ঢাকা, সোমবার, ২৯ বৈশাখ ১৪৩২, ১২ মে ২০২৫, ১৪ জিলকদ ১৪৪৬

বাংলানিউজ স্পেশাল

ফ্রিল্যান্সিংয়ের অর্থ দেশে আনতে নিজস্ব গেটওয়ে উন্নয়নে মনোযোগ

জাফর আহমদ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০:০৫, মে ১২, ২০২৫
ফ্রিল্যান্সিংয়ের অর্থ দেশে আনতে নিজস্ব গেটওয়ে উন্নয়নে মনোযোগ

ফ্রিল্যান্সিংয়ের অর্থ দেশে আনার ক্ষেত্রে শুরু থেকেই ভোগান্তির শিকার ফ্রিল্যান্সাররা। আমাদের নিজস্ব গেটওয়ে যেমন নেই, তেমনি পেপালের মতো আন্তর্জাতিক গেটওয়ে প্রতিষ্ঠানকে দেশে আনা সম্ভবও হয়নি।

এ কারণে ফ্রিল্যান্সাররা পুরো টাকা দেশে আনতে পারেন না। এই প্রতিবন্ধকতা দূর করতে দেশে নতুন গেটওয়ে উন্নয়নে মনোযোগ দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ইতোমধ্যে নীতিগত সম্মতি দিয়েছেন। শিগগিরই কাজ শুরু হবে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মো. আরিফ হোসেন খান বাংলানিউজকে জানান, বেশ কিছু গেটওয়ে প্রতিষ্ঠান পেমেন্ট সিস্টেম অপারেটর (পিএসও) ও পেমেন্ট সিস্টেম প্রোভাইডার (পিএসপি) আবেদন করেছে। বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংকের গর্ভনর ড. আহসান এইচ মনসুরের সামনে উপস্থাপন করা হয়েছে। পুরো বিষয় গভর্নর দেখার পর ফ্রিল্যান্সারদের উপার্জিত অর্থ দেশে আনতে নতুন গেটওয়ে ডেভলাপমেন্টে সম্মত হয়েছেন।

তিনি বলেন, যে সব প্রতিষ্ঠান আবেদন করেছে তাদের আবেদনগুলো নীতিমালার আলোকে প্রয়োজনীয় শর্ত পূরণ করলে তাদের কাজ করার অনুমতি দেওয়া হবে। শুরুতে তাদের এক বছরের জন্য অপোরিটংয়ের অনুমতি দেওয়া হবে। এক বছর সময়ে যদি নীতি অনুসরণ করে কাজ করে থাকে তাহলে তাদের স্থায়ীভাবে লাইসেন্স দেওয়া হবে।

তিনি জানান, কতটি প্রতিষ্ঠানকে এ ধরনের অনুমতি দেওয়া হবে, এ বিষয়ে এখনো ঠিক করা হয়নি। আবেদনগুলো পর্যালোচনা করার পর বিস্তারিত বলা যাবে। তবে শর্ত পূরণ করে যে কেউ আবেদন করতে পারবে।

দেশের ফ্রিল্যান্সারদের সংগঠন বাংলাদেশ ফ্রিল্যান্সার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের তথ্য মতে, দেশে প্রায় সাড়ে ১০ লাখ ফ্রিল্যান্সার আছেন, যারা আউট সোর্সিং করে থাকেন। বিপুল সংখ্যক এই মানুষ তাদের অর্জিত আয়ের মাত্র ৩০ শতাংশ দেশে আনতে পারেন। দেশে আনার ক্ষেত্রে সমস্যা হওয়ার কারণে প্রায় ৭০ ভাগই দেশের বাইরে রাখতে হয়। যে ৩০ শতাংশ দেশে আসে তার পরিমাণ প্রায় একশ কোটি মার্কিন ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা প্রায় ১২ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। এরমধ্যে মাত্র ৫০ হাজার ডলার ব্যাংকিং চ্যানেলে আসে। বাকি ৫০ হাজার ডলার বিভিন্ন চ্যানেলে দেশে আসে। ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে অর্জিত অর্থ কোনো ভোগান্তি ছাড়াই দেশে আনার পথ তৈরি করতে পারলে অর্থ আসা বেড়ে যাবে। এ জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

ফ্রিল্যান্সারদের দীর্ঘ দিনের দাবি, আন্তর্জাতিক গেটওয়ে প্রতিষ্ঠান পেপাল বাংলাদেশে চালু হোক। কিন্তু নানা জটিলতায় দেশে পেপালের সেবা নিশ্চিত করা যায়নি।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে জানানো হয়, পেপাল বাংলাদেশে কাজ করতে চাইলে স্বাগত। তারা যদি আসতে চায়, আনুষ্ঠানিকভাবে যদি কোন প্রস্তাব পাঠিয়ে থাকে, আমরা সেটা ইতিবাচকভাবে বিবেচনা করবো। পাশপাশি নিজস্ব গেটওয়ে উন্নয়নের কাজ চলবে।

গত ১৫ বছর পেমেন্ট সিস্টেমের দিকে যখন ফোকাস করা হয়েছে। এ সময় কিছু কাজও হয়েছে। তবে গতি আরও প্রয়োজন ছিল মনে করে বাংলাদেশ ব্যাংকের দায়িত্বশীল সংশ্লিষ্ট দপ্তর।

এ বিষয়ে মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, বিগত দিনে সিসটেম ডেভলাপমেন্টের দিকে যতটা আগ্রহ ছিল, তার চেয়ে বেশি ছিল ব্যক্তির বিশেষের স্বার্থের দিকে ফোকাস করার বিষয়টি। এ কারণে সিসটেম ডেভলোপ যতটা হয়েছে তার চেয়ে অনেক বেশি প্রচার হয়েছে। আমরা ওই জায়গা থেকে বের হয়ে একটি প্রতিযাগিতামূলক ব্যবস্থার দিকে মনোযোগ দিয়েছি। প্রতিযোগিতা থাকলে মনোপলি থাকবে না। যে প্রতিষ্ঠান মনোপলি করবে সে প্রতিষ্ঠান মার্কেটে টিকে থাকতে পারবে না। প্রতিযোগিতা থাকলে জনগণই মার্কেট নিয়ন্ত্রণ করবে।

তিনি বলেন, যেসব পেমেন্ট সিসটেম অপারেটর (পিএসও), পেমেন্ট সিসটেম প্রভাইডার( পিএসপি) প্রতিষ্ঠানের সাথে কথা বলেছি,. তাদের আসার ক্ষেত্রে যেমন কোনো বাধা নেই, চলে যাওয়ার ক্ষেত্রেও তাদের কোনো বাধা থাকবে না। আসটা যাতে সৎ উদ্দেশ্যে হয়, সে বিষয়টি নিশ্চিত করা হবে। একই সঙ্গে নিরাপত্তার বিষয়টিতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

জানা গেছে, এটিএম জাকারিয়া স্বপন প্রবাসী আইটি উদ্যাক্তা, তিনি প্রবাসী আয় দেশে আনার ক্ষেত্রে গেটওয়ে সিসটেম ডেভলপমেন্টের কাজ করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। তিনি অন্যতম আবেদনকারী।

মুখপাত্র বলেন, এ সম্পর্কিত একটি গবেষণা গভর্নরকে দেখানো হয়েছে। পিএসপি, পিএসও ফাংশন দেখার পাশাপাশি কারা কারা আগ্রহী, তাদের যোগ্যতা কতটুকু, তাদের ইন্টিগ্রিটি কতটুকু, কারা আবেদন করেছে বিস্তারিত গভর্নরকে জানানো হয়েছে।

আরিফ হোসেন খান বলেন, যারা আবেদন করেছে বা করবে তাদের এক বছরের ট্রায়াল প্রডাকশনের জন্য লাইসেন্স দেওয়া হবে। যদি দেখি তারা আমাদের চাহিদা পূরণ করছে, নিরাপত্তা নিশ্চিত করছে, তাহলে কমার্শিয়াল লাইসেন্স দেওয়া হবে।

জেডএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।