ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ব্যাংকিং

সুযোগ-সুবিধা পেয়েও ‘নয়-ছয়’ অবস্থা ব্যাংকখাতের

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭১৪ ঘণ্টা, মে ২৯, ২০১৯
সুযোগ-সুবিধা পেয়েও ‘নয়-ছয়’ অবস্থা ব্যাংকখাতের বাংলাদেশ ব্যাংক

ঢাকা: বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছ থেকে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা কৌশলে আদায় করে নিলেও আশানুরূপ ফলাফল দেয়নি দেশে কার্যরত ব্যাংকগুলো। ব্যাংকিং খাতের বার্ষিক কার্যক্রমের মূল্যায়ন নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রকাশিত ‘আর্থিক স্থিতিশীলতা প্রতিবেদন’ বিশ্লেষণে এই চিত্র উঠে এসেছে।

২০১৮ সালজুড়ে আলোচনায় ছিল ঋণের সুদ সর্বোচ্চ ৯ এবং আমানতে সর্বোচ্চ ৬ শতাংশ (নয়-ছয়) বাস্তবায়ন করা। সুদের হার এই নয়-ছয় করতে গিয়ে ‘নয়-ছয়’ অবস্থা তৈরি হয়েছে পুরো ব্যাংকিং খাতের।

ঋণ বিতরণ ও আমানত সংগ্রহ বৃদ্ধি পেলেও বাড়েনি ঋণ আদায়। খেলাপি ঋণ কমাতে গিয়ে প্রকৃত আদায় বাদ দিয়ে নানা পদ্ধতি ব্যবহার করেছে ব্যাংকগুলো। ভালো ও মন্দ সূচকের মধ্যে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি শেষ পর্যন্ত ব্যাংকের মুনাফায় ধস নামিয়েছে।

প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, আগ্রাসীভাবে ঋণ বিতরণ করায় গত বছর ব্যাংকগুলোর সুদ থেকে আয় হয়েছে ৮৬ হাজার ১৮০ কোটি টাকা। আগের বছর এই আয় ছিল ৭০ হাজার ৬১০ কোটি টাকা। এক বছরের ব্যবধানে সুদ আয় বেড়েছে ১৫ হাজার ৫৭০ কোটি টাকা বা ২২ শতাংশ। এছাড়া আমানতের বিপরীতে সুদ পরিশোধ করায় গত বছর ব্যাংকগুলোর মোট আয় দাঁড়িয়েছে ৫৫ হাজার ১৮০ কোটি টাকা। আগের বছর মোট আয় ছিল ৫১ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। এই আয় থেকে অর্থ নিয়ে খেলাপি ঋণের বিপরীতে প্রভিশন রাখতে হয়েছে ৫০ হাজার ৪৩০ কোটি টাকা। অর্থাৎ খেলাপি ঋণ ব্যাংকগুলোর আয় খেয়ে ফেলেছে।

ব্যাংকগুলোর সুদ আয় ও মোট আয় গত তিন বছর ধরে বাড়ছে। প্রতিবছরই আগের বছরের তুলনায় বেড়ে আসছে। কিন্তু প্রকৃত মুনাফা গত তিন বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন হয়েছে গত বছরই। তবে ২০১৮ সালে পরিচালন মুনাফা দাঁড়িয়েছে ২৬ হাজার ৬৪০ কোটি টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় ৮ শতাংশ বেশি। আগের বছর পরিচালন মুনাফা হয় ২৪ হাজার ৬৫০ কোটি টাকা। এছাড়া খেলাপি ঋণের বিপরীতে প্রভিশন রাখতে গিয়ে নিট মুনাফা সাড়ে ৫৭ শতাংশ কমেছে।

২০১৮ সালে নিট মুনাফা হয়েছে চার হাজার ৪০ কোটি টাকা। অথচ ২০১৭ সালে নিট মুনাফা ছিল নয় হাজার ৫১০ কোটি টাকা, ২০১৬ সালে হয় আট হাজার ৩১০ কোটি টাকা এবং ২০১৫ সালে ব্যাংকগুলোর মুনাফা হয় সাত হাজার ৯২০ কোটি টাকা। অর্থাৎ ২০১৮ সালের আগ পর্যন্ত প্রতিবছরই ব্যাংকগুলোর প্রকৃত মুনাফা বেড়েছে।

ব্যাংকগুলোর স্বাভাবিক কার্যক্রমের পাশাপাশি নেতিবাচক সূচক বেড়েছে ব্যাপক হারে। ব্যাপক হারে খেলাপি ঋণ বৃদ্ধি, পুনঃতফসিল, সুদ মওকুফ ও অবলোপনও বেড়েছে।

প্রতিবেদনে দেখা গেছে, খেলাপি ঋণ কমাতে ব্যাংকগুলো কাগুজে আদায় বেশি দেখিয়েছে। অবলোপন, পুনঃতফসিল, সুদ মওকুফ ইত্যাদি পদ্ধতি ব্যবহার করা হচ্ছে। ২০১৮ সাল পর্যন্ত ব্যাংকগুলো ৫২ হাজার ৮৮০ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ অবলোপন করেছে। শুধু ২০১৮ সালে অবলোপন করা হয়েছে চার হাজার ৬৯০ কোটি টাকা। তবে এই সময় পর্যন্ত আদায় করেছে ১২ হাজার ৭৮০ কোটি টাকা। অবলোপন করা ঋণের পরিমাণ রয়েছে ৪০ হাজার ১০০ কোটি টাকা। খেলাপি ঋণ কমাতে রেকর্ড পরিমাণ পুনঃতফসিল করেছে ব্যাংকগুলো। গত বছর পুনঃতফসিল করা হয়েছে ২৩ হাজার ২১০ কোটি টাকা। যা আগের বছর ছিল ১৯ হাজার ১২০ কোটি টাকা। এক বছরে বেড়েছে ২৪ শতাংশ। বিগত চার বছরের মধ্যে গত বছর সবচেয়ে বেশি পুনঃতফসিল করা হয়েছে। পুনঃতফসিল সুবিধার ৫৮ শতাংশই ভোগ করেছেন বড় শিল্পপতিরা।

এদিকে, ব্যাংকের আমানত ও ঋণের প্রবৃদ্ধির ব্যবধান বাড়ছে। ২০১৪ সালে ঋণের প্রবৃদ্ধি ছিল ১৪ দশমিক ৩ শতাংশ। অন্যদিকে, আমানত বাড়ে ১৩ দশমিক ২ শতাংশ। ২০১৭ সালে ঋণ ১৮ দশমিক ৯ শতাংশ বাড়লে আমানত বাড়ে মাত্র ১০ দশমিক ৬ শতাংশ হারে। সর্বশেষ গত বছর ঋণ বেড়েছে ১৪ শতাংশ, আমানত বেড়েছে ৯ দশমিক ৮ শতাংশ।

বাংলাদেশ সময়: ১৩০০ ঘণ্টা, মে ২৯, ২০১৯
এসই/টিএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।