ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

হাসিনা, আ ডটারস টেল: হার না মানার গল্প

হোসাইন মোহাম্মদ সাগর, ফিচার রিপোর্টার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫৩৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ৯, ২০১৯
হাসিনা, আ ডটারস টেল: হার না মানার গল্প ডকুফিল্ম ‘হাসিনা: আ ডটারস টেল’ নিয়ে আলোচনা/ছবি: শাকিল

ঢাকা: দু'দিন পরেই মুক্তির বর্ষপূর্তি আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে নির্মিত ডকুফিল্ম ‘হাসিনা: আ ডটারস টেল’ এর। তবে তার আগেই ঢাকা আন্তর্জাতিক সাহিত্য উৎসবের মঞ্চে যেন হয়ে গেল সেই বর্ষপূর্তির প্রিমিয়ার শো।

শুক্রবার (৮ নভেম্বর) সন্ধ্যায় বাংলা একাডেমির আব্দুল করিম সাহিত্য বিশারদ মিলনায়তনে দর্শকদের দেখানো হয় এ প্রামাণ্যচিত্রটি। প্রদর্শন শেষে চলচ্চিত্রটি নিয়ে হয় আলোচনাও।

এতে অংশ নেন প্রযোজক রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক, পরিচালক পিপলু খান এবং সংগীত পরিচালক দেবজ্যোতি মিশ্র। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন কলকাতার সিগাল বুকসের চিফ এডিটর আনজুম কাটিয়াল।

আবেগী ও হৃদয় স্পর্শ করা ৭০ মিনিটের ডকুফিল্মে ইতিহাসের অভূতপূর্ব উপস্থাপনায় ফুটে উঠেছে হাসিনা: এ ডটারস টেল। উঠে এসেছে নানা ঘাত-প্রতিঘাত পেরিয়ে একজন শেখ হাসিনার গল্প; যেখান থেকে তার জীবনের নানা অজানা বিষয় জানতে পারবে নতুন প্রজন্ম। এক কথায় টুঙ্গীপাড়ার প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে ঢাকায় আসা এবং প্রধানমন্ত্রী নয়, একজন 'সাধারণ' নারীর 'অসাধারণ' হয়ে ওঠার বাস্তব গল্পই যেন দেখানো হয়েছে এ ফিল্মটিতে।

ছবির শুরুতেই দেখা যায় ব্যক্তি জীবনের শেখ হাসিনাকে, যেখানে তিনি পরিবারের সবার জন্য রান্না করছেন এবং একই সঙ্গে নাতি-নাতনিদের রান্না শেখাচ্ছেনও। আর এই রান্নাঘরের সূত্র ধরেই তিনি স্মৃতিচারণ করেন তার মায়ের হাতের রান্না ও খাবারের প্রতি বাবার ভালোবাসা নিয়ে। বলেন, মা অনেক সুন্দর রান্না করতে পারতেন। আর বাবা ভালোবাসতেন মুরগির মাংস, গরুর মাংস, রেজালা।

শুধু শেখ হাসিনা নয়, এই ডকুফিল্মে কথা বলেছেন ছোটবোন শেখ রেহানাও। দুই বোনের ব্যক্তিজীবনের নানা গল্প ঠাঁই পেয়েছে এই ৭০ মিনিটের গল্পে।

ছবিতে দুই বোনের ছোটবেলার স্মৃতি নিয়ে মজা করে শেখ রেহানা বলেন, ও (শেখ হাসিনা) তো ছোটবেলায় ভীষণ অলস ছিল। একটা ঘরের ভেতরই সব। এখন তো কত কাজ, অথচ ছোটবেলায় এতটা অলস ছিল যে ওর ঘরের নাম রাখা হয়েছিল 'আলসেখানা'!

এছাড়া ছবির এক পর্যায়ে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছার প্রতি বঙ্গবন্ধুর ভালোবাসা নিয়ে তিনি জানান, বাবা আমাদের মাকে যে কতটা শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসতেন, তা তার লেখা ও চিঠিগুলো থেকে বোঝা যায়।

১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ রাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ঢাকায় ক্র্যাকডাউন শুরু করার সময় গ্রেফতার করে শেখ মুজিবুর রহমানকে। কীভাবে গ্রেফতার করা হয়েছিল, সেটি পরে এক সাংবাদিককে জানান বঙ্গবন্ধু। প্রামাণ্যচিত্রটির এক পর্যায়ে স্থান পেয়েছে বঙ্গবন্ধুর সে বিবৃতিও। তিনি সেখানেও বর্ণনা করে জানান তার স্ত্রী ও সন্তানদের প্রতি ভালোবাসার কথা।

শেখ হাসিনা বর্ণনা করেন টুঙ্গীপাড়া থেকে ঢাকায় আসার গল্প। টুঙ্গীপাড়া নিয়ে বলেন, টুঙ্গীপাড়ায় গেলে মনে হয় আমি যেন পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর জায়গাটিতে এসেছি। এই শেকড় কখনও ভোলা যাবে না।

এই প্রামাণ্যচিত্রে যেমন দেখা যাবে শেখ হাসিনা তার ছোট্ট নাতিকে কোলে নিয়ে বসে আছেন, তেমনি দেখা যাবে আনন্দ নিয়ে ব্যাডমিন্টন খেলছেন পরিবাবের সঙ্গে। আবার শাড়ির আঁচলে চোখ মুছছেন বাবার ছবির কাছে, ধানমন্ডির বাড়িতে এসে, সমস্ত স্মৃতি বুকে লালন করে।

১৫ আগস্টের নির্মম হত্যাকাণ্ডের পর দেশে ফিরতে পারেননি তারা। দীর্ঘদিন থাকতে হয়েছে ভারতে। সে সময় পরিবর্তন করতে হয়েছিল নিজেদের নামও। দেশে ফিরে শেখ রেহানা বিয়ে করে লন্ডনে চলে যাওয়ার পর তিনি কাজ করেছেন সারা দেশ ঘুরে ঘুরে। এরপর ছেলেমেয়েকেও পাঠাতে হয়েছে হোস্টেলে। চোখের সামনে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন যেমন দেখেছেন, হামলার শিকার হয়েছেন, তেমনি মিস করেছেন নিজের সবচেয়ে কাছের মানুষগুলোকেও। তবুও হার মানেননি। আর এই হার না মানার গল্পই যেন ‘হাসিনা: অ্যা ডটারস টেল’। ছবির প্রদর্শনী শেষে এমনটাই মন্তব্য ছিল হলভর্তি দর্শকদের।

এদিকে প্রদর্শনী শেষে চলচ্চিত্রটি নিয়ে আলোচনায় কথা বলেন প্রযোজক রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক, পরিচালক পিপলু খান এবং সংগীত পরিচালক দেবজ্যোতি মিশ্র।

এসময় প্রযোজক রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক বলেন, কাজটা আমরা যখন শুরু করি, তখন ভাবছিলাম আসলেই সবকিছু ঠিকঠাক মতো করতে পারবো তো! এরপর কাজটা খুব সহজ ছিল না। কেননা একটি গল্প হলেও এতে আছে হাজারো গল্প। ফুটিয়ে তুলতে হয়েছে সেগুলো সবই। তারচেয়েও বড় কথা, এটি কোনো গল্প নয়, একটি ইতিহাস।

পরিচালক পিপলু খান বলেন, এই ডকুফিল্মে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনাকে উপস্থাপন করা হয়নি, এসবের বাইরেও যে তিনি একজন সাধারণ মানুষ, বঙ্গবন্ধুকন্যা, সেটিকেই সবার সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে। এ কারণে শেখ হাসিনার চারপাশের মানুষগুলোও সিনেমাটিতে রয়েছেন চরিত্র হিসেবে।

কাজের সর্বোচ্চ স্বাধীনতা পেয়েছেন উল্লেখ করে পিপলু খান বলেন, একটি কনসেপ্ট ও কিছু সংগীতকে সঙ্গী করেই কাজটা শুরু করি। শেখ হাসিনাকে আমি যেভাবে দেখাতে চাই, সেভাবেই কাজটা করেছি। কোনো নিয়মনীতির ছক তৈরি করে দেননি তিনি। যেহেতু শেখ হাসিনা একজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, সে কারণে ইতিহাসের নানা ঘটনা, রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট, ক্ষমতার পালাবদল, ব্যক্তি ও রাজনৈতিক জীবনের নানা অভিজ্ঞতা এবং দেশের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে তার দৃষ্টিভঙ্গিসহ প্রতিটি বিষয়ে গবেষণা করেই কাজটি করা হয়েছে।

সংগীত পরিচালক দেবজ্যোতি মিশ্র বলেন, বাংলাদেশে এরকম গবেষণাধর্মী মুভি এর আগে হয়েছে কিনা আমার জানা নেই। এই ছবিটির পেছনে আমরা প্রায় পাঁচবছর কাজ করেছি, যায় অধিকাংশ সময়ই গেছে গবেষণায়। এছাড়া এই ছবিতে গানের একটা আলাদা গুরুত্ব রয়েছে। তাই সেটিকেও ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করা হয়েছে একটু ভিন্ন আঙ্গিকে সাধারণ মানুষের খুব কাছের করে।

বঙ্গবন্ধুর প্রিয় 'আমার সাধ না মিটিলো আশা না ফুরিলো' গানটিকে বাউলগানের সুরে তুলে ধরা হয়েছে। একই সঙ্গে উঠে এসেছে ইতিহাস। আর সেই ইতিহাসকে যে ভোলা যায় না, তাই যেন এই সংগীত পরিচলক মনে করিয়ে দিলেন আরও একবার। আয়োজনের শেষে গেয়ে উঠলেন- 'পুরানো সেই দিনের কথা ভুলবি কি রে হায়, ও সেই চোখে দেখা, প্রাণের কথা, সে কি ভোলা যায়'!

বাংলাদেশ সময়: ০৩০ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৮, ২০১৯
এইচএমএস/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।