সেদিন স্কুলে যেতে চায়নি মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী মারিয়াম উম্মে আফিয়া। বাবা মারিয়ামকে স্কুলে পৌঁছে দিয়ে বলেছিলেন ‘যাও আম্মু যাও’।
বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়ির মোড়ের পুকুরপাড় মসজিদ সংলগ্ন নিজ বাড়িতে বাংলানিউজকে তিনি এসব কথা জানান।
সোমবার (২১ জুলাই) বিমান বিধ্বস্তের ঘটনার বিষয়ে কান্নাজড়িত কন্ঠে আফিয়া বাবা বলেন, আমার মেয়ে সেদিন স্কুলে যেতে চায়নি। আমি তাকে কিছুটা জোর করেই স্কুলে নিয়ে যাই। মেয়ে আমাকে বলছিল, বাবা আজকে আমি স্কুলে যাবো না। স্কুলে পৌঁছে দিয়ে আমি তাকে বলি, ‘যাও আম্মু যাও’। আমিই তাকে প্রতিদিন স্কুলে নিয়ে যাই,নিয়ে আসি।
কখন বিমান দুর্ঘটনার খবর জানতে পারলেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, দুপুরের পর গোসল করে আমি নামাজ পড়তে গেছি। নামাজ শেষ করে মসজিদ থেকে বের হতেই আমার ভাতিঝি আমাকে জানায়, স্কুলে বিমান দুর্ঘটনায় হয়েছে। কুকুরকে ধমক দিলেও আমার মেয়ে ভয় পেতো। আমি দৌড়ে স্কুলে গেছি, আমার মেয়ে যেন ভয় না পায়। গিয়ে দেখি, আমার মেয়ের ক্লাসেই বিমান বিধ্বস্ত হয়েছে। এটা দেখে আমার ভেতরে এতো বেশি আঘাত লাগছে.... আমি ভাবছি আমার মেয়ে আর নাই।
মারিয়ামের বাবা আরও বলেন, কিছুক্ষণ পর একটা হেলিকপ্টার এসে কিছু মরদেহ নিয়ে যায়। আমি তখন একাই বিভিন্ন মেডিকেল গেছি। কোথাও পায়নি আমার মেয়েকে। গত চার দিন থেকে আমার মেয়ের কোনো খোঁজ পাচ্ছি না। আল্লাহ জানেন জীবিত আছে, না মারা গেছে। ডিএনএ টেস্টের জন্য নমুনাও দিয়ে আসছি।
মেয়ের ছবি দেখিয়ে কান্নাজড়িত কন্ঠে তিনি বলেন, মেয়েকে ছাড়া আমি এক মিনিট থাকতে পারি না। মেয়ের ছবির দিকে আমি তাকাতে পারি না। আমার মেয়েটা একদম নিষ্পাপ একটা পুতুলের মতো দেখতে। মেয়েকে ছাড়া কিভাবে আমি থাকবো।
জীবিত অথবা মৃত আমার মেয়ের যেন আমি অন্তত খোঁজটা পাই যুক্ত করেন মারিয়ামের বাবা।
মারিয়ামের ভাই মাহিম বোনের সম্পর্কে বলেন, সারাদিন আমরা একে অপরের সাথে দুষ্টুমী করতাম। মারিয়াম নিজের মেকআপ বক্স নিয়ে সব সময় খেলাধুলা করতো, সাজগোছ করতো। দুর্ঘটনার আগের দিন সে আমার হাতে মেকআপ লাগিয়ে দিয়েছিল। সেদিন আমি তার সাথে দুষ্টুমী করে বলছিলাম, আমি ঘুমাচ্ছি, তুই কিন্তু আমার কাছ থেকে যাবি না, তুই চলে গেলে আমার ভয় করে। সে আমাকে তখন বলে, ভয় পেয়ো না ভাই, আমি তোমার কাছেই আছি।
রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় আগুনে পুড়ে বিকৃত হয়ে যাওয়া ৫ লাশের পরিচয় শনাক্ত করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ফরেনসিক ডিএনএ ল্যাব।
সংগৃহীত নমুনা থেকে প্রস্তুতকৃত প্রোফাইল ও ঘটনার পর থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত পাঁচটি পরিবারের মোট ১১ জন সদস্যের প্রোফাইল বিশ্লেষণ করে পাঁচটি লাশের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে। এর মধ্যে একজন হলো নয় বছর বয়সী মারিয়াম উম্মে আফিয়া।
সোমবার (২১ জুলাই) দুপুর ১টার পর রাজধানীর উত্তরায় দুর্ঘটনায় পড়ে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান। বিমানটি উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি ভবনে গিয়ে পড়ে এবং বিধ্বস্ত হয়। সঙ্গে সঙ্গে বিমান ও স্কুল ভবনটিতে আগুন ধরে যায়। যে ভবনে এটি বিধ্বস্ত হয় সেখানে বহু স্কুল পর্যায়ের শিক্ষার্থী ছিল। যাদের বেশিরভাগই হতাহত হয়।
আরকেআর/এএটি