সোমবার (২৫ মে) সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত বিটিভিসহ বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলে নজরুল জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে নির্মিত বিশেষ অনুষ্ঠান ‘জাগো অমৃত পিয়াসী’ সম্প্রচারের মাধ্যমে দিনটি উদযাপন করা হয়।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই কাজী নজরুল ইসলামের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর বাণী সম্প্রচার করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাণীতে বলেছেন, বিদ্রোহী কবির জীবনাদর্শ অনুসরণ করে একটি অসাম্প্রদায়িক, বৈষম্যহীন, শান্তিপূর্ণ, সুখী-সমৃদ্ধ ও আধুনিক বাংলাদেশ বিনির্মাণে আমাদের সকলের সম্মিলিত প্রয়াস অব্যাহত রাখতে হবে।
বাণীতে তিনি আরও বলেন, নজরুল যে অসাম্প্রদায়িক, বৈষম্যহীন, শোষণমুক্ত ও শান্তিপূর্ণ সমাজ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখতেন তারই প্রতিফলন আমরা পাই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের সংগ্রাম ও কর্মে।
শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উদ্যোগে নজরুলকে ১৯৭২ সালে বাংলাদেশে আনা হয়। পরে তাকে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব প্রদান এবং বাংলাদেশের জাতীয় কবির মর্যাদা দেওয়া হয়।
তিনি বলেন, অসামান্য ও বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী কবি নজরুলের আজীবন সাধনা ছিল সমাজের শোষিত ও নিপীড়িত মানুষের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক মুক্তি এবং মানুষের সামাজিক মর্যাদার স্বীকৃতি অর্জন। তার সাহিত্যকর্মে উচ্চারিত হয়েছে পরাধীনতা, সাম্প্রদায়িকতা ও সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী সংগ্রামের বাণী।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, নজরুলের ক্ষুরধার লেখনি যেমন ব্রিটিশ শাসনের ভিত কাঁপিয়ে দিয়েছিলো, তেমনি তাঁর বাণী ও সুরের অমিয় ঝর্ণাধারা সিঞ্চিত করেছে বাঙালির হৃদয়কে। ‘বিদ্রোহী’ কবিতায় কবির বলিষ্ঠ উচ্চারণ, ‘মম এক হাতে বাঁকা বাঁশের বাঁশরি, আর হাতে রণ-তূর্য’।
নজরুল প্রকৃতই প্রেমের এবং অসাম্প্রদায়িক চেতনার কবি উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, তিনি ধর্ম-বর্ণের ঊর্ধ্বে মানবতার জয়গান গেয়েছেন, নারীর অধিকারকে করেছেন সমুন্নত। তিনিই প্রথম বাঙালি কবি যিনি ব্রিটিশ অধীনতা থেকে ভারতবর্ষকে মুক্ত করার জন্য স্বরাজের পরিবর্তে পরিপূর্ণ স্বাধীনতার উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছিলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, নজরুল সকল জাতি ধর্ম ও সামাজিক বৈষম্যের বিরুদ্ধে ছিলেন সাহসের প্রতীক। কবি নজরুল তার প্রত্যয়ী ও বলিষ্ঠ লেখনীর মাধ্যমে এদেশের মানুষকে মুক্তি সংগ্রামে অনুপ্রাণিত ও উদ্দীপ্ত করেছিলেন। তার সাহিত্যের বিচিত্রমুখী সৃষ্টিশীলতা আমাদের জাতীয় জীবনে এখনো প্রাসঙ্গিক।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও জাতীয় কবির জীবনাদর্শ একই দর্শনের ধারাবাহিক রূপ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কবি নজরুলের সাহিত্য ও সংগীত শোষণ, বঞ্চনা ও ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে মুক্তির দীক্ষাস্বরূপ।
মহান মানবতাবাদী কবি নজরুলের সংগ্রামশীল জীবন এবং তার অবিনাশী রচনাবলী জাতির জন্য অন্তহীন প্রেরণার উৎস এবং জাতীয় জাগরণের অন্যতম পথিকৃৎ। কবি নজরুল শুধু একজন কবি, সাহিত্যিক বা সংগীতজ্ঞই নন, বাঙালি জাতির মুক্তি-সংগ্রামের অকুতোভয় সৈনিক বলেও উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা।
এরপর সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ এমপি ও সাংস্কৃতিক সচিব ড. মো. আবু হেনা মোস্তফা কামাল এনডিসি কাজী নজরুলের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে শুভেচ্ছা বাণী দেন।
কবি মুহম্মদ নুরুল হুদার উপস্থাপনায় নজরুল ইনস্টিটিউটের শিল্পীরা অনুষ্ঠানে নৃত্য পরিবেশন করেন। সাদিয়া আফরিন মল্লিকের নির্দেশনায় জাগো অমৃত পিয়াসী নজরুল সংগীত গেয়ে শোনান শিল্পীরা। এছাড়া চির নমো নমো বাংলাদেশ মম আবৃত্তি করেন হাসান আরিফ।
উঠাইয়ে চাষী জগৎবাসী একক সঙ্গীত পরিবেশন করেন নজরুল গীতি শিল্পী খায়রুল আনাম শাকিল।
অনুষ্ঠানে খিলখিল কাজী ও কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারপারসন জাতীয় অধ্যাপক প্রফেসর রফিকুল ইসলামও শুভেচ্ছা বাণী দেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৫২ ঘণ্টা, মে ২৫, ২০২০
এসএমএকে/এইচএডি