ঢাকা, রবিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

হুমায়ুন আজাদ ছিলেন প্রথাবিরোধী ও বহুমাত্রিক মননশীল লেখক

ফিচার রিপোর্টার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮০৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ৩০, ২০১৯
হুমায়ুন আজাদ ছিলেন প্রথাবিরোধী ও বহুমাত্রিক মননশীল লেখক

ঢাকা: 'হুমায়ুন আজাদ ছিলেন একজন প্রথাবিরোধী ও বহুমাত্রিক মননশীল লেখক। তিনি কবিতা লেখার শুরু করেন ষাটের দশকের শেষের দিক থেকে। প্রথম বইতেই তার পাকা হাতের স্বাক্ষর লক্ষ্য করা যায়।' লেখক হুমায়ুন আজাদকে নিয়ে বলতে গিয়ে এমনটাই বলছিলেন বিশিষ্ট গবেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখর।

রবিবার (২৯ এপ্রিল) সন্ধ্যায় বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে আয়োজন করে 'বহুমাত্রিক হুমায়ুন আজাদ ও তাঁর কবিতা' শীর্ষক সেমিনার। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন ড. সৌমিত্র শেখর।

আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কবিকন্যা মৌলি আজাদ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণসংযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক রুবাইয়াৎ ফেরদৌস। সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সভাপতি শিল্পী হাশেম খান। স্বাগত বক্তব্য দেন জাদুঘরের মহাপরিচালক মো. রিয়াজ আহমেদ।

মূল প্রবন্ধে ড. সৌমিত্র শেখর বলেন, হুমায়ুন আজাদের প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ৬০টির বেশি। তিনি নবম শ্রেণীতে পড়াকালীন সময়ই কবিতাচর্চা শুরু করেন। তার প্রথম লেখা ছাপা হয়েছিল দৈনিক ইত্তেফাকের শিশুপাতা কচিকাঁচার আসরে। ১৯৯২ সালে নারীবাদী গবেষণামূলক গ্রন্থ 'নারী' প্রকাশ করে গোটা দেশে সাড়া তোলেন। যদিও বইটি ১৯৯৫ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে নিষিদ্ধ ছিল। এ গ্রন্থ তার বহুল আলোচিত গবেষণামূলক কাজ হিসেবেও স্বীকৃত। জীবনের শেষার্ধে অকুতোভয়ে ধর্মনিরপেক্ষতা, সামরিক শাসনের বিরোধিতা, নারীবাদী বক্তব্য এবং একই সঙ্গে নিঃসংকোচ যৌনবাদিতার জন্য তিনি ব্যাপক পাঠকগোষ্ঠীর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছিলেন।

হুমায়ুন আজাদের কন্যা মৌলি আজাদ স্মৃতিচারণ করেন বাবার সাথে কাটানো সময়গুলো নিয়ে। তিনি বলেন, আমার বাবা ছিলেন অনেক দায়িত্বশীল একজন মানুষ। সবসময় যুক্তি দিয়ে কথা বলতেন। বাবার মতো সাহসী ও ঠোঁটকাটা মানুষ আমি দ্বিতীয়টি দেখিনি। তিনি যা বলতেন সম্মুখে বলতেন, উচিত কথা বলতেন। বাবা বই পড়তে খুব ভালোবাসতেন। অসংখ্য কবিতার বই ছিল বাবার সংগ্রহে। বাবার কবিতার মধ্যেই বাবাকে এখনও আমি খুঁজে পায়।

অধ্যাপক রুবাইয়াৎ ফেরদৌস বলেন, হুমায়ুন আজাদ বাঙালি জাতিসত্তার উন্মেষ এবং বাংলা ভাষা ও সাহিত্যকে সম্মানের সিংহাসনে অধিষ্ঠিত করে গেছেন। তিনি বাঙালির সমাজজীবন, প্রকৃতি ও ঐতিহ্যগতভাবে অর্জিত সংস্কৃতি, সাহিত্য আর শিল্পের মাধুর্যকে ছড়িয়ে দিয়েছেন বিশ্বময়। আজও তিনি অমলিন হয়ে আছেন। কবিতা-গল্প-উপন্যাস-প্রবন্ধ-সমালোচনাসহ শিল্পের প্রায় প্রতিটি শাখায় আলো ছড়িয়েছেন তিনি। সেই আলোক কণা জাতির অন্ধকার সময়ে এখনো পথ দেখায়, প্রাণিত করে।

সভাপতির বক্তব্যে শিল্পী হাশেম খান বলেন, কবি ও লেখক হুমায়ুন আজাদ ছিলেন সাহসী ও নির্ভিক কণ্ঠস্বর। তার লেখার ভাষা যেমন ছিল তীক্ষ্ম, সুনির্দিষ্ট এবং সুস্পস্ট, তেমনি তার আলাপচারিতার ভাষা ও ব্যক্তিত্বও ছিল স্বচ্ছ। তিনি বিশ্বাস করতেন মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন ছাড়া দেশ ও মানুষের প্রকৃত উন্নয়ন সম্ভব নয়। এ কারণে আমৃত্যু তিনি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অসাম্প্রদায়িক প্রগতিশীল বাংলাদেশের তৈরির জন্য কাজ করে গেছেন।

বাংলাদেশ সময়: ০৪০৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৯, ২০১৯

এইচএমএস/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।