ঢাকা, রবিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

‘সিলেটে বঙ্গবন্ধু’ : একটি ঐতিহাসিক রাজনৈতিক দলিল

মুফতি এনায়েতুল্লাহ, সিনিয়র বিভাগীয় সম্পাদক, ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৫৬ ঘণ্টা, জুলাই ২৭, ২০১৭
‘সিলেটে বঙ্গবন্ধু’ : একটি ঐতিহাসিক রাজনৈতিক দলিল ‘সিলেটে বঙ্গবন্ধু’ : একটি ঐতিহাসিক রাজনৈতিক দলিল

গ্রন্থ: সিলেটে বঙ্গবন্ধু

লেখক: সৈয়দ আবদুল্লাহ
প্রকাশক: কালান্তর প্রকাশনী
অনলাইন পরিবেশক: রকমারি ডটকম
পৃষ্ঠা: ১৮০
মূল্য: ৩০০ টাকা

হজরত শাহজালাল রহ. ও ৩৬০ আউলিয়ার স্পর্শে ধন্য পূণ্যভূমি সিলেটের সঙ্গে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুগভীর সম্পর্ক ছিলো। ১৯৪৭ সালের রেফারেন্ডামের সময় তরুণ ছাত্রনেতা শেখ মুজিবুর রহমান প্রথম সিলেট আসেন।

সেই থেকে ১৯৭৩ সাল পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু সিলেটে বহুবার এসেছেন। সে এক ইতিহাস।

সেই ইতিহাসকে পাঠকের সামনে ফুটিয়ে তুলেছেন বাংলা সাহিত্যের খ্যাতিমান ইতিহাস গবেষক, প্রবীণ লেখক সৈয়দ আবদুল্লাহ।

বঙ্গবন্ধুর সব আন্দোলন-সংগ্রামের প্রাণকেন্দ্র ছিলো এই সিলেটের ভূমি। সিলেটে রয়েছেন সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধুর অসংখ্য সহযোদ্ধা ও সহচর। তাদের নিয়ে বঙ্গবন্ধু জাতীয় পর্যায়ে নানা আন্দোলন সংগ্রাম ও দেশ গঠনে কাজ করেছেন।

সিলেটের খ্যাতিমান ইতিহাসবিদ, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, বহুগ্রন্থ প্রণেতা সৈয়দ আবুদল্লাহর হাত ধরে এই অমূল্য গবেষণা গ্রন্থটি বাংলাদেশের ইতিহাসগ্রন্থে নতুন একটি সংযোজন। যা জাতীয় ইতিহাসের এক অনন্য দলিল হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।

গ্রন্থটি ‘সিলেটে বঙ্গবন্ধু’ নামে হলেও এর মাধ্যমে ১৯৪৭’র রেফারেন্ডাম থেকে শুরু করে ৫২’র ভাষা আন্দোলন, ছাত্র আন্দোলনের একুশ দফা, ৫৪’র যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, বঙ্গবন্ধুর ছয় দফা, ৬৯’র গণআন্দোলন ও ৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধসহ বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা আন্দোলনের দীর্ঘসময়ের নানা বিষয় ফুটে উঠেছে। সেসব আন্দোলন করতে গিয়ে তিনি বারবার তার প্রিয় স্থান পূণ্যভূমি সিলেটে এসেছেন। সিলেটে তার সহযোদ্ধাদের নিয়ে মাঠে ময়দানে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন।

বঙ্গবন্ধুর সহচরদের মধ্যে সাবেক মন্ত্রী জননেতা দেওয়ান ফরিদ গাজি, সাবেক মন্ত্রী আবদুস সামাদ আজাদ, মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক বঙ্গবীর জেনারেল আতাউল গনি উসমানি, মুক্তিযুদ্ধের উপ সর্বাধিনায়ক জেনারেল এম এ রব, কমান্ট্যন্ড মানিক চৌধুরী, অ্যাডভোকেট মোস্তফা আলী, বীর মুক্তিযোদ্ধা মাওলানা আসাদ আলী, ইসমত আহমদ চৌধুরী, আবদুল মান্নান চৌধুরী ছানু মিয়া, মাওলানা ওলিউর রহমান, আজিজুর রহমানসহ সিলেট বিভাগে বঙ্গবন্ধুর অসংখ্য সহচরদের জীবন কথা ও বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার বর্ণনা এসেছে।  

গ্রন্থটি সিলেটে বঙ্গবন্ধুর নানা অনুষ্ঠানের বহু দুর্লভ ছবি স্থান পেয়েছে। যা গ্রন্থটি বঙ্গবন্ধুকে জানার জন্য নতুন প্রজন্মের আগ্রহের খোরাক হবে।

গ্রন্থের সূচিপত্রে রয়েছে- ভূমিকা, প্রকাশকের কথা, লেখকের কথা, সিলেটে বঙ্গবন্ধু, বঙ্গবন্ধুর প্রথম সিলেট সফর, সিলেট বখতিয়ার বিবি স্কুলে, ২১ দফা নিয়ে সিলেটে বঙ্গবন্ধু, ৫৪ সালে সিলেটে বঙ্গবন্ধু, বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিময় হোটেল গুলশান, ছয় দফা নিয়ে সিলেট, বিয়ানীবাজারে বঙ্গবন্ধু, মৌলভীবাজারে বঙ্গবন্ধু, সুনামগঞ্জে বঙ্গবন্ধু, হবিগঞ্জে বঙ্গবন্ধু, শ্রীমঙ্গলে বঙ্গবন্ধু, ৭০ এর নির্বাচনী প্রচারণায় সিলেটে বঙ্গবন্ধু, আগরতলা মিশন ও সিলেট যাত্রা, বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণাবার্তা সিলেটের যারা পেয়েছিলেন, সিলেটে বঙ্গবন্ধুর ক’জন ঘনিষ্ঠ সহচর, বঙ্গবন্ধুর স্নেহভাজন তিন আমলা, পরিশিষ্ট ও অ্যালবাম।

সুলেখক, গবেষক সৈয়দ আবদুল্লাহ কেবল ইতিহাস থেকে তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করে এই গ্রন্থ রচনা করেননি বরং নিজের অভিজ্ঞতা ও কাছে থেকে বঙ্গবন্ধুকে দেখার নানা চিত্রপট গন্থে তুলে ধরেছেন। লেখকের ভাষায়,
ইতিহাস গবেষক, প্রবীণ লেখক সৈয়দ আবদুল্লাহ
‘১৯৭০ সাল। বাড়ির কাছে বঙ্গবন্ধু আসবেন। খবরটি শুনেই আমাদের মধ্যে অন্যরকম এক অনুভূতি কাজ করলো। স্বচক্ষে প্রিয় নেতাকে দেখার স্বাদ ক্রমশঃ আমাদের সে সময় আবেগী করে তুলেছিল। ততোদিনে শেরে বাংলা এ. কে ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, মজলুম জননেতা মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানি, মাওলানা আবদুর রশিদ তর্কবাগীশের পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাতীয় নেতা হিসেবে সে স্থান দখল করে নিয়েছেন। বঙ্গবন্ধুর ভাষণ শোনার জন্য লাখো মানুষ জড়ো হন। বঙ্গবন্ধু তখন বাঙালির হৃদয়ের অলিন্দে এক অবিসংবাদিত নেতা হিসেবে স্থান করে নিয়েছেন। বঙ্গবন্ধুকে ঘিরে ততোদিনে বাঙালি কৃষক, শ্রমিক, মেহনতি মানুষ আর যুবসমাজ নতুন এক স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে। বঙ্গবন্ধু ক্রমশঃ বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি হয়ে উঠেছেন। বঙ্গবন্ধু তখন স্বাধীনতার চেতনা হয়ে উঠেছেন। সেই বঙ্গবন্ধু আসবেন বাড়ির কাছে।  

আমরা ছুটে চললাম বঙ্গবন্ধুকে দেখার উদ্দেশ্যে। দিন গড়িয়ে সন্ধ্যা হলো। লাখো মানুষ অপেক্ষায়... বঙ্গবন্ধু রাতে এলেন। তিনি বজ্রকণ্ঠে ভাষণে বললেন...। ’

লেখক পরিচিতি
সৈয়দ আবদুল্লাহ বাংলা সাহিত্যের খ্যাতিমান ইতিহাসবিদ। লিখছেন ষাটের দশক থেকে। শেকড়সন্ধানী গবেষক হিসেবে সর্বমহলে সমাদৃত।

উনসত্তরের গণআন্দোলনে তিনি রাজপথে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছেন। মহান মুক্তিযুদ্ধের একজন সংগঠক হিসেবে তার কাজের স্বীকৃতি রয়েছে। পলাশি থেকে শুরু করে একাত্তরের মুক্তিসংগ্রাম পর্যন্ত দেশের প্রতিটি স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাস ও সেই ইতিহাসের নায়কদের নিয়ে সৈয়দ আবদুল্লাহ লিখেছেন অনেক গবেষণাধর্মী প্রবন্ধ-নিবন্ধ ও গ্রন্থ। এরই ধারাবাহিকতায় এবার তার হাত ধরে উঠে এসেছে ‘সিলেটে বঙ্গবন্ধু’ নামক ইতিহাস ও গবেষণামূলক এই গ্রন্থটি। তিনি কাজের স্বীকৃতি হিসেবে পেয়েছেন দেশ বিদেশের সম্মাননা ও পুরস্কার।
 
সৈয়দ আবদুল্লাহকে সিলেট অঞ্চলের সাহিত্য-সাংস্কৃতিক আন্দোলনের প্রাণপুরুষ বলা চলে। সিলেট ও তরফ অঞ্চল নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করার স্বীকৃতিস্বরূপ ‘তরফরত্ম’ উপাধি পেয়েছেন।

ঐতিহ্যবাহী তরফ সাহিত্য পরিষদের তিনি সভাপতি। তার জীবন ও কর্ম নিয়ে ব্রিটেনের জনপ্রিয় টিভি ‘চ্যানেল এস’ দীর্ঘ প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ করে প্রচার করেছে। সরকারি চাকরি থেকে অবসর গ্রহণ করে সাহিত্যসেবী এই সাধক মানুষটি অবসর ভাতার সমুদয় অর্থ দিয়ে ছাপিয়েছেন নিজের লেখা বেশ কিছু ঐতিহাসিক গবেষণাগ্রন্থ। দেশপ্রেম ও সাহিত্যের জন্য তার এই বিরল ঘটনা যুগে যুগে সাহিত্যসেবী মানুষের প্রেরণা হয়ে থাকবে।

জন্ম হবিগঞ্জ জেলার বাহুবল উপজেলার ঐতিহ্যবাহী উত্তরসুর হাবিলীতে। বাংলা সাহিত্য সাধনা ও স্বাধীনতা আন্দোলনে এ পরিবারের মনীষাদের অবদান উপমহাদেশখ্যাত। বাংলা রম্য গদ্যের নির্মাতা বহুভাষাবিদ পণ্ডিত কালজয়ী কথাসাহিত্যিক ড. সৈয়দ মুজতবা আলী এই পরিবারেরই কৃতিসন্তান।

গ্রন্থটিতে আরও যা থাকা দরকার ছিলো
যদিও ৪০ বছর পরে এসে এরকম একটি ঐতিহাসিক কাজ লেখক করেছেন। তবে গ্রন্থটিতে স্থানের বর্ণনায় বঙ্গবন্ধুর সফরের কথা না লিখে সাল অনুযায়ী ধারাবাহিকতা রক্ষা করলে আরও সুন্দর হতো। গ্রন্থটিতে বঙ্গবন্ধুর সহচরদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা আরেকটু বিশদভাবে আলোচনা করলে নতুন প্রজন্ম ইতিহাসের এই বাঁক সম্পর্কে আরও বেশি কিছু জানার সুযোগ পেত।

শোকের মাস আগস্টে বইটি বঙ্গবন্ধুপ্রেমী, ভক্ত ও রাজনৈতিক কর্মী এবং ইতিহাসের পাঠকদের কাছে বহুল পাঠিত হবে বলে আশা করা যায়। বইটি পহেলা আগস্ট থেকে বইটি বাজারে পাওয়া যাবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৫৬ ঘণ্টা, জুলাই ২৭, ২০১৭
এমএইউ/এসএনএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।