ঢাকা, শুক্রবার, ১৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ৩০ মে ২০২৫, ০২ জিলহজ ১৪৪৬

বাংলানিউজ স্পেশাল

নির্বাচনী রোডম্যাপ নিয়ে কেন এত অনিশ্চয়তা?

তানভীর আহমেদ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯:১৭, মে ২৯, ২০২৫
নির্বাচনী রোডম্যাপ নিয়ে কেন এত অনিশ্চয়তা? গত ২৪ মে যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিএনপির প্রতিনিধিদলের বৈঠক

অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছে দেশের অন্যতম বৃহত্তম রাজনৈতিক দল বিএনপি। দলটির পক্ষ থেকে বারবার এই দাবি উত্থাপন করা হলেও কর্ণপাত করেনি অন্তর্বর্তী সরকার।

 

সরকার কেন নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণা করছে না তা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে নানা প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। তারা বলছেন, এখনো এ বিষয়ে স্পষ্ট কোনো ঘোষণা দিচ্ছে না সরকার, এর নেপথ্যে কী? নির্বাচন পেছানো নাকি কোনো দল বা কাউকে বিশেষ সুবিধা দেওয়া?

ছাত্র-জনতার জুলাই বিপ্লবের পর জন-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন হিসেবে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করে। সংস্কার ও একটি অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে দায়িত্ব শুরু করলেও এখন পর্যন্ত কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই। বিএনপির পক্ষ থেকে সরকারের কাছে লিখিত এবং সরাসরি কয়েক দফা বৈঠক করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণার দাবি করে আসছে।  

অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে বিএনপি ইতোমধ্যে জনসমর্থনের লক্ষ্যে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে। তারই অংশ হিসেবে সারা দেশে বিভাগীয় পর্যায়ে বিএনপির তিন অঙ্গসংগঠন তারুণ্যের সমাবেশ আয়োজন করে। এই সমাবেশ থেকে মূলত নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণার দাবিতে সরকারকে চাপে রাখাই মূল লক্ষ্য।  

এতকিছুর পরেও কেন নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণা করছে না বর্তমান সরকার তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। তারা প্রশ্ন তুলেছেন, নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণা দেরি হওয়া কি ভোট পেছানো, নাকি কাউকে বেশি সুবিধা দেওয়া?

এদিকে জুলাই বিপ্লবে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রদের একাংশের জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) আত্মপ্রকাশ করেছে। বিপুল জনসমর্থন নিয়ে আত্মপ্রকাশ করা এই সংগঠনের কার্যত সারা দেশে সাংগঠনিক কোনো কার্যক্রম নাই। শুধু রাজধানীতে কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে কিছু কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়।  

অপরদিকে, বিগত আওয়ামী সরকারের ১৫ বছরে রাজপথের কোনো আন্দোলনে দাঁড়াতে পারেননি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। জুলাই বিপ্লবের পর দলটি অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে রাজপথে সরব দেখা যাচ্ছে। এছাড়া অন্যান্য বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দলকে অতীতে খুব বেশি একটা সরব দেখা না গেলেও বর্তমানে তাদের কার্যক্রম দৃশ্যমান।

বিএনপি বলছে, সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া। সময়ের প্রয়োজনে সংস্কারের চাহিদার ভিন্নতা বদলায়। তাই দেশের আর্থিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক কারণে দ্রুত নির্বাচন হওয়া জরুরি। একটি অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে যত দ্রুত জনপ্রতিনিধির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা যাবে দেশের জন্য ততই মঙ্গল।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জনগণের চাহিদা অনুযায়ী দ্রুততম সময়ের মধ্যে নির্বাচন না দেওয়া দেশের জন্য অশুভ সংকেত। তাই নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণায় দেরি হওয়া তৃতীয়পক্ষকে সুবিধা দেওয়া উদ্দেশ্যে হতে পারে।

এদিকে নিজেদের শক্তির জানান দিতে সারা দেশে বিভাগীয় শহরগুলোতে তারুণ্যের সমাবেশ করেছে বিএনপির তিন অঙ্গসংগঠন। বুধবার (২৮ মে) রাজধানীর নয়াপল্টন কার্যালয়ে এই কর্মসূচির সমাপনী অনুষ্ঠানে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সহ-সিনিয়র নেতারা দ্রুত নির্বাচনের জোর তাগিদ দেন। তারা বলছেন, আগামী ডিসেম্বরে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে হবে, অবশ্যই হবে।

এছাড়া, গত সপ্তাহে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে ইশরাক হোসেনের শপথের দাবিতে রাজধানীর কাকরাইলে এবং সিটি করপোরেশন কার্যালয়ের সামনে নিজেদের শক্তি প্রদর্শন করে বিএনপি। দাবি আদায়ের জন্য রাস্তা অবরোধ করে রাখেন ইশরাক-সমর্থকরা। এমনকি রাতেও আন্দোলন অব্যাহত রাখা হয়।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, ‘আমরা চাই নির্বাচনের জন্য যে সংস্কার প্রয়োজন তা অতি দ্রুত শেষ করে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক। তা না হলে তরুণদের নিয়ে আমরা এই ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করব। ’ 

তিনি বলেন, ‘আমরা বারবার বোঝানোর চেষ্টা করেছি কেন অতি দ্রুত নির্বাচন দরকার। কারণ, পলাতক স্বৈরাচার দেশে-বিদেশে নানা ষড়যন্ত্র করছে। নির্বাচনকে বিলম্বিত করার জন্য তারা ষড়যন্ত্র করছে। ’ 

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, ‘দেশের বিরুদ্ধে এখনো ষড়যন্ত্র চলছে। এই ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় সকলকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। ’ 

তিনি বলেন, ‘একমাত্র তরুণরাই পারবে ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে দেশকে এগিয়ে নিতে। বিএনপি সব সময় তারুণ্যকেই গুরুত্ব দিয়ে এসেছে। ’ 

বিএনপির আরেক স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘জাতীয় ঐক্য ফাটল ধরানোর জন্য চেষ্টা চালানো হচ্ছে। আমরা ভুলতে বসেছি আওয়ামী সরকারের গুম খুম নির্যাতনের কথা। একটি অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে দেশের গণতান্ত্রিক পদ্ধতি ফিরে আসবে এটাই বর্তমানে দেশের জনগণের প্রত্যাশা। ’ 

নির্বাচন ইস্যুতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর দিলারা জামান বাংলানিউজকে বলেছেন, ‘সরকার পরিষ্কারভাবে বলেছে ৩০ জুনের পর আর তারা ক্ষমতায় থাকবে না। তবে এই সময়ের মধ্যে কিছু সংস্কার ও বিচার কাজ রয়েছে। নির্বাচন নিশ্চয়ই সরকার দ্রুতই করবে। ’

তিনি বলেন, ‘এই সরকার একটি অন্তর্বর্তী সরকার। প্রতিদিনই চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হচ্ছে তাদের। এই সরকার ক্ষমতায় আসার পর প্রতিদিনই দেখা যাচ্ছে কোনো না কোনো দাবি নিয়ে মানুষ রাজপথে নামছে। মনে হচ্ছে এতদিন তাদের দাবি-দাওয়া বাক্সবন্দি করে রেখেছিল। আর এই সরকারের পক্ষে সকল দাবি-দাওয়া মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। তাই সরকারকেও বুঝতে হবে গণতন্ত্রের জন্য দ্রুত নির্বাচন জরুরি। ’

টিএ/এসএএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।