মারজুক রাসেলের ‘মারমার কাটকাট’ এই বইয়ের নাম ‘দেহবণ্টনবিষয়ক দ্বিপক্ষীয় চুক্তি স্বাক্ষর’। কবির নির্বাচিত কবিতার বই এটি।
প্রকাশক সূত্রে জানা যায়, গত ৩ ফেব্রুয়ারি বইটি মেলায় আনে তারা, এরই মাঝে এর নবম মুদ্রণ শেষ হয়েছে, অর্থাৎ এখন পর্যন্ত এ বই বিক্রি হয়েছে ৯ হাজার কপি। বর্তমানে স্টলে কোনো বই নেই। তবে শুক্রবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) স্টলে দশম মুদ্রণ আসবে বলে জানিয়েছে বায়ান্ন।
বায়ান্নর প্রকাশক ফকির তানভির আহমেদ বলেন, শুক্রবার দুপুরের মধ্যে দেহবণ্টনবিষয়ক দ্বিপক্ষীয় চুক্তি স্বাক্ষর বইটির দশম মুদ্রণ মেলায় আনা হবে। আজ মারজুক রাসেলও ভক্তদের জন্য মেলায় আসবেন বলে জানিয়েছেন। আমরা ৩ তারিখে বইটি মেলায় আনি। এ পর্যন্ত এ বই কম-বেশি ৯ হাজার কপি বিক্রি হয়েছে। তার মধ্যে অনেক সময়ই সরবরাহ না থাকায় বই নিতে এসে পাঠকেরা খালি হাতে ফিরে গেছেন। সরবরাহ থাকলে এই সময়ের মধ্যেই আরও বেশি বিক্রি হতো। আমরা আসলে পাঠকের চাহিদা অনুসারে যোগান দিতে পারছি না।
দেহবণ্টনবিষয়ক দ্বিপক্ষীয় চুক্তি স্বাক্ষর বইয়ের প্রচ্ছদ করেছেন রাজীব দত্ত। মেলার জন্য বইটির মূল্য ১৫০ টাকা। অমর একুশে গ্রন্থমেলায় বায়ান্নর ৩৬৩ নম্বর স্টলে মিলছে বহুল প্রত্যাশিত এ বই।
এদিকে শুধু দেহবণ্টনবিষয়ক দ্বিপক্ষীয় চুক্তি স্বাক্ষর বইটিই নয় মারজুক রাসেলের আরেক কবিতার বই ‘চাঁদের বুড়ির বয়স যখন ষোলো ’র নতুন সংস্করণও প্রকাশ পেয়েছে এ মেলায়।
এ বইটি প্রকাশ করেছে হাওলাদার প্রকাশনী। এ বইয়েরও প্রচুর কাটতি রয়েছে মেলায়। ‘চাঁদের বুড়ির বয়স যখন ষোলো’ বইটি সংগ্রহ করতে গিয়েও না পেয়ে একইভাবে হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন মারজুকের অনেক ভক্ত-অনুরাগী-পাঠক। মেলা চলাকালে ৫ ফেব্রুয়ারি বইটির পরিমার্জিত দ্বিতীয় মুদ্রণ প্রকাশ পায়। আর ব্যাপক চাহিদার মধ্যে এরই মাঝে এ বইয়ের তৃতীয় মুদ্রণ প্রকাশ করতে হয়েছে প্রকাশককে।
হাওলাদার প্রকাশনীর মোহাম্মদ মাকসুদ বলেন, আমরা ‘চাঁদের বুড়ির বয়স যখন ষোলো’ বইটির দ্বিতীয় মুদ্রণ মেলায় আনি ৫ ফেব্রুয়ারি। এক সপ্তাহের মধ্যে ১ হাজার কপি বিক্রি হয়ে গেছে। আমরা সেভাবে প্রস্তুত ছিলাম না, ফলে স্বীকার করতে হয়, চাহিদা অনুসারে বইয়ের যোগান দিতে পারিনি। গতকাল বৃহস্পতিবার বই দিতে পারিনি অনেককেই। পরে বইটির তৃতীয় মুদ্রণে ২ হাজার কপি বই ছাপা হয়েছে। আজ বই পাওয়া যাবে।
‘মারজুক ভাইয়ের কবিতার বই সুন্দর। প্রচুর চাহিদা। পাঠকরা লাইন ধরে বই কিনছেন, আজকে উনি স্টলে বসবেন। গতকালকালকে বই ছিল না। ’
‘চাঁদের বুড়ির বয়স যখন ষোলো’ বইটির প্রচ্ছদশিল্পী ধ্রুব এষ। বইয়ের গায়ের দাম ২০০ টাকা। মেলায় হাওলাদার প্রকাশনীর ৫৯৩, ৫৯৪, ৫৯৫ নম্বর স্টলে মিলছে এ বই।
এদিকে কবিতার বইয়ের এমন বিপুল চাহিদার ব্যাপারে জানতে চাইলে মারজুক রাসেলকে কিছুটা বিব্রতই দেখায়। তিনি জানান, এক সময় আমার এসব কবিতার বই বের করার জন্য প্রকাশকদের তেমন একটা আগ্রহ ছিল না। তারা এমনভাবে বই বের করতো যেন করুণা করতেছে। কিন্তু, এখন তারা যোগাযোগ করতেছে আবারও বইগুলা বের করার জন্য। আমি বলছি, আগে কাগজপত্র আনেন। লেখকের সম্মানীর ব্যাপারগুলা দেখেন। কবি তো একটা বড় ব্যাপার। মিডিয়া, ফেসবুকে অনেক কারণেই আমি লাউড থাকি। কিন্তু কবিতার ব্যাপারটাতো আলাদা।
এ প্রসঙ্গে মারজুক রাসেল আরও জানান, বিগত কিছুদিনে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ থেকেও বেশ কয়েক প্রকাশক বই বের করার জন্য তার সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন, কিন্তু তিনি বাংলাদেশ থেকেই বই প্রকাশের ব্যাপারে আগ্রহী। ফলে তাঁদের না করেছেন। তবে তারা চাইলে তারা বইয়ের পরিবেশক হতে পারে বলে জানিয়েছেন তিনি।
গত ৭ ফেব্রুয়ারি মেলায় গিয়েছিলেন বলেও জানান তিনি। সে সময় ভক্ত-অনুরাগীদের প্রচুর ভিড় তাকে সামাল দিতে হয়েছে। পরে কোনো মতে পালিয়ে বেঁচেছেন তিনি। তবে ১৪ ফেব্রুয়ারি আবারও মেলায় যেতে পারেন বলে জানান মারজুক।
মারজুক বলেন, সেদিন (৭ ফেব্রুয়ারি) মেলায় গেলাম, তো স্বাভাবিক একটু ভিড়ভাট্টা হইছে, আশপাশের স্টলগুলা মনে হইলো আপত্তি করল অতো ভিড় দেইখা।
বায়ান্ন প্রকাশক সূত্রেও একই কথা জানা যায়, এর আগে গত ৭ ফেব্রুয়ারি (শুক্রবার) সন্ধ্যা ৬টার দিকে বইমেলায় বায়ান্ন’র স্টলে যান মারজুক রাসেল। মারজুক প্রবেশ করার পর স্টলের চারপাশে দেহবণ্টনবিষয়ক দ্বিপক্ষীয় চুক্তি স্বাক্ষর বইটি কেনার জন্য ধুম লেগে যায়। এতোটাই ভিড় তৈরি হয় যে, আশপাশের প্রকাশকরা রীতিমত আপত্তি জানায় মারজুক রাসেল যেন এভাবে মেলায় না যান। তাতে তাদের বিক্রিবাট্টায় ভাটা পড়ে।
বায়ান্ন’র সূত্রে জানা যায়, ওইদিন মারজুক রাসেল মেলায় প্রবেশের ১ ঘণ্টার মধ্যে স্টলে থাকা সব কবিতার বই শেষ হয়ে গেছে।
এর আগে মারজুক রাসেলের বের হওয়া কবিতার বইগুলো হলো- শান্টিং ছাড়া সংযোগ নিষিদ্ধ (২০০০), চাঁদের বুড়ির বয়স যখন ষোলো (২০০১), বাইজিবাড়ি রোড (২০০২) ও ছোট্ট কোথায় টেনিসবল (২০০৫)। এসব বই থেকেই নির্বাচিত কবিতা ঠাঁই পেয়েছে দেহবণ্টনবিষয়ক দ্বিপক্ষীয় চুক্তি স্বাক্ষর বইয়ে।
এ বইয়ের ভূমিকায় প্রকাশকদের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে মারজুক লিখেছেন- ‘অ’ থিকা শুরু কইরা স্বরবর্ণের সবাইরে কইলাম, ‘শান্টিং ছাড়া সংযোগ নিষিদ্ধ’, ‘চাঁদের বুড়ির বয়স যখন ষোলো’,‘বাইজিবাড়ি রোড’,‘ছোট্ট কোথায় টেনিসবল’―২০০০, ২০০১, ২০০২, ২০০৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত আমার ৪টা বই থিকা ৪ ফর্মার একটা বইয়ের কবিতা বাইছা দিতে―কেউ রাজি হইলো না। ...
পরে গেলাম ব্যাঞ্জনবর্ণদের কাছে, ‘ক’ রাজি হইলো না,‘খ’-ও। ‘গ’ কইলো, ‘দিতে পারি, ডেটলাইন দেয়া যাবে না, একদিনেও কইরা দিতে পারি, আবার এক সপ্তাহেও হইতে পারে, একমাসের কমবেশিও লাগাইতে পারি। ’ আমি মহা-আনন্দে ‘ঠিক আছে’ কইয়া বই ৪টা দিয়া হাওয়া হইয়া থাকলাম।
...‘গ’ একমাসই লাগাইলো। এইভাবেই হইল ‘গ’ নির্বাচিত কবিতার বই ‘দেহবণ্টনবিষয়ক দ্বিপক্ষীয় চুক্তি স্বাক্ষর’। যারা লেখাগুলা বা কোনো-কোনো লেখা নানানভাবে আগে পড়ছেন, কিন্তু মনে আছে/মনে নাই―তাদের জন্য ‘নির্বাচিত’ হিসাবে বইটা নতুন, আর যারা কোনোদিনও পড়েন নাই, তাদের জন্য তো নতুনই। আমার জন্য চিরনতুন।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৩৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০২০
এইচজে