কলকাতা থেকে ফিরে: জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ‘বিদ্রোহী’ কবিতার ১০০ বছর পূর্তি হচ্ছে ২০২১ সালে। ‘বিদ্রোহী’ কবিতা কলকাতার ৩/৪ সি, তালতলা লেন-এর বাড়িতে রচিত হয়েছিল।
তাই এ বাড়িটি এখন কেমন আছে সে খোঁজ নিতে উদ্যোগী হয় বাংলানিউজ। সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, বাড়ীটি এখন আগের মালিকদের হাতে নেই। কয়েকবার হাতবদল হয়েছে এর মালিকানার। বাড়ীটির সামনের অংশটি অবশিষ্ট থাকলেও পিছনে দিকে যে ঘরটিতে বসে কবি বিদ্রোহী কবিতাটি রচনা করেছিলেন সেটির সংস্কার ও পরিবর্তন সাধন করা হয়েছে। এটি করেছেন বর্তমান মালিক সীমা সাহা। তিনি ৬ বছর আগে পূর্ববর্তী মালিকের কাছ থেকে বাড়িটি কিনেছেন। বর্তমান ঠিকানা: মা বিপদনাশিনী কুঠির,
সীমা সাহা,
৩/৪সি তালতলা লেন,
কলকাতা-১৪।
তার সঙ্গে কথা হয় বাংলানিউজের। তিনি বলেন, ‘আমি ৬ বছর আগে এ বাড়িটি কিনে নিয়েছি। এখন কাজী নজরুলের কোনো কিছুই এখানে নেই। থাকারও কথা নয়। কারণ আমি জেনেছি তিনি কিছুদিনের জন্য এ বাড়িতে অতিথি হিসেবে এসেছিলেন। পিছনের অংশটি আমি কিছুটা পরিবর্তন করে বসবাস করছি। এখনও অনেক বাংলাদেশি প্রায়শই এ স্থানটি পরিদর্শনে আসেন।
দেখা হল ঐ ভবনের একটি অংশে বসবাসকারী রাজু সাহার সঙ্গে। তিনি জানান, সামনের অংশটি শতবছর আগে যেমন ছিলো তেমনটিই আছে। ১৯৯৯ সালে নজরুলের জন্ম শতবর্ষ উদযাপন কমিটি প্রধান রাস্তার মোড়ে ও এ লেনে ঢোকার প্রবেশমুখে ‘বিদ্রোহী’ কবিতাটি কোথায় লেখা হয়েছে তা নিয়ে দুটি শিলালিপি স্থাপন করে। এটি দেখেই বহু বাংলাদেশি এখানে আসেন অনেকটা তীর্থ দেখার মত।
কলকাতায় বাংলাদেশ হাইকমিশনের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, বিষয়টি আমাদের অজানা। আমরা এটার খোঁজ নেব। প্রয়োজনে বাড়িটি উদ্ধার করে জাতীয় কবির স্মরণে এটিকে সংরক্ষণের চেষ্টা করা হবে।
বিভিন্ন তথ্য ঘেঁটে জানা যায়, ‘বিদ্রোহী’ নজরুলের প্রথম প্রকাশিত কাব্য ‘অগ্নিবীণা’র দ্বিতীয় কবিতা। এটিই কাব্যের মূল কবিতা নজরুল চরিতমানসের লেখক সুশীলকুমার সেনগুপ্ত জানিয়েছেন, কবিতাটি রচিত হয়েছিল ১৯২১ সালের দুর্গাপূজার কাছাকাছি সময়ে।
মুজফ্ফর আহমদ পরবর্তীকালে তাঁর বন্ধু নজরুলকে নিয়ে রচিত স্মৃতিকথায় বলেছেন, ‘‘বিদ্রোহী” কবিতা রচিত হয়েছিল ১৯২১ সালের ডিসেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহে। সব হিসাব খতিয়ে এবং সমসাময়িক ঘটনার সঙ্গে মিলিয়ে বেরিয়ে আসছে যে এটাই ছিল কবিতাটির রচনার সময়।
মুজফ্ফর আহমদের দেওয়া তথ্যে জানা যাচ্ছে, ‘বিদ্রোহী’ কবিতা কলকাতার ৩/৪ সি তালতলা লেন বাড়িতে রচিত হয়েছিল। ১৯২০ সালে ঊনপঞ্চাশ নম্বর বাঙালি পল্টন ভেঙে গেলে নজরুল প্রথমে তাঁর সতীর্থ কথাসাহিত্যিক শৈলজানন্দ মুখোপাধ্যায়ের বাসায় ওঠেন। সেখানে কয়েক দিন থেকে আরেকটি বাসস্থানে, পরে বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য সমিতির ৩২ নম্বর কলেজ স্ট্রিটে উঠলেন। সেখানে তাঁর বন্ধু মুজফ্ফর আহমদ থাকেন। তাঁর সঙ্গে নজরুল একত্র বসবাস করেছেন আরও কয়েকটি বাসায়। শেষে ৩/৪ সি তালতলা লেনে। মুজফ্ফর আহমদ স্মৃতিকথায় জানিয়েছেন, পুরো বাড়ি পশ্চিমগাঁর নওয়াব ফয়জুন্নিসা চৌধুরানীর নাতিরা ভাড়া নিয়েছিল। বাড়ির নিচতলার দক্ষিণ-পূর্ব ঘরটি নজরুল ও মুজফ্ফর আহমদ ভাড়া নিয়েছিলেন।
‘এই ঘরেই কাজী নজরুল ইসলাম তাঁর “বিদ্রোহী” কবিতা লিখেছিল। সে কবিতাটি লিখেছিল রাত্রিতে। রাত্রির কোন সময়ে তা আমি জানি নে। রাত দশটার পরে আমি ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। সকালে ঘুম থেকে উঠে মুখ ধুয়ে আমি বসেছি এমন সময় নজরুল বলল, সে একটি কবিতা লিখেছে। পুরো কবিতাটি সে তখন আমায় পড়ে শোনাল। “বিদ্রোহী” কবিতার আমিই প্রথম শ্রোতা। ’
মুজফ্ফর আহমদ জানিয়েছেন, ‘আমার মনে হয় নজরুল ইসলাম শেষ রাত্রে ঘুম থেকে উঠে কবিতাটি লিখেছিল। তা না হলে এত সকালে সে আমায় কবিতা পড়ে শোনাতে পারত না। তার ঘুম সাধারণত দেরীতেই ভাঙত, আমার মতো তাড়াতাড়ি তার খুব ভাঙত না। ’
বাংলাদেশ সময়: ১৫৩৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৫, ২০১৭
জেএম