ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ব্যাংকিং

অনুমোদন পর্ষদের, দায় ম্যানেজারের!

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮০৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ৬, ২০১৬
অনুমোদন পর্ষদের, দায় ম্যানেজারের!

ঢাকা: আজিজুর রহমান (ছদ্ম নাম) রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন অগ্রণী ব্যাংকের একজন শাখা ম্যানেজার। তাকে বরিশাল থেকে দুই বছর আগে বদলি করে ঢাকায় এনেছেন ব্যাংকটির সাবেক এমডি সৈয়দ আব্দুল হামিদ।


 
পদায়ন করা হয়েছে ঢাকার একটি কর্পোরেট শাখায়। ওই শাখা থেকে আব্দুল হামিদ ১০-১২ জন গ্রাহককে ঋণ পাইয়ে দিয়েছেন। যাদের কাউকেই তিনি (ম্যানেজার) চেনেন না।
 
তাদের মধ্যে একজন গ্রাহকের ক্ষেত্রে জমির প্রকৃত দাম ধরে ঋণ প্রস্তাব পাঠানো হলে জিএম অফিস তা ফেরত পাঠায়। সেখান থেকে বলা হয়, ‘এমডি সাহেব পার্টির ত্রিশ কোটি টাকার এলসি খুলতে বলেছেন। তোমাকে এজন্যই ঢাকায় আনা হয়েছে’।  

পরে জমির দাম বাড়িয়ে প্রস্তাবটি পাঠানোর তিনদিনের মধ্যে ৩০ কোটি টাকার এলসি অনুমোদিত হয়। ওই গ্রাহক একটি টাকাও জমা দেননি। বাকিদের অবস্থাও ভালো না।
 
এভাবেই শাখা ম্যানেজারদের দিয়ে কোটি কোটি টাকা ঋণ বিতরণের প্রস্তাব পর্ষদে এনেছেন সাবেক এমডি হামিদ। অনিয়ম ও আর্থিক সুবিধা নেওয়ায় তাকে অপসারণ করা হলে এখন বিপদে পড়েছেন এসব ম্যানেজাররা।
 
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর ড. খোন্দকার ইব্রাহীম খালেদ বলেন, ‘ঊর্ধ্বতনরা বাঁচার জন্য প্রত্যেকটি শর্তে শাখা ব্যবস্থাপকদের জড়িয়ে রাখেন। যাতে ওপর থেকে অনিয়ম হলে নিম্নস্তরের কর্মীরাও পার না পান। যারা ঋণ অনুমোদন করবেন, তাদেরকেও দায়ী করার ব্যবস্থা করা উচিত। তবে শাখা ব্যবস্থাপক বিতরণের শর্ত লঙ্ঘন করলে দায়ী হতে পারেন।
 
আজিজুর রহমান বলেন, ‘এসব ঋণ অনুমোদনের আগে জিএম অফিস এবং প্রধান কার্যালয় থেকে সরেজমিনে পরিদর্শন করা হলেও এখন তারা ব্যাখ্যা দিতে তলব করেছেন আমাকেই। এমনকি ঋণ প্রদানে সর্বোচ্চ অথরিটি এমসিসি’র সদস্যরাও আমাকে দায়ী করছেন। আমার ক্ষমতা মাত্র ২০ লাখ টাকা প্রদানের। যাদের নির্দেশে ঋণ প্রস্তাব পাঠিয়েছি, তারা পার পেয়ে যাচ্ছেন। আমি হচ্ছি বলির পাঠা’।
 
জানা গেছে, ঋণ প্রদানে শাখা ব্যবস্থাপকের দায়িত্ব, তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন করা। তারপর আঞ্চলিক কার্যালয়, বিভাগীয় কার্যালয় ও প্রধান কার্যালয় এ সকল তথ্য যাচাই করে ঋণ প্রদান করে থাকে। তবে কোনো ঋণ খেলাপি বা আদায় না হলেই ব্যাখ্যা তলব, চার্জশিট, এমনকি চাকরিচ্যুত হন শাখা ব্যবস্থাপকরা। বড় বড় ঋণ প্রস্তাব পাঠাতে এমডি ও পর্ষদ সদস্যরাও ম্যানেজারদের অলিখিত নির্দেশ দেন।
 
রূপালী ব্যাংকের সাবেক ডিএমডি খলিলুর রহমান বলেন, শাখা ম্যানেজারের ঋণ অনুমোদনের ক্ষমতা ৩০ লাখ টাকা পর্যন্ত। এ পরিমাণ ঋণে অনিয়ম হলে ম্যানেজার দায়ী থাকবেন। কিন্তু ৩০ কোটি বা ৩০০ কোটি টাকা ঋণ মঞ্জুর করে পরিচালনা পর্ষদ। এ ঋণে শাখা ব্যবস্থাপককে দায়ী করার কোনো যৌক্তিকতা নেই। বৃহৎ ঋণের ক্ষেত্রে ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ ও অনুমোদনকারী কতৃপক্ষকে দায়ী রাখার বিধান তৈরি হলেই খেলাপি ঋণের হার ও আর্থিক কেলেঙ্কারি কমে আসবে।
 
আজিজুর রহমান বলেন, ‘ঊর্ধ্বতনদের চাপেই বড় ঋণ প্রস্তাব পাঠানো হয়। কিন্তু যতো দোষ আমাদের ওপরেই বর্তায়। কারণ, ওপরের স্তরের কর্মকর্তারা নিজেদের বাঁচাতেই অযৌক্তিক সকল শর্ত জুড়ে দেন অনুমোদনের ক্ষেত্রে। আমাদের ক্ষমতার মধ্যে যেসব ঋণ বিতরণ করা হয়েছে, সেগুলো আদায় ও হালনাগাদ রয়েছে’।
 
আর এ সুযোগে চুক্তিভিত্তিক এমডি ও পর্ষদ সদস্যরা নামে-বেনামে হাজার কোটি টাকা ঋণ দিয়েও পার পেয়ে যাচ্ছেন। বিষয়টি নিয়ে যোগাযোগের চেষ্টা কর‍া হলেও পাওয়া যায়নি অগ্রণী ব্যাংকের সাবেক এমডি আব্দুল হামিদকে। তবে কথা বলতে রাজি হননি বর্তমান এমডি মোহাম্মদ শামস-উল-ইসলাম।
  
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র শুভঙ্কর সাহা বলেন, একটি শাখার ব্যবস্থাপক শাখাটির সর্বোচ্চ ক্ষমতাশালী ব্যক্তি। তিনি যদি ওপরের চাপে মাথা নত না করেন, তাহলে তো আর বিপদে পড়বেন না। তবে ঋণের শর্তগুলো আসলেও ম্যানেজারদের জন্য বিপজ্জনক। কোনো শাখা ব্যবস্থাপক শর্তগুলো পরিবর্তনের আবেদন জানালে তা বিবেচনা করা হবে।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৮০২ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৬, ২০১৬
এসই/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।