ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

বাংলাদেশের উপন্যাসে মুক্তিযুদ্ধ

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১০৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৯, ২০১৮
বাংলাদেশের উপন্যাসে মুক্তিযুদ্ধ মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গণের ছবি। ছবি-সংগৃহীত

উন্মেষকাল থেকেই উপন্যাস সমাজ-বাস্তবতার অনুসারী। একারণে ব্যক্তি ও সামাজিক অনুষঙ্গকে কথাভাষ্যে উপস্থাপনের মাধ্যম বলা হয় উপন্যাসকে।

 

 

বাংলাদেশের উপন্যাসে সামাজিক চিত্র সগৌরবে প্রতিফলিত। বিশেষত, ১৯৭১ সালে সংঘটিত মুক্তিযুদ্ধের মতো গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাপ্রবাহের বিশ্বস্ত রূপায়ন বাংলাদেশের উপন্যাসে স্পষ্ট।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আনোয়ার সাঈদ ‘মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশের উপন্যাস’ শীর্ষক গবেষণা করে দেখেছেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ আমাদের সাহিত্যের এক অত্যাবশ্যকীয় উপাদানে পরিণত হয়েছে। আমাদের শিল্পী-সাহিত্যিকরা মুক্তিযুদ্ধের উপাদানকে ব্যবহার করে কথাসাহিত্যের নতুন নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে একটি স্বতন্ত্র ধারা তৈরিতে সমর্থ হয়েছেন। ’ ১৯৭১ সাল থেকে ১৯৯৯ কালপর্বে রচিত উপন্যাস সমূহের মধ্যে থেকে চব্বিশজন ঔপন্যাসিকের সাতান্নটি উপন্যাস বিশ্লেষণ করেছেন তিনি।

ড. সাঈদ পিএইচ.ডি. পর্যায়ের এই গবেষণা শুরু করেন আনোয়ার পাশার ‘রাইফেল রোটি আওরাত’ উপন্যাসের মাধ্যমে। তারপর তিনি আহমদ ছফার ‘ওঙ্কার’ ও ‘অলাতচক্র’, আমজাদ হোসেনের ‘অস্থির পাখিরা’, ‘যুদ্ধে যাবো’, ও ‘যুদ্ধ যাত্রার রাত্রি’, মাহমুদুল হকের ‘জীবন আমার বোন’, রশীদ করিমের ‘আমার যত গ্লানি’ রাবেয়া খাতুনের ‘ফেরারী সূয’, রিজিয়া রহমানের ‘রক্তের অক্ষর’ ও ‘একটি ফুলের জন্য’, রশীদ হায়দারের ‘খাঁচায়’, সেলিনা হোসেনের ‘হাঙ্গর নদী গ্রেনেড’ ও ‘যুদ্ধ’, হারুণ হাবীবের ‘প্রিয়যোদ্ধা প্রিয়তম’ ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ সকল উপন্যাসকেই আলোচনায় এনেছেন।

গবেষণায় শওকত ওসমানের ‘জাহান্নাম হইতে বিদায়’, ‘দুই সৈনিক’, ‘নেকড়ে অরণ্য’, ‘জলাঙ্গী’, সৈয়দ শামসুল হকের ‘নীল দংশন’, ‘নিষিদ্ধ লোবান’, ‘দ্বিতীয় দিনের কাহিনী’, ‘অন্তর্গত’, ‘মৃগয়ায় কালক্ষেপ’, হুমায়ূন আহমেদের ‘শ্যামল ছায়া’, ‘সৌরভ, ১৯৭১’, ‘আগুনের পরশমণি’, ‘অনিল বাগচীর একদিন’, মঈনুল আহসান সাবেরের ‘পাথর সময়’, ‘সতের বছর পর’, ‘কবেজ লেঠেল’, ‘ফিরে আসা’, ইমদাদুল হক মিলনের ‘কালো ঘোড়া’, ‘ঘেরাও’ ও ‘মহাযুদ্ধ’ ইত্যাদি উপন্যাসের আলোচনায় মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক কথাচিত্রের বিবর্তন, বিকাশ, গতিমুখ ও প্রবণতাকে শনাক্ত করার চেষ্টা করেছেন।

আলোচনার সুবিধার্থে গবেষক ‘বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ: ঐতিহাসিক ও রাজনৈতিক পরিপ্রেক্ষিত’ নামে একটি সূচনামূলক অধ্যায় সংযোজন করেছেন এবং মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক উপন্যাসগুলোকে সত্তর, আশি ও নব্বই দশক শীর্ষক তিনিটি অধ্যায়ে ভাগ করে বিশ্লেষণ করেছেন। তার উপসংহারটি ছোট্ট কিন্তু মূল্যবান। যেখানে অধ্যায় শেষে স্পষ্টতই উল্লেখিত হয়েছে দশকভিত্তিক উপন্যাসের প্রবণতা।

‘সত্তর দশকের মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক উপন্যাসে মুক্তিযুদ্ধকালীন রক্তাক্ত সময় ও সমাজবাস্তবতা, যুদ্ধের বিভীষিকা, ব্যক্তিমানসের নানা ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া এবং প্রত্যক্ষ বাস্তব অবলোকনই ঔপন্যাসিকদের মানসচিন্তায় ক্রিয়াশীল ছিল। ’

‘আশি দশকের মূল প্রবণতায় মুক্তিযুদ্ধোত্তর সামাজিক ও রাজনৈতিক অস্থিরতার রূপায়ন এবং লেখকদের চেতনায় মুক্তিযুদ্ধকে নানামুখী দৃষ্টিকোণ থেকে অবলোকনের প্রয়াস লক্ষ্যণীয়। ’ ‘নব্বই দশকের উপন্যাস রচয়িতারা মুক্তিযুদ্ধের বস্তুগত সত্য উদঘাটনের চেয়ে মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী বাংলাদেশের সমাজ ও জীবনের মর্মসত্য উদঘাটনেই অধিক তৎপর ছিলেন। সেজন্যই মুক্তিযুদ্ধকে নিয়ে নির্মোহ বিশ্লেষণ ও আত্মসমালোচনাই হয়ে উঠে এই দশকের উপন্যাসের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। ’

সাহিত্যের বিভিন্ন মাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও রাজনৈতিক সংগ্রামের প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া নিয়ে অতীতে আরও অনেক গবেষণা হয়েছে। যেমন, আমিনুর রহমান সুলতানের ‘বাংলাদেশের কবিতা ও উপন্যাসে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা’, শহীদ ইকবালের ‘রাজনৈতিক চেতনা: বাংলাদেশের উপন্যাস’, সাহিদা বেগমের ‘কথাসাহিত্যে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ’, নূরুউল করিম খসরুর ‘উপন্যাসে মুক্তিযুদ্ধ’ ইত্যাদি

অন্যতম।

ড. মোহাম্মদ আনোয়ার সাঈদের ‘মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশের উপন্যাস’ শীর্ষক কাজটি মুক্তিযুদ্ধ ও উপন্যাস বিষয়ক গবেষণা ধারায় একটি উল্লেখযোগ্য সংযোজন।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৫২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৯, ২০১৮
এমপি / জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।