ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

গ্রাম থিয়েটার সম্মেলন ও সেলিম আল দীন উৎসব শুরু

ফিচার রিপোর্টার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯১৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ১, ২০১৯
গ্রাম থিয়েটার সম্মেলন ও সেলিম আল দীন উৎসব শুরু বক্তব্য রাখছেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: হাজার বছরের ঐতিহ্যে বাংলার নিজস্ব নাট্যধারাকে বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরতে রাজধানীতে শুরু হয়েছে তিন দিনব্যাপী গ্রাম থিয়েটার সম্মেলন ও সেলিম আল দীন উৎসব।

শুক্রবার (১ নভেম্বর) সকালে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার উন্মুক্ত চত্বরে সারাদেশ থেকে আসা শত শত কর্মীদের নিয়ে বেলুন উড়িয়ে বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটার ৮ম জাতীয় সম্মেলনের উদ্বোধন করেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। এসময় মঞ্চকুসুম শিমুল ইউসুফের নেতৃত্বে জাতীয় সঙ্গীত ও দলীয় সঙ্গীত পরিবেশন করেন শিল্পীরা।

জাতীয় সঙ্গীতের সঙ্গে সঙ্গে জাতীয় পতাকা ও গ্রাম থিয়েটারের পতাকা উত্তোলন করেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ ও গ্রাম থিয়েটারের সভাপতি নাসির উদ্দীন ইউসুফ।

উদ্বোধনের পরে আলোচনা পর্ব ও সেলিম আল দীন পদক দেওয়া হয়। নাসির উদ্দীন ইউসুফের সভাপতিত্বে এতে আরও বক্তব্য রাখেন গ্রাম থিয়েটারের সাধারণ সম্পাদক তৌফিক হাসান ময়না, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অধ্যাপক আফসার আহমেদ ও কাজী সাইদ হোসেন দুলাল, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ, সাধারণ সম্পাদক হাসান আরিফ, গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশানের সাধারণ সম্পাদক কামাল বায়েজীদ প্রমুখ। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটারের স্বপ্নদ্রষ্টা সেলিম আল দীনকে স্মরণ করেন বক্তারা।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে কেএম খালিদ বলেন, আবহমান বাঙালি সংস্কৃতির অন্যতম প্রধান উপাদান নাটক। আমাদের জীবনের আনন্দ বেদনা, দ্রোহ-ক্ষোভ-আশা-আকাঙ্ক্ষার স্বার্থক রূপায়নের মধ্য দিয়ে নাটক হয়ে উঠেছে সময়, সমাজ ও জীবনের প্রতিবিম্ব। নাটক সমাজ বদলের হাতিয়ার। চেতনার বহ্নিশিখা প্রজ্জলনে নাট্যকর্মীরা যুগ যুগ ধরনে অতুলনীয় ভূমিকা পালন করে আসছেন। আমাদের মহান ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ৬৯’র গণঅভ্যুথান, ৭১’র মুক্তিযুদ্ধ এবং ৯০’র আন্দোলনে নাট্যকর্মীরা যে ভূমিকা পালন করেছেন তা কালের ক্যানভাসে অমলিন থাকবে আজীবন।

সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ বলেন, শিকড় থেকে দূরে সরে আমরা যখন নিজেদের আধুনিক ভাবতে শুরু করি, তখনই সমস্যা শুরু হয়। বড় হতে হলে শিকড়ের সন্ধান করতেই হবে। এটি ছাড়া কোনো জাতি বড় হতে পারে না। আমাদের শিকড় গ্রাম, গ্রামের সংস্কৃতি। আমরা এগিয়ে যাবো, তবে শিকড় ধরে। তাই, গ্রামীণ সংস্কৃতির চর্চাকে মূল্যায়ন করতে হবে।

সভাপতির বক্তব্যে নাসির উদ্দিন ইউসুফ বলেন, মৌলবাদ ও মানবতাবিরোধী শক্তির অপতৎপরতায় বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি হুমকির মুখে। একই সঙ্গে সামাজিক অনাচার ও দুর্নীতির সংস্কৃতি তরুণ সমাজকে বিপথগামী করছে। একমাত্র মানবিক সংস্কৃতিই পারে আত্মঘাতী মানবজাতি তথা বাংলাদেশকে ভয়াবহ পরিণতি থেকে রক্ষা করতে।

অনুষ্ঠানে সেলিম আল দীন পদক দেওয়া হয় বাংলাদেশ মহিলা সমিতিকে। বাংলাদেশের নাগরিক নাট্যচর্চায় মহিলা সমিতির মঞ্চ গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে। এ মঞ্চে অভিনয় করেই অনেক নাট্যকর্মী সৃষ্টি হযেছে। সুস্থ সংস্কৃতি চর্চায় অবদানের স্বীকৃতি হিসেবেই তাদের এ পদক দেওয়া হয়। সমিতির পক্ষে পদক গ্রহণ করেন সিতারা আহসানুল্লাহ ও তানিয়া বখত।

অনুষ্ঠানে একইসঙ্গে ‘মীর মকসুদ-উস-সালেহীন-বজলুল করিম সম্মাননা’ ও ‘ফওজিয়া ইয়াসমিন শিবলী পদক’ দেওয়া হয়। ‘মীর মকসুদ-উস-সালেহীন-বজলুল করিম সম্মাননা’ পান নাট্যকর্মী আহমেদ ইকবাল হায়দার। ‘ফওজিয়া ইয়াসমিন শিবলী পদক’ পেয়েছেন নাট্যকর্মী রুমা মোদক।

সম্মেলনের উদ্বোধন, আলোচনা ও পদক প্রদান শেষে বিশেষ সাংস্কৃতিক পরিবেশনায় অংশ নেয় বাংলাদেশ নেভি কলেজ। এসময় কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা লোক সঙ্গীত, নৃত্য এবং বাঁশির সুরে সম্মোহনী পরিবেশ সৃষ্টি করেন পুরো নাট্যশালা জুড়ে।

‘হাতের মুঠোয় হাজার বছর আমরা চলেছি সামনে’ প্রতিপাদ্যের এই উৎসব চলবে আগামী রোববার (৩ নভেম্বর) পর্যন্ত। সম্মেলনের পাশাপাশি প্রতিদিন সন্ধ্যায় জাতীয় নাট্যশালায় বিভিন্ন নাটক মঞ্চস্থ হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৫১৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ০১, ২০১৯
এইচএমএস/একে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।