ঢাকা: ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সম্ভাব্য সময়সীমা ঘোষণা করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সে অনুসারে, আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে হতে পারে নির্বাচন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা মনে করেন, দীর্ঘদিন আন্দোলন-সংগ্রামের কারণে রাজপথে থাকতে পারেনি জামায়াতে ইসলামী। যে কারণে দল গোছানো এবং জনসংযোগ বাড়ানোর কৌশল হিসেবে নির্বাচনকে বিলম্বিত করার কৌশল নিয়ে থাকতে পারে দলটি।
এ বিষয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী বাংলানিউজকে বলছিলেন, দীর্ঘ ১৭ বছর দেশের মানুষ সুষ্ঠুভাবে ভোট দিতে পারেনি। এছাড়া প্রায় দুই কোটি তরুণ ভোটার যারা এখনো ভোট দিতে পারেননি। সবাই ভোট দেওয়ার জন্য অপেক্ষা করছে, তবে সেটি অবশ্যই হতে হবে গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচন। সে কারণে সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি বলেন, জামায়াতে ইসলামী বেশ কিছু দাবি নিয়ে রাজপথে আন্দোলন করছে। তার মধ্যে পিআর (সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব) পদ্ধতিতে নির্বাচন অন্যতম দাবি। যদিও এই পদ্ধতির সঙ্গে বাংলাদেশের মানুষ খুব একটি পরিচিত নন। তবে ভোট যে পদ্ধতিতেই হোক না কেন জামায়াতের প্রস্তুতি রয়েছে।
বিশ্লষকেরা মনে করেন, ফ্যাসিস্ট সরকারবিরোধী আন্দোলনে দীর্ঘদিন একসঙ্গে রাজপথে আন্দোলন করেছে বিএনপি ও জামায়াত। তবে সম্প্রতি নির্বাচন ইস্যুতে পরস্পরবিরোধী অবস্থান নিয়েছে তারা। বিএনপি বলছে, নির্বাচন যত দ্রুত হবে, দেশের জন্য ততই মঙ্গল। আর জামায়াত ইসলামী বলছে, সংস্কার, বিচার এবং পিআর (সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব) পদ্ধতি ছাড়া নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না।
গত ৫ আগস্ট জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা জানিয়েছেন, আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথমার্ধে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এর কিছুদিনের মাথায় নির্বাচন অনুষ্ঠানের যাবতীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্বাচন কমিশনকে চিঠিও দেন প্রধান উপদেষ্টা। নির্বাচন কমিশন বলেছে, নির্বাচনের রোডম্যাপ নিয়ে আলোচনা হয়েছে৷ আগামী সপ্তাহে প্রকাশ করা হবে।
এদিকে, নির্বাচনের সময়সীমা ঘোষণা হওয়ার পর থেকে পিআর পদ্ধতিতে ভোটের দাবি নিয়ে জোরালোভাবে রাজপথে নেমেছে জামায়াত। গত বুধবার (১৩ আগস্ট) রাজধানীতে এই দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিলও করেছে তারা।
পিআর পদ্ধতিসহ সাত দফা দাবি আদায়ে অর্ন্তবর্তী সরকারের সঙ্গে আলোচনার পাশাপাশি শক্তির জানান দিতে ঢাকায় ১৯ জুলাই ‘জাতীয় সমাবেশ’ও করে জামায়াতে ইসলামী। সেদিন তাদের উত্থাপিত দাবিগুলো হলো- অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিতকরণ, সব গণহত্যার বিচার, প্রয়োজনীয় মৌলিক সংস্কার, জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র বাস্তবায়ন, জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতদের পরিবারের পুনর্বাসন, পিআর পদ্ধতিতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান এবং এক কোটিরও বেশি প্রবাসীদের ভোট প্রদানের ব্যবস্থার করা।
একদিকে নির্বাচনের জন্য প্রার্থিতা ঘোষণা, অপরদিকে নির্বাচনের বিরোধিতা করে রাজপথে কেন তারা আন্দোলন করছে, এ নিয়ে রাজনৈতিক মহলে নানা ধরনের আলোচনা-সমালোচনা চাউর হয়েছে। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, দলটি যদি নির্বাচনের বিরোধিতা করে, তাহলে কেনইবা প্রার্থিতা ঘোষণা করা হবে।
যদিও জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য সবার আগে প্রস্তুতি নিয়েছে। পিআর পদ্ধতি এবং লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি হলে যদি আগামীকালও ভোট হয় তারা নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত।
এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর উত্তর জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন বলেন, আমরা সবার আগে নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করেছি। আমাদের দাবি আদায় হলে যেকোনো সময় নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত।
জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ জামায়াতের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ বাংলানিউজকে বলেন, ইতোমধ্যে ৩০০ আসনেই জামায়াতে ইসলামীর সম্ভাব্য প্রার্থীর তালিকা প্রায় চূড়ান্ত করা হয়েছে। আমরা কেন নির্বাচন বিলম্বিত করবো? আমরা বলেছি সংস্কার ও বিচার এবং লেভেল প্লেয়িং সম্পন্ন না করার আগে নির্বাচন হলে সে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না। এখনো প্রশাসনসহ সব সরকারি দপ্তরে ফ্যাসিস্টের সমর্থক ও সহযোগী কর্মকর্তারা বিদ্যমান।
দলটির নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের বাংলানিউজকে বলেন, আমরা ইলেকশন চাই সিলেকশন চাই না। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী নির্বাচনে যেতে চায়। কিন্তু তার আগে নির্বাচনের যে বিষয়গুলো প্রয়োজন তা করতে হবে। নির্বাচনের তফসিলকে শুধু একটি দল স্বাগত জানিয়েছে, এতেই বোঝা যায় এই নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না।
টিএ/এইচএ/