ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ব্যাংকিং

ব্যাংক খাতে একবছরে কমেছে ৯ হাজার কর্মী

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২০০ ঘণ্টা, মে ২৪, ২০১৮
ব্যাংক খাতে একবছরে কমেছে ৯ হাজার কর্মী অনুষ্ঠানে উপস্থিত অতিথিরা। ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: ব্যাংকিং খাতে মানবসম্পদে চলছে চরম অব্যবস্থাপনা। গত একবছরেই এ খাতে ৯ হাজার কর্মী ছাঁটাইয়ের শিকার হয়েছেন, অনেকে আবার অস্থিতিশীল পরিবেশের জন্য বাধ্য হয়েছেন পদত্যাগে। 

বৃহস্পতিবার (২৪ মে) রাজধানীর মিরপুরে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) অডিটোরিয়ামে ‘হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট অব ব্যাংকস’ শীর্ষক এক বার্ষিক পর্যালোচনা কর্মশালায় প্রকাশিত গবেষণা প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।  

প্রতিবেদন অনুযায়ী, ব্যাংক খাতে প্রতিনিয়তই কর্মী ছাঁটাই ও পদত্যাগের ঘটনা বাড়ছে।

এতে কর্মকর্তাদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ছে আতঙ্ক। সাম্প্রতিক কয়েকটি ব্যাংকে কর্মী ছাঁটাই নিয়ে চলছে বেশ আলোচনা-সমালোচনা।

কর্মশালায় প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আহমেদ জামাল। এতে সভাপতিত্ব করেন বিআইবিএমের মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমদ চৌধুরী।  

স্বাগত বক্তব্য দেন বিআইবিএমের মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমদ চৌধুরী। এ সময় তিনি দক্ষতার সঙ্গে মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। একই সঙ্গে কর্মীদের দক্ষতা বাড়াতে প্রশিক্ষণের ওপরও জোর দেওয়া হয়।  

বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আহমেদ জামাল বলেন, ব্যাংকিং খাতের মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয় বেশ কিছু সার্কুলার জারি করেছে। এসব সার্কুলার যথাযথ পরিপালনের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে নজরদারি করা হয়।  

‘ব্যাসেল-৩ বাস্তবায়নের পর্যায়ে রয়েছে। এতে মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। ’
 
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিগত ২০১৬ সালে ব্যাংকিং খাতে মোট কর্মকর্তা ছিলেন ৯০ হাজার ২৬৫ জন। ছাঁটাই, পদত্যাগসহ বিভিন্ন কারণে ২০১৭ সালে এসে কর্মকর্তার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮১ হাজার ২৪৫ জন। এক বছরে কর্মকর্তা কমেছে ৯ হাজার ২০ জন।  

এদিকে মানবসম্পদ উন্নয়নেও ব্যয় কমিয়েছে ব্যাংকগুলো। ব্যাংকের পরিচালনা খরচের ১০০ টাকার মধ্যে মানবসম্পদ উন্নয়নে ব্যয় হয় মাত্র ২৫ পয়সা। প্রশিক্ষণেও বাজেট কমিয়েছে ব্যাংকগুলো। গবেষণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, ৬১ শতাংশ ব্যাংকার মনে করেন ব্যাংকিং খাতে নীতিবান নেতৃত্বের অভাব রয়েছে।  এ কারণেই এই খাতে অনিয়ম ও দুর্নীতির ঘটনা সংঘটিত হচ্ছে।

কর্মশালায় গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন বিআইবিএমের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তাজুল ইসলামের নেতৃত্বে ৭ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল। গবেষণা দলে অন্যান্যের মধ্যে ছিলেন বিআইবিএমের সহকারী অধ্যাপক মাসুদুল হক, বিআইবিএমের সহকারী অধ্যাপক রেক্সোনা ইয়াসমিন, বিআইবিএমের প্রভাষক আনিলা আলী, বিআইবিএমের প্রভাষক লামিয়া রহমান, বাংলাদেশ ব্যাংকের উপ-মহাব্যবস্থাপক মো. রফিকুল ইসলাম এবং আল- আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং মানবসম্পদ বিভাগের প্রধান মো. মাজহারুল ইসলাম।
 
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনের সময় বিআইবিএমের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তাজুল ইসলামের বলেন, ২০১৬ সালের তুলনায় ২০১৭ সালে ব্যাংকগুলো কর্মীদের প্রশিক্ষণ ও উন্নয়নে ব্যয় ৫০ শতাংশ কমিয়েছে। ১০০ টাকা অপারেটিং ব্যয়ের মধ্যে মাত্র ২৫ পয়সা কর্মীদের উন্নয়নে ব্যয় করেছে ব্যাংক। যা খুবই হতাশাজনক।  

‘আর্ন্তজাতিকভাবে অপারেটিং খরচের ২ থেকে ৩ শতাংশ ব্যয় করা হয়। একই সঙ্গে এক তৃতীয়াংশ  ব্যাংক তাদের মানব সম্পদ উন্নয়নের ব্যয় করতে ব্যর্থ হয়েছে। ’
 
বিআইবিএমের চেয়ার প্রফেসর ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. বরকত-এ-খোদা বলেন, ব্যাংকিং খাতের নৈতিকতার ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। নৈতিকতা বজায় রাখতে পারলে ব্যাংকিং খাতের সমস্যা অনেকাংশে দূর হবে। তিনি ব্যাংকের কর্মীদের দক্ষতা বাড়ানোর ওপরও গুরুত্ব দেন।
 
বিআইবিএমের সাবেক চেয়ার প্রফেসর এস এ চৌধুরী বলেন, ব্যাংকিং খাতে চাকরির জন্য লাইসেন্স ব্যবস্থার প্রবর্তন করলে অনেক সমস্যা দূর হয়ে যাবে। বিশেষ করে পেশাদারি সংক্রান্ত লাইসেন্স থাকলেও ব্যাংকিংয়ে নেই। ব্যাংকিং খাতে এখন বিভিন্ন খাতের বিশেষজ্ঞ প্রয়োজন সুতরাং এ বিষয়টি বিবেচনায় এই লাইসেন্স কাজে লাগবে।
  
বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৫ ঘণ্টা, মে ২৪, ২০১৮
এসই/এমএ 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।