ঢাকা, রবিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

‘অথচ কী বিপুল এক সমৃদ্ধ ভাণ্ডার ওখানে’

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৫৪ ঘণ্টা, জুন ১৬, ২০২০
‘অথচ কী বিপুল এক সমৃদ্ধ ভাণ্ডার ওখানে’

ভারতের উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাদেশের সাহিত্য নিয়ে পূর্ণাঙ্গ ৬টি কোর্স চালু করা হয়েছে। আর সে কোর্সগুলোর পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে বাংলাদেশের কবি সাহিত্যকদেরই পূর্ণাঙ্গ বই।

এর আগে পশ্চিমবঙ্গের কয়েকটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচিতে বিচ্ছিন্নভাবে বাংলাদেশের সাহিত্যিকদের লেখা অন্তর্ভূক্ত করা হলেও এবারই প্রথম এভাবে পূর্ণাঙ্গ কোর্স চালু করা হলো।

দুই বাংলার সাহিত্য জগতে এই যুগান্তকারী উদ্যোগ বাস্তবায়নের নেপথ্যে যিনি কাজ করেছেন, তিনি হলেন বিশ্ববিদ্যালয়টির বাংলা বিভাগের প্রধান কবি অধ্যাপক ড. নিখিলেশ রায়।

 

বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজের বিভাগে এ ধরনের উদ্যোগ নেওয়ার বিষয়ে তিনি বাংলানিউজের সঙ্গে কথা বলেছেন।  

তিনি বলেছেন, বাংলাদেশের সাহিত্য বাংলা সাহিত্যের এক বিপুল ভাণ্ডার। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের পাঠক কিংবা বাংলা সাহিত্যের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সে বিষয়ে আগ্রহ নেই। বাংলাদেশের সাহিত্য না পড়লে বাংলা সাহিত্যকে পরিপূর্ণভাবে জানা সম্ভব নয়।  

বাংলানিউজের পাঠকদের জন্য আলাপের গুরুত্বপূর্ণ অংশ তুলে ধরা হলো- 

বাংলানিউজ: বাংলাদেশের সাহিত্য ভাণ্ডার প্রায় সবদিক দিয়েই সমৃদ্ধ হলেও পশ্চিমবঙ্গের কোনো বিশ্ববিদ্যালয় এখানকার সাহিত্য নিয়ে পূর্ণাঙ্গ কোর্স চালুর চিন্তা করেনি। আপনি এই ঐতিহাসিক সেতুবন্ধনের কাজটি কীভাবে করলেন? এতে কেউ সমস্যা সৃষ্টি করেছিল কি না।  
নিখিলেশ রায়: বিশ্ববিদ্যালয় তথা ইউজিসির (বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন) নির্দেশ মোতাবেক কয়েকবছর অন্তর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ সিলেবাস আপডেট করে তা অনুমোদনের জন্য ফ্যাকাল্টি কাউন্সিলে জমা দেয়। একবার জমা পড়ে গেলে অনুমোদন পেতে কোনো সমস্যা হয় না। যদি কোনো সমস্যা হয়, সেটা বিভাগের সিলেবাস কমিটিতেই হয়। এক্ষেত্রে আমাকে কোনো সমস্যার মধ্যে পড়তে হয়নি। আমি আনন্দ পেয়েছিলাম যে, এবারে বিভাগে এ বিষয়ে কারোরই কোনো দ্বিমত ছিল না! সহকর্মীদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ!

বাংলানিউজ: কোন প্রেক্ষাপটে বা কোন ধরনের চিন্তা থেকে বাংলাদেশের সাহিত্য নিয়ে কোর্স চালুর উদ্যোগ নিলেন?
নিখিলেশ রায়: আমরা দুটি জিনিস সবসময় সবার আগে মনে রাখার চেষ্টা করি। ১. ভাষা-সাহিত্যের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ টেক্সট বা ক্ষেত্রগুলোর কালানুক্রমিক একটা ধারণা যেন শিক্ষার্থীদের দেওয়া যায়। ২. সিলেবাস যেন শিক্ষার্থীদের কাছে ভার বলে মনে না হয়। এসব বিষয় চিন্তা করেই কোর্স চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কত সাম্প্রতিক সময়ের সাহিত্যের দিকে সিলেবাসকে এগিয়ে আনা যায়, সেই ভাবনাও থাকে আমাদের।

বাংলানিউজ: অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হয়তো এ ধরনের কোর্স চালুর চিন্তা করতে পারে। সে ক্ষেত্রে তাদের সামনে কোন সমস্যাগুলো অন্তরায় হয়ে দাঁড়াতে পারে?
নিখিলেশ রায়: সর্বাঙ্গসুন্দর একটি সিলেবাস তৈরির ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা তৈরি হওয়ার পেছনে কারণ প্রধানত তিনটি। ১. ব্যক্তিগত পছন্দ -অপছন্দ। কোনো টেক্সট বা কোনো এলাকা কারো না-পছন্দ হলে তিনি তার বিরোধিতা করতে পারেন। ২. অজ্ঞানতা। সবাই সবকিছু জানবেন বা সবার সবকিছু পড়া থাকবে- তা নাও হতে পারে। অন্য কোনো সদস্য সেরকম কোনো বিষয়কে অন্তর্ভুক্ত করতে চাইলে সমস্যা তৈরি হয়। আমার মনে আছে, অশ্রুকুমার সিকদার তখন রিটায়ার করেছেন। আমি সিলেবাস কমিটির সদস্য হিসেবে 'তিতাস একটি নদীর নাম' উপন্যাসটি রাখার জন্য প্রস্তাব করলাম। নাক উঁচু করে কেউ কেউ সঙ্গে সঙ্গে তা নাকচ করে দিলেন। আমিও ছাড়বার পাত্র নই। জানালাম, দরকার হলে অশ্রুবাবুর পরামর্শ নিন। তিনি আধুনিক সাহিত্যের বিশিষ্ট সমালোচক। এখুনি ফোন করুন তাকে। বিভাগের ফোন থেকে কথা বলা হলো অশ্রুবাবুর সঙ্গে। কী হতে পারে তা বুঝতেই পারছেন। কাঁচুমাচু করে সিলেবাসে রেখে দেওয়া হল অদ্বৈতর বইটি।  ওই উপন্যাস বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো কোনো অধ্যাপক যদি না পড়ে থাকেন , তাহলে তার আপত্তি করার তো সংগত কারণ থাকেই। ৩. স্বার্থচিন্তা। যারা যে বিষয়ে চর্চা করেছেন বা বইপত্র আছে বা তখনও বের হয়নি কিন্তু বেরোবে কোনো বই, সেটা যাতে শিক্ষার্থীরা রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করতে পারে, অনেকসময় দেখা যায় সেই ‘ধান চাল বেচনের পাটোয়ারী বুদ্ধি’ দিয়েও সিলেবাস তৈরিকে প্রভাবিত করে থাকেন তারা। দেখেছি।

বাংলানিউজ: বাংলাদেশের সাহিত্য সম্পর্কে ওখানকার শিক্ষার্থী পাঠকদের অনুভূতি কেমন?
নিখিলেশ রায়: বাংলাদেশের বাংলা সাহিত্য সম্পর্কে খুব বেশি খবরাখবর এখানকার পাঠকরা, কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলার ছাত্র-ছাত্রীরা রাখেন বলে মনে হয় না। অথচ কী বিপুল এক সমৃদ্ধ ভাণ্ডার ওখানে। তা না জানা হলে বাংলা সাহিত্যকে খণ্ডিতভাবে জানা হয়!  

বাংলানিউজ: বাংলাদেশের সাহিত্য সম্পর্কে আপনি সেখানকার শিক্ষার্থীদের অনাগ্রহের কথা বললেন। তাহলে কোর্সগুলোর সফলতার বিষয়ে কি প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে?
নিখিলেশ রায়: আমাদের কারো কারো মনে হয়েছিল এবার সুযোগ হলে আমাদের সিলেবাসে বাংলাদেশের সাহিত্যের একটা বড় অংশ রাখব। তাই কবিতা , নাটক , উপন্যাস, আত্মজীবনী ইত্যাদি মিলিয়ে এবারে একটা পূর্ণাঙ্গ স্পেশাল পেপার হিসেবে বাংলাদেশের সাহিত্যকে রাখতে পেরেছি। ছাত্রছাত্রীরা এই বিষয়ে যাতে আগ্রহী হয় সেই চেষ্টা আমাদের থাকবে।  

বাংলাদেশের সাহিত্য নিয়ে ৬টি কোর্স ভারতের বিশ্ববিদ্যালয়ে

বাংলাদেশ সময়: ১৫০০ ঘণ্টা, জুন ১৬, ২০২০
এজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।