‘অনলাইন ও সোশ্যাল মিডিয়া কি আমাদের সাহিত্যকে গ্রাস করছে’- শীর্ষক আলোচনা সভার অন্যতম বক্তা কবি-ভ্রমণ লেখক মাহমুদ হাফিজ অনলাইন মিডিয়া ও বাংলানিউজের প্রসঙ্গ তুলে ধরেন।
অনুষ্ঠানে সভামুখ্য ছিলেন প্রবীণ কবি ও বৃক্ষসখা কমল চক্রবর্তী।
অনুষ্ঠান উপস্থাপনায় ছিলেন কবি আশীষ মিশ্র। সমাপনী আলোচনায় অংশ নেন উৎসব পৃষ্ঠপোষক ড. লক্ষণ শেঠ।
কবি নিতাই জানা প্রিন্ট ও ভার্চুয়াল মিডিয়ার সাহিত্য চর্চা প্রশ্নে সোশ্যাল মিডিয়ার বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে বলেন, সোশ্যাল মিডিয়া বিশেষ করে ফেসবুকে অশুদ্ধ কবিতা পড়তে আমি ক্লান্ত। ইলেকট্রনিক মিডিয়া আজ পর্যন্ত জয়ী হতে পারেনি। এগুলো আসলে বুদবুদ। এ দেখে আমাদের ভয়ের কিছু নেই।
কবি সুজিত সরকার বলেন, ফেসবুকে আমি অভ্যস্ত নই। ফেসবুক বা অনলাইন সাহিত্যচর্চায় কোনো সম্পাদনা বা অনুশীলন চোখে পড়ে না। সম্পাদনা ছাড়া কোনো জিনিস প্রকাশ হয়ে যাবে এটা মেনে নেওয়া কঠিন।
কবি মাহমুদ হাফিজ অনলাইন ও সোশ্যাল মিডিয়াকে পুরো সমর্থন করে বলেন, সময় দ্রুত বিবর্তিত হচ্ছে। চারদিকে সবকিছু বদলে যাচ্ছে। নতুন জীবনের দাবিতে ফেসবুক, টুইটার, ইউটিউব চালু হয়েছে। আজ মানুষ তার সৃষ্টিশীলতা ও সংবাদকে মুহূর্তে বিশ্ববাসীর কাছে পৌঁছে দিচ্ছে। অনলাইনযুগের ইতিবাচকতাকে আমাদের বরণ করে নিতে হবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে প্রিন্ট মিডিয়ার চেয়ে বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর ডটকমের মতো অনলাইন মিডিয়া মানুষের নাগালে পৌঁছে দেওয়ার বিবেচনায় অনেক বেশি এগিয়ে। প্রিন্ট মিডিয়া যেখানে লাখের অঙ্কে, অনলাইন সেখানে অর্ধকোটি বা কোটির ঘরে।
মাহমুদ হাফিজ বলেন, ইউরোপীয় শিল্প বিপ্লবের ঢেউ দেব নির্ভর ভারতীয় জীবনে প্রবেশের পর স্বাভাবিকভাবে বাজারমুখী সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে। এই সংস্কৃতির দাবি পূরণে অনলাইন দ্রুতই বিকশিত হচ্ছে। অনলাইন মিডিয়া ও এর চর্চাকে অস্বীকার না করে একে নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে, এর মধ্য দিয়ে বেরিয়ে আসবে মানসম্মত সাহিত্য। তিনি ই-বুক পাঠ করার যন্ত্র ‘কিন্ডেল’ দেখিয়ে বলেন, নিউইয়র্ক লাইব্রেরির মতো একটি লাইব্রেরি পকেটে ভরে নিয়ে মানুষ চলাফেরা করতে পারছে। তাই এ থেকে মুখ ফেরানোর কোনো জো নেই।
নাগপুরের কবি সুকুমার চৌধুরী বলেন, অনলাইন মিডিয়ার কারণে আমাদের গন্তব্য এখন ন্যাশনাল লাইব্রেরি নয়, গুগল। এন্টার মারলেই সবকিছু রেডিমেড পাওয়া যাচ্ছে। তরুণদের হাতে এখন বই নয়, অনলাইনের মায়াময় জগৎ।
পশ্চিমবঙ্গের কবি লেখক আয়েশা খাতুন বলেন, ফেসবুক বা অনলাইন বিশ্ব বোরাখের মতো, যাতে চড়ে নবীজী মুহূর্তে মেরাজে গিয়েছিলেন। তাই অনলাইন দুনিয়াকে স্বাগতম। তবে ফেসবুক বড় একা করে দেয়। এটা ফেস-টু-ফেস নয়। ভালো লেখকরা চটকদারি জায়গায় পৌঁছাতে পারেন না। এটা একটা বিস্তারিত অনন্ত আকাশ। তবে ফেসবুক তখনই চলবে যখন বিদ্যুৎ থাকবে।
কবি শাহীন রিজভী বলেন, সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ’র লালসালুতে ছিলো ‘শস্যের চেয়ে আগাছা বেশি, ধর্মের চেয়ে টুপি’। প্রকৃত সাহিত্যকে কেউ দমিয়ে রাখতে পারেনি। প্রকৃত সাহিত্যের জন্য অবদান রেখে যাচ্ছেন তিনি একসময় আসবেনই।
কবি উর্মিলা বলেন, আমার বয়স অনেক। আমার কাছাকাছি বয়সের কেউ ঢুকেছে বলে মনে হয় না। আমরা দু’টো যুগই দেখছি, তবে এখন দেখা যাচ্ছে প্রথম প্রেমানুভূতিটাও প্রকাশ হয়ে যাচ্ছে ফেসবুকে, সেটাও প্রকাশ হয়ে যাচ্ছে। লাইক সংস্কৃতিটার কারণে সহজলভ্য যশাকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়েছে। তবে যোগসূত্রের দিক থেকে অনেক সুফলও হয়।
কবি আশীষ মিশ্র বলেন, ফেসবুকে আমিও কবিতা প্রকাশ করি, তবে ভালোগুলোই করি। এখানেও প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করার সুযোগ আছে এবং অগ্রজ কবিদের অনেকে সমালোচনা করে কবিতাটিকে সুন্দর করার পরামর্শ করেন। বেশিরভাগ বন্ধুরা লাইক বা কমেন্ট, বাহ সুন্দর লিখে ছেড়ে দেন।
তিনি ফেসবুক কবিতায় গঠনমূলক সমালোচনা হতে পারে বলে মন্তব্য করেন।
প্রাণবিতর্কের পর উৎসব পৃষ্ঠপোষক ড. লক্ষণ শেঠ বিশেষ আলোচনায় বলেন, আমরা বিজ্ঞান প্রযুক্তির জয়যাত্রাকে রুখতে পারবো না। মানুষই এর স্রষ্টা। তথ্য প্রযুক্তি আজ দ্রুত বিকশিত হয়েছে। এখন গবেষণা হচ্ছে অপটিক্যাল কম্পিউটিং নিয়ে। এটি সফল হলে কম্পিউটারের গতি আলোর গতির চেয়ে বেড়ে যাচ্ছে। তখন বিশ্বের অনেক সত্য দ্রুত জানতে পারবো। তাতে সাহিত্য সমৃদ্ধই হওয়ার কথা। অতএব অনলাইন মিডিয়ার জন্য আতঙ্কের কিছু নেই।
বাংলাদেশ সময়: ২২৪০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩১, ২০১৮
জেডএস