ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ব্যাংকিং

একবছরে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১৫ হাজার কোটি টাকা

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪২৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১১, ২০১৮
একবছরে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১৫ হাজার কোটি টাকা

ঢাকা: ২০১৭-১৮ অর্থবছর শেষে ব্যাংকিংখাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮৯ হাজার ৩৪০ কোটি টাকা। এই সময়ে ব্যাংকগুলো ঋণ বিতরণ করেছে ৮ লাখ ৫৮ হাজার ৫২১ কোটি টাকা। সেই হিসাবে খেলাপি ঋণ মোট বিতরণকৃত ঋণের ১০ দশমিক ৪১ শতাংশ। আর গত তিনমাসের তুলনায় খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৭৫১ কোটি টাকা। মার্চ মাসে ব্যাংকখাতে খেলাপি ঋণ ছিলো ৮৮ হাজার ৫৮৯ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, এক বছরের ব্যবধানে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১৫ হাজার ১৯২ কোটি টাকা। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিলো ৭৪ হাজার ১৪৮ কোটি টাকা।

ওই সময় বিতরণ করা ঋণের স্থিতি ছিলো ৭ লাখ ৩১ হাজার ৬২৫ কোটি টাকা।  

বিশ্লেষকরা বলছেন, ঋণ বিতরণের আগে গ্রহিতা সর্ম্পকে ভালোভাবে খোঁজ খবর নেওয়ার পাশাপাশি আদায়ে যথেষ্ট কঠোরতা অবলম্বন করতে হবে। ঋণ আদায় না হওয়ার দায় নিতে হবে বিতরণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের। তাহলে খেলাপি ঋণের পরিমাণ কমে যাবে।  

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, জুন শেষে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন (সোনালী, জনতা, অগ্রণী, রূপালী, বেসিক ও বিডিবিএল) বাণিজ্যিক ব্যাংকের খেলাপি ঋণ মার্চের তুলনায় ৮৩৩ কোটি টাকা কমেছে। জুন শেষে এসব ব্যাংকের খেলাপি ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৪২ হাজার ৮৫২ কোটি টাকায়। যা মোট ঋণের ২৮.২৪ শতাংশ। এ সময় ব্যাংক বিতরণ করেছে ১ লাখ ৫১ হাজার ৭৫৯ কোটি টাকা। মার্চ শেষে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মোট খেলাপি ঋণ ছিলো ৪৩ হাজার ৬৮৫ কোটি টাকা।

জুন শেষে বিশেষায়িত বাংলাদেশ কৃষি ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের (রাকাব) খেলাপি ঋণ ১৮৫ কোটি টাকা কমে ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ২৪১ কোটি টাকা। যা মোট ঋণের ২১ দশমিক ৬৮ শতাংশ। মার্চ শেষে ওই দুই ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ছিলো ৫ হাজার ৪২৬ কোটি টাকা।  

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গর্ভনর ড. সালেহউদ্দিন বলেন, ঋণ বিতরণের আগে ভালোভাবে যাচাই-বাছাই না করায় ক্রমেই খেলাপি ঋণ বেড়েছে। খেলাপি ঋণ আদায়ে ব্যাংকগুলোকে আরও কঠোর হতে হবে। না হলে ধীরে ধীরে এসব ঋণ আদায় অযোগ্য হয়ে যাবে।  

রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ কমলেও বেড়েছে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর। জুন শেষে ৪০টি বেসরকারি ব্যাংকের বিতরণ করা ৬ লাখ ৪৮ হাজার ৫০১ কোটি টাকার মধ্যে ৩৮ হাজার ৯৭৫ কোটি টাকাই খেলাপিতে পরিণত হয়। যা মোট ঋণের ৬.০১ শতাংশ। গত মার্চে বেসরকারি খাতে খেলাপি ঋণ ছিলো ৩৭ হাজার ২৮৯ কোটি টাকা। সেই হিসেবে তিন মাসে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১ হাজার ৬৮৬ কোটি টাকা।  

দেশে পরিচালিত ৯টি বিদেশি মালিকানার ব্যাংকের খেলাপি ঋণের হার ৬.৬৬ শতাংশ। জুন শেষে তাদের বিতরণ করা ৩৪ হাজার ৮৪ কোটি টাকা ঋণের মধ্যে খেলাপি ঋণ ছিলো ২ হাজার ২৭১ কোটি টাকা। মার্চ শেষে এসব ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ২ হাজার ১৮৮ কোটি টাকা। তিন মাসে এখাতের ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৮৩ কোটি টাকা।  

খেলাপি ঋণ তিনটি শ্রেণীতে বিভাজন করা হয়। একটি নিম্নমান, সন্দেজনক এবং মন্দ বা ক্ষতিজনক মান। মন্দ বা ক্ষতিজনক মানের ঋণ আদায় হবে না বলে ধারণা করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব মতে, মোট খেলাপি ঋণের ৭৩ হাজার কোটি টাকাই মন্দ (আদায় অযোগ্য) ঋণ।  

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গর্ভনর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেন, ঋণ বিতরণের আগে কর্মকর্তাদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। ঋণ আদায় না হওয়ার দায় কর্মকর্তাদের উপর থাকতে হবে। তাহলে ঋণ বিতরণ সহজে করতে পারবেন না কর্মকর্তারা। এভাবে ঋণ বিতরণ করলে খেলাপি হওয়ার সম্ভাবনা কমে যাবে।  

বাংলাদেশ সময়: ০০২২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১১, ২০১৮
এসই/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।