ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ব্যাংকিং

কু-ঋণের তথ্য চায় দুদক

শাহেদ ইরশাদ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২০১ ঘণ্টা, অক্টোবর ৬, ২০১৬
কু-ঋণের তথ্য চায় দুদক

ঢাকা: জনগণের আমানত ও করের টাকায় ঋণ বিতরণের সময় ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি ভঙ্গ করায় আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে চলেছে কু-ঋণ।
 
এ ধরনের ঋণ বিতরণে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের কর্মকর্তা, ঋণ গ্রহিতা ও অন্যান্য জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে তথ্য চায় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।


 
কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকখাতে মোট খেলাপি ঋণের প্রায় ৮৫ শতাংশই কু-ঋণ। যার পরিমাণ প্রায় ৪৪ হাজার কোটি টাকা।  

২০১৪ সালের ডিসেম্বরে এর পরিমাণ ছিল ৩৯ হাজার কোটি টাকা। এক বছরের ব্যবধানে কু-ঋণ বেড়েছে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা।
 
দুদকের মহাপরিচালক ফরিদ আহমদ ভূঁইয়া স্বাক্ষরিত এক চিঠি সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গর্ভনর এবং অর্থ-মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিবের কাছে পাঠানো হয়েছে।
 
চিঠিতে বলা হয়েছে, ব্যাংকিং প্রবিধি লঙ্ঘন, সার্ভে প্রতিষ্ঠান কর্তৃক ঋণ গ্রহিতার জামানতের অতি মূল্যায়ন ও ব্যাংক কর্মকর্তাদের অপরাধে কু-ঋণ সৃষ্টি হয়েছে।  

কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্তৃক সব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করে ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি লঙ্ঘন করে ঋণ বিতরণ এবং সার্ভে প্রতিষ্ঠান কর্তৃক অতি মূল্যায়িত জামানত চিহ্নিত হলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার।
 
চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, অসৎ কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগসাজশ করে জাল-ভুয়া রেকর্ডপত্র দাখিল, অপর্যাপ্ত আমানত ও জামানতবিহীন কোটি কোটি টাকা ঋণ নিয়ে আর ফেরত দিচ্ছেন না গ্রহিতারা।  

অনেক ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকার ও ঋণ গ্রহিতার সঙ্গে যোগসাজশ করে সার্ভে প্রতিষ্ঠান কর্তৃক জামানতের অতি মূল্যায়ন করে ঋণ প্রস্তাব অনুমোদন হয়। ফলে এ ধরনের ঋণের অধিকাংশই কু-ঋণে পরিণত হচ্ছে।
 
চিঠিতে বলা হয়েছে, ব্যাংকে জমাকৃত জনগণের অর্থ ব্যাংকিং প্রক্রিয়ায় লোপাটের ব্যবস্থা আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। যা ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের মাধ্যমে অপরাধজনক বিশ্বাসভঙ্গ ও ক্ষমতার অপব্যবহারের শামিল। এবং দুর্নীতি দমন কমিশন আইনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
 
এমতাবস্থায় এ ধরনের ঋণ বিতরণে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের নিরীক্ষা বা পরিদর্শনে ব্যাংকিং প্রবিধি-বিধান লঙ্ঘন করে ঋণ প্রদান, সার্ভে প্রতিষ্ঠান কর্তৃক অতি-মূল্যায়িত এবং ব্যাংকার কর্তৃক অপরাধজনক বিশ্বাসভঙ্গের তথ্য চেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
 
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী, খেলাপি ঋণের তিনটি স্তরের (নিম্নমান, সন্দেহজনক ও মন্দমান) মধ্যে উল্লেখিত খেলাপি ঋণকে কু বা নিশ্চিত ক্ষতিজনক বলা হয়। এ মানের ঋণ আদায়ের সম্ভাবনা একেবারেই ক্ষীণ। এটা ব্যাংকের ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদ হিসেবেও বিবেচিত।
 
সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক অনুষ্ঠানে গভর্নর ফজলে কবির ব্যাংকিং ব্যবস্থাকে আরো দক্ষ এবং বিনিয়োগবান্ধব করতে খেলাপিঋণ কমানোর প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছেন।
 
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র শুভঙ্কর সাহা বাংলানি‌উজকে বলেন, সংশ্লিষ্ট বিষয়ে দুদকের তথ্য চাওয়ার যৌক্তিকতা যাচাই-বাছাই করে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
 
বাংলাদেশ সময়: ১১৫৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৬, ২০১৬
এসই/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।