আরও বেশি আকর্ষণীয় করে ফুটিয়ে তুলতো। তার সতেজ মুখশ্রী এবং আকর্ষণীয় চেহারা তাকে সুস্থ-সুঠামদেহী একজন নারীর অবয়ব ফুটিয়ে তুলতো।

সেই বছরগুলোতে সবাই মিলে লেন্ডস্ট্রেসে বৈকালিক ভ্রমণ ছিলো একটি খুব প্রিয় বিষয়। নারীরা দোকানের জানালায় সাজিয়ে রাখা মনোহরি জিনিসপত্রের দিকে ঝুঁকে রয়েছে, কেউ কেউ হালকা কেনাকাটিতে ব্যস্ত, কেউ পুরাতন বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হওয়ায় সেখানে নির্মল আড্ডা দিতে নিজেদের ব্যস্ত রাখছেন। সেখানে অনেক সেনাবাহিনীর যুবক অফিসার ঘোরাঘুরি করে পরিবেশটাকে আরও যেনো সুন্দর করে তুলছে। সবকিছু দেখে মনে হয়, স্টেফেনি ওরফার শহরের বাসিন্দা কেননা সে প্রতিদিন মায়ের বাহু আগলে ধরে ওরফার থেকে সাঁকোটা অতিক্রম করে লেন্ডস্ট্রেসে বৈকালিক ভ্রমণ করতে আসতো। প্রায় প্রতিদিন বিকেল ৫টার দিকে মা এবং মেয়েকে লেন্ডস্ট্রেসে আসতে দেখা যেতো। আমরা দু’জনে তাদের দেখতে স্কিয়েডটোরেক এলাকায় অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকতাম। এটা অবশ্যই অসৌজন্যমূলক ছিলো যে, সেই মুহূর্তে স্টেফেনিকে দেখে তাকে সম্বোধন করা। যেহেতু আমাদের দু’জনের কেউ তখন পর্যন্ত স্টেফেনির মায়ের সঙ্গে কোনো পরিচয় ঘটেনি। সেই সময় থেকে অ্যাডলফ স্টেফেনিকে না দেখে থাকতে পারতো না। বলা যায়, সেই সময় থেকেই অ্যাডলফ পুরোপুরি বদলে যাওয়া এক মানুষ। অন্তত সে আর নিজের মতো রইলো না।  

আমি জানতে পেরেছিলাম, স্টেফেনির মা ছিলেন বিধবা এবং ওরফাতেই একা একা তিনি বসবাস করেন। তাদের বাড়িতে মাঝে মধ্যেই মধ্যেই একজন যুবকের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। অ্যাডলফের সবচেয়ে অপছন্দের ছিলো স্টেফেনির ভাইকে নিয়ে যিনি ভিয়েনায় আইন বিষয়ে পড়াশুনা করতেন। এই তথ্যটি অ্যাডলফের জন্যে মোটেও সুখকর ছিলো না। তবে প্রায় সময়ই এই দুই নারীকে একজন যুবক সেনা অফিসারের সঙ্গে দেখা যেতো। খুব স্বাভাবিকভাবেই অপেক্ষাকৃত দরিদ্র, স্বপ্নহীন অ্যাডলফের মতো যুবকের পক্ষে তরুণ সুবিন্যস্ত এবং সুন্দর কাপড় পরা লেফটেনেন্টের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নামা সহজ ছিলো না।

অ্যাডলফ বিষয়টি তাৎক্ষণিকভাবে বুঝতে পারতো এবং তার অনুভূতিকে বাস্তাবতার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়ার চেষ্টা করতো। সবশেষে তার রাগ পড়তো গোটা অফিসার শ্রেণির সব যুবকদের উপর যাদেরকে সে এক কথায় ‘চতুর গাড়ল’ বলে সম্বোধন করতো। এই বিষয়টি অ্যাডলফকে দারুণভাবে কষ্ট দিতো যে, স্টেফেনি এইসব গাড়লদের সঙ্গে মেশে এবং অন্তর্বাস ও পারফিউম লাগিয়ে ঘুরে বেড়ায়।


এটা নিশ্চিত যে, স্টেফেনির কোনো ধারণাই ছিলো না অ্যাডলফ তাকে কতো গভীরভাবে ভালোবাসতো। সে অ্যাডলফকে তার সামনে সবসময় লজ্জাবত এবং তার অন্যতম উচ্চ প্রশংসাকারী হিসেবেই বিবেচনা করতো। যখন সে মুচকি হেসে অ্যাডলফের দিকে তাকাতো তখন অ্যাডলফ নিজেকে এতোই সুখী মনে করতো যে তার মনের ভাবটা পরিবর্তন হয়ে যেতো এবং তাকে এমন সুখী হতে আমি খুব কমই দেখেছি। সেই সময় তার চোখে পৃথিবীর সব কিছু অসাধারণ সুন্দর আর সঠিক বলে ধরা পড়তো। কিন্তু যদি কখনও স্টেফেনি কোনোভাবে অ্যাডলফকে এড়িয়ে যেতো বা তাকে পাত্তা দিতো না তখন সে অন্যরকম হয়ে যেতো। নিজেকে এবং গোটা পৃথিবীটাকে ধ্বংস করার মতলব আঁটতো।

স্বাভাবিকভাবেই যারা প্রথম প্রেমে পড়তো তাদের জন্যে এই বিষয়টি খুব স্বাভাবিক ছিলো। কেউ হয়তো স্টেফেনির প্রতি অ্যাডলফের যে ভালোবাসা ছিলো তা বাচ্চাদের ভালোবাসা বলে উড়িয়ে দিতে পারেন। এটা এক দিক থেকে সত্যও হতে পারে যেহেতু স্টেফেনির দিকে অ্যাডলফের প্রতি তার কেমন ভালোবাসার টান রয়েছে সেটি ভাবাও গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু অ্যাডলফের দিক থেকে স্টেফেনির প্রতি তার ভালোবাসায় কোনো ‘ছেলেমানুষি’ ছিলো না। এটা সত্য যে, তাদের ভালোবাসার সম্পর্কটি দীর্ঘ চার বছর পর্যন্ত গড়িয়েছিল এমনকী, এর পরবর্তী সময়গুলোতেও অ্যাডলফ যখন ভিয়েনায় খুব দৈন্য দশার মধ্যে যাচ্ছিলো তখনও তার স্টেফেনির প্রতি ভালোবাসা খাঁটি, গভীর এবং সত্যিকারের ভালোবাসা বিদ্যমান ছিলো। এর সত্যতা হিসেবে সেই সময়ে অ্যাডলফের হৃদয় মন্দিরে স্টেফেনি ছাড়া আর কোনো রমণীর উপস্থিতি ছিলো না। একজন সাধারণ বালক যেভাবে তার প্রথম ভালোবাসাকে বুকে নিয়ে পথ চলে অ্যাডলফ তার থেকে ব্যতিক্রম কেউ ছিলো না।

বাংলাদেশ সময়: ১১০৩ ঘণ্টা, জুলাই ১০, ২০১৬
এসএনএস

আগের পর্ব পড়তে ক্লিক করুন-
** দ্য ইয়ং হিটলার আই নিউ (পর্ব-১)
** দ্য ইয়ং হিটলার আই নিউ (পর্ব-২)
** দ্য ইয়ং হিটলার আই নিউ (পর্ব-৩)

**দ্য ইয়ং হিটলার আই নিউ (পর্ব-৪)
** দ্য ইয়ং হিটলার আই নিউ (পর্ব-৫)
** দ্য ইয়ং হিটলার আই নিউ (পর্ব-৬)
** দ্য ইয়ং হিটলার আই নিউ (পর্ব-৭)
** দ্য ইয়ং হিটলার আই নিউ (পর্ব-৮)
** দ্য ইয়ং হিটলার আই নিউ (পর্ব-৯)
** দ্য ইয়ং হিটলার আই নিউ (পর্ব-১০)
** দ্য ইয়ং হিটলার আই নিউ (পর্ব-১১)
** দ্য ইয়ং হিটলার আই নিউ (পর্ব-১২)
** দ্য ইয়ং হিটলার আই নিউ (পর্ব-১৩
** দ্য ইয়ং হিটলার আই নিউ (পর্ব-১৪)

** দ্য ইয়ং হিটলার আই নিউ (পর্ব-১৫)
** দ্য ইয়ং হিটলার আই নিউ (পর্ব-১৬)


 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।