ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

আনিসুজ্জামান অশীতিবর্ষী বাতিঘর!

হোসাইন মোহাম্মদ সাগর, ফিচার রিপোর্টার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬০৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৭, ২০১৭
আনিসুজ্জামান অশীতিবর্ষী বাতিঘর! অধ্যাপক আনিসুজ্জামানকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানানো হচ্ছে/ ছবি: শোয়েব মিথুন

ঢাকা: মানুষ হলেও তিনি সবুজ বৃক্ষের মতো, যার দিকে তাকালে দৃষ্টিশক্তি বাড়ে। জীবনের সারসত্য অনুভব করেছেন গভীরভাবে, তা সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন। চিন্তাশীল মানুষটি আবেগকে বেঁধে রাখেন বুদ্ধির শাসনে। যেকোন মুহূর্তকে তিনি রাঙিয়ে দিতে পারেন সুন্দরের রঙে। তিনি আর কেউ নন, এমিরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান।

অশীতিবর্ষপূর্তিতে নিজের কথা বলতে এসে তিনি বললেন, “৮০ বছর পার করার পর এতদিনে নিজেকে বিজ্ঞ বলে দাবি করার সুযোগ পাওয়া গেল। আমি জীবনের কাছে চিরনতুন।

তবে প্রযুক্তির কাছে আমি মেয়াদোত্তীর্ণ। বেঁচে থাকার থেকে আনন্দের আর কী থাকতে পারে! আট দশক বেঁচে আছি! এ আমার সৌভাগ্য। জীবনে এ পর্যায়ে এসে দেখি, কতজানের কাছে ঋণী আমি।

জগন্নাথ কলেজ থেকে রবীন্দ্র সাহিত্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ড. মোহাম্মদ শহিদুল্লাহর সান্নিধ্য, মুনির চৌধুরীর কাছ থেকে রুচি ও জীবনবোধ আর গবেষণাতে আব্দুর রাজ্জাক স্যারের অনপ্রেরণা। তবু জীবনের শেষ দিকে এসে আব্দুর রাজ্জাক স্যার তো আফসোস করে বলতেন, আপনি তো আর লেখাপড়া করলেন না!”

অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, “নিজের আলস্য সত্যিই ক্ষমার অযোগ্য। আমি সারাজীবন ছাত্র থাকেতে চেয়েছিলাম। জীবনের চলার পথে দুঃখ কষ্ট যে পাইনি তা নয়, তবে ভালোবাসা পেয়েছি তার থেকে বেশি। মানুষের জীবনে চাওয়ার তো শেষ নেই। আমি চাইবো আপনাদের অফুরান ভালোবাসা। বাংলাদেশের মাটিতে আমি জন্মগ্রহণ করিনি, তবে বাংলার মাটিতেই যেন আমার শেষ আশ্রয় হয়। ”
স্মারক গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন/ ছবি: শোয়েব মিথুনশুক্রবার (২৭ অক্টোবর) সন্ধ্যায় অশীতিবর্ষপূর্তি (৮০ বছর) উদযাপন অনুষ্ঠানে নিজেকে নিয়ে এমনটাই বললেন এমিরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে চন্দ্রাবতী একাডেমি।

অধ্যাপক নজরুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। এ সময় মঞ্চে আরও উপস্থিত ছিলেন এ বি ব্যাংক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মসিউর রহমান চৌধুরী ও অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের সহধর্মিনী বেবি আনিসুজ্জামান।  
আলোচনা করেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান, বাংলাদেশ শিশু একাডেমির চেয়ারম্যান ও কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন, মানবাধিকার কর্মী সুলতানা কামাল, কথাসাহিত্যিক অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলামসহ প্রমুখ।

অনুষ্ঠানের শুরুতে অধ্যাপক আনিসুজ্জামানকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানানো হয়। মোড়ক উন্মোচন হয় ‘আনিসুজ্জামান সম্মাননা গ্রন্থের’। এ সময় শিল্পী রফিকুন নবীর আঁকা আনিসুজ্জামানের একটি প্রতিকৃতি চন্দ্রাবতী একাডেমির পক্ষ থেকে উপহার দেওয়া হয় তাকে।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, ১৯৫৪ সালে একটি সাহিত্য সম্মেলনে আনিসুজ্জামানের সাথে আমার পরিচয় হয়। গত প্রায় ১৫ বছর ধরে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আনিসুজ্জামান সভাপতি ও আমি প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকি। আজ তার ভিন্নতায় বেশ ভালো লাগছে।

তিনি বলেন, তার প্রভাব আমার ওপর সবসময়। সে আমার রেফারেন্স বুক, এনসাইক্লোপিডিয়া। বিশেষ করে শব্দচয়নে আমি তার প্রতি বিভিন্ন সময়ে কৃতজ্ঞ। আনিসুজ্জামান আমাদের বাতিঘর, যিনি দেশ ও সমাজের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

শামসুজ্জামান খান বলেন, অধ্যাপক আনিসুজ্জামান অসাধারণ পণ্ডিত মানুষ। তিনি তুলনাহীন বিদ্বান, এ সময়ের শ্রেষ্ঠ মণিষী। তিনি বাংলা ও কলকাতাকে ছাড়িয়ে দিল্লি থেকে পদ্মভূষণ উপাধি অর্জন করেছেন।

কথা সাহিত্যিক সেলিনা হোসেন বলেন, অধ্যাপক আনিসুজ্জামান সময়ের আধুনিক মানুষ। সময়ের শুভ ও কল্যাণের জায়গাকে তিনি ধারণ করেছেন। সময়কে কাজে লাগিয়ে জ্ঞানের চর্চায় সকলের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিয়েছেন ফুলঝুড়ি করে। তার জীবন দর্শনকে অবোলোকন করা আমাদের সবার নৈতিক দায়িত্ব।

অনুষ্ঠানের শেষ পর্বে গান পরিবেশন করেন শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা ও অদিতি মহসিন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন আবৃত্তি শিল্পী রূপা চক্রবর্তী।

বাংলাদেশ সময়: ২১১৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৭, ২০১৭
এইচএমএস/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।