ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

‘চিহ্নমেলা মুক্তবাঙলা’

গল্প আড্ডায় দুই বাংলার পাঁচ বিশিষ্টজনকে স্মরণ

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৫৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৭, ২০২২
গল্প আড্ডায় দুই বাংলার পাঁচ বিশিষ্টজনকে স্মরণ

রাজশাহী: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) সাহিত্যের ছোটকাগজ ‘চিহ্ন’র আয়োজনে ‘প্রয়াত-প্রিয়জন’ গল্প আড্ডায় পুরনো দিনে ফিরে গিয়েছিলেন দুই বাংলার লেখক, সম্পাদক ও তাদের পাঠকরা।

সোমবার (১৭ অক্টোবর) বেলা সাড়ে ১১টায় ড. মু. শহীদুল্লাহ একাডেমিক ভবনের সামনে ‘চিহ্নমেলা মুক্তবাঙলা’ অনুষ্ঠানে বাংলা সাহিত্যের প্রয়াত পাঁচ বিশিষ্টজনের স্মৃতিচারণ করা হয়।

বাংলা একাডেমির পরিচালক আমিনুর রহমান সুলতানের সঞ্চালনায় ‘প্রয়াত-প্রিয়জন’ শীর্ষক পর্বে কবি শঙ্খ ঘোষ, সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক, ঔপন্যাসিক দেবেশ রায়, জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান ও কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হকের স্মৃতিচারণ করা হয়।

স্মৃতিচারণ করেন কবি নির্মলেন্দু গুণ, রুহুল আমিন প্রামাণিক ও ইমানুল হক, অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম, বঙ্গবন্ধু চেয়ার অধ্যাপক সনৎকুমার সাহা ও কবি জুলফিকার মতিন।

প্রয়াত শঙ্খ ঘোষের জীবনাচরণ নিয়ে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে ইমানুল হক বলেন, ‘শঙ্খ ঘোষ একবার একটি পত্রিকায় একটি হাইফেন নিয়ে ঝামেলা করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, একটা হাইফেন কেন বাদ যাবে? আমরা এমন একজন শঙ্খ ঘোষের কথা বলছি। যিনি একাধারে একজন কবি, লেখক, শিক্ষক, একটি সামাজিক জীবন ও দর্শন ধারণ করেছিলেন। ২০০৬ সালে যখন একটা জন্মদিন পালন করবো কিন্তু করতে দেওয়া হলো না। তখন তিনি সেখানে গেলেন এবং টানা ২ ঘণ্টা বৃষ্টিতে ভিজে সেই অনুষ্ঠানটি সম্পূর্ণ করেছিলেন। একবার মে মাসের কড়া রোদে দাঁড়িয়েছিলেন তবুও ছাতা নেননি। তিনি প্রেমের কবিতাও লিখেছেন। তিনি সামাজিক মানুষ। শঙ্খ ঘোষ মানুষের অত্যন্ত প্রিয় ছিলেন। কারো লেখা ভালো লাগলে সবাইকে লেখাটা পড়তে বলতেন। ’



দেবেশ রায়ের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম বলেন, ‘তিনি পঞ্চাশ দশকের মানুষ কিন্তু চিন্তায় এই প্রজন্মের মানুষ ছিলেন। তাঁর সাথে আমার খুব বেশি পরিচয় ছিল না। তাঁর প্রতি আমি একটি বই উৎসর্গ করেছিলাম। কিন্তু সেই বই আমি তাঁর কাছে পৌঁছাতে পারিনি। তিনি বাম ঘরানার মানুষ ছিলেন। তিনি নন্দনতত্ত্ব চর্চা ও আয়ত্ত করেছিলেন। দেবেশ রায় ভাষা সম্পর্কে অন্তর্নিহিত অর্থ তুলে ধরতেন। তিনি আমাকে পিএইচডি করতে সবচেয়ে বেশি সাহায্য করেছিলেন। তিনি পোস্ট কলোনিয়াল মানুষ হিসেবে গড়ে উঠেছিলেন। তিনি উপন্যাসের বিপরীতে এক ধরনের প্রতিবেদন করেছিলেন। তিনি একাধিক বক্তৃতায় উপন্যাসের তত্ত্বায়ন করেছিলেন। ’

অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বঙ্গবন্ধু চেয়ার অধ্যাপক সনৎকুমার সাহা বলেন, ‘আমি প্রথমেই প্রয়াত-প্রিয়জন ব্যক্তিত্বদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি। স্বাধীনতা যুদ্ধে আনিসুজ্জামান গুরুত্বপূর্ণ একটা জায়গায় নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। আমি খুব কাছ থেকে তাঁকে দেখেছি। তিনি আমাকে পড়তে আগ্রহী করে তুলেছিলেন। মুসলিম বাংলার সাহিত্যকে তিনি পথ দেখিয়েছেন। তাঁর অবদান শুধু লেখায় নয়, তিনি আড্ডায়, রুচি সব জায়গায় নেতৃত্ব দিয়েছেন। তাঁর ভেতরে কোনো জড়তা ছিল না। সৃষ্টিশীলতায় সমন্বয় ঘটেছিল তাঁর জীবন চরিত্রে। ’

সৈয়দ শামসুল হক সম্পর্কে স্মৃতিচারণ করে দেশবরণ্যে কবি নির্মলিন্দু গুণ বলেন, ‘আমার রচনাবলি এই পর্যন্ত ৪০ জনকে উৎসর্গ করেছি। তাঁর মধ্যে সৈয়দ শামসুল হকও আছেন। ‘যখন পড়বে মোর পায়ের চিহ্ন এই বাটে’ রবীন্দ্রনাথের এই গানে আমি তাঁকে খুঁজে পাই। আমার সাথে তার অম্ল-মধুর সম্পর্ক ছিল। নেত্রকোনায় বাংলাদেশে রবীন্দ্রনাথের প্রথম জন্মদিন পালন করা হয়েছিল। সেখানে তিনি আমাকে বক্তৃতা করতে দেননি। শঙ্খ ঘোষ ও সৈয়দ শামসুল হকের সঙ্গে আমি সেখানে দ্বিমত করেছিলাম। রবীন্দ্রনাথ নিজে চিঠিতে লিখেছিলেন, নেত্রকোনায় আমার জন্মদিন সবচেয়ে ভালো করে উদযাপন করা হয়েছে। শামসুল হক বহুমাত্রিক লেখক ছিলেন। আমার সঙ্গে তার পত্রযোগ ছিল। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার সময় তিনি লন্ডনে ছিলেন। তখন তিনি চিঠিতে আমাকে বলেছিলেন তিনি দেশে ফিরতে চান। বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পর তিনি দেশে ফিরে এসেছিলেন। নিজেকে সব্যসাচী লেখক হিসেবে পরিচয় দিতে পছন্দ করতেন। ’

কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হকের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে রুহুল আমিন প্রামাণিক বলেন, ‘চিহ্নের ২২ বছরের পথচলায় প্রথম প্রচ্ছদে পদচিহ্ন ছিল। আজকে এই চিহ্নমেলা বাংলা সাহিত্যে মানবিকতা ও মূল্যবোধের পদচিহ্ন রেখে যাচ্ছে। হাসান আজিজুল হক রাজশাহী কলেজে লেখাপড়া করেছেন, রাজশাহী সিটি কলেজে শিক্ষকতা করেছেন। রাজশাহীতে থাকাকালীন তাঁর উল্লেখযোগ্য সৃষ্টি ‘শকুন’' বলে যে গল্পটি। এই গল্প একটি অপ্রতিদ্বন্দ্বী গল্প। এরশাদের আমলে আমি রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে অভিযুক্ত হই। তাতে ২১টি অভিযোগ ছিল। হাসান আজিজুল হক, জুলফিকার মতিনের পরামর্শে আমি রাজশাহীতে আন্দোলন গড়ে তুলি। তিনি রাজশাহীতে আমাদের অভিভাবকদের একজন ছিলেন। তিনি আমাদের ঘুম তাড়ানো মানুষ ছিলেন। দেশের মানুষ ছুটে আসতেন তাঁর টানে। বাংলা ভাষাভাষীরমানু্ষেরা তাঁকে স্মরণ করবেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরি চত্বরে শায়িত আছেন। ’

দুই দিনব্যাপী এই মিলনমেলায় চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত আলী প্রয়াসের ‘তৃতীয় চোখ’ এবং কলকাতা থেকে প্রকাশিত অমলিন্দু বিশ্বাসের ‘নৌকো’ পত্রিকাকে লিটলম্যাগ সম্মাননা দেওয়া হবে। এবারে চিহ্ন সাহিত্যপুরস্কার পাচ্ছেন কথাসাহিত্যিক হামিদ কায়সার। চিহ্ন সারস্বত-সম্মাননায় ভূষিত হচ্ছেন প্রবীণ সাহিত্যিক ও শিক্ষাবিদ জুলফিকার মতিন।

বাংলাদেশ সময়: ২১৪৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৭, ২০২২
এসএস/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।