রোববার (৭ জুলাই) সকাল থেকে আন্দোলনরত কর্মকর্তারা ব্যাংকটির প্রধান কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়েছে বলে জানান একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প (বিলুপ্ত) ও পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. সোলায়মান।
আন্দোলনরতরা জানান, গত ২৭ জুন বোর্ড মিটিংয়ের মাধ্যমে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকে কর্মকর্তা পদে ১৪৯ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়।
একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পে নিয়োগপ্রাপ্ত মাঠ কর্মকর্তা ইমরান হোসেন বাংলানিউজকে জানান, সারাদেশ থেকে প্রায় পাঁচ হাজার পাঁচশ কর্মকর্তা-কর্মচারী আন্দোলনে অংশ নিয়েছেন। তিনি বলেন, আমাদের দিয়ে প্রকল্পের কাজ করানো হয়। ব্যাংকের কাজ করানো হয়। আমরা অনেকেই বিগত আট বছর ধরে কাজ করছি। কিন্তু আমাদের চাকরি স্থায়ী করা হচ্ছে না।
আন্দোলনকারীদের দাবিগুলো হচ্ছে- ২০১৬ সালের ৩০ জুনের আগে নিয়োগ করা একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের সব জনবলকে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকে চাকরি স্থায়ী করে পরিপত্র জারি করতে হবে, স্থানান্তর প্রহসন বন্ধ করে বিগত তিন বছরের ইনক্রিমেন্ট, দৈনিক ভাতা ও সব সুযোগ-সুবিধা দিতে হবে, সব পদের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পদোন্নতি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দিতে হবে, তাদের চাকরি স্থায়ী করার আগে নতুন জনবল (ক্যাশ সহকারী, সিনিয়র অফিসার, উপ-আঞ্চলিক কর্মকর্তা পদে) নিয়োগ দেওয়া যাবে না, নিয়োগ বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতার করতে হবে, উচ্চ আদালতের নিষেধ অমান্য করে দেওয়া নিয়োগ বাতিল করতে হবে এবং আন্দোলনরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কোনো ধরনের হয়রানি করা যাবে না।
আন্দোলনকারীরা বাংলানিউজকে জানান, দাবি আদায় হওয়ার আগ পর্যন্ত তারা মাঠে থাকবেন। প্রয়োজনে তারা প্রেসক্লাবের সামনে আমরণ অনশন কর্মসূচিও পালন করবেন।
সংশ্লিষ্টরা বাংলানিউজকে জানান, চাকরি বিধিমালা অনুযায়ী কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে ব্যাংকে কর্মরতদের প্রথমে চাকরির সুযোগ দেওয়ার কথা থাকলেও তা উপেক্ষা করা হয়েছিল পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকে। ২০১৪ সালে আট হাজার পাঁচশ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়ে এ প্রতিষ্ঠানটি ব্যাংক হিসেবে যাত্রা শুরু করে। তার আগে এই প্রকল্পটির কার্যক্রম পরিচালিত হতো একটি বাড়ি একটি খামার নামে।
সরকারি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ বোর্ড বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটির মাধ্যমে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকে সিনিয়র অফিসার পদে নিয়োগের জন্য ২৭৮ জনকে চূড়ান্ত করা হয়। এদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে ৪ জুলাই।
চাকরি বিধিমালা অনুযায়ী নতুন নিয়োগের ক্ষেত্রে ব্যাংকে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রথমে চাকরির সুযোগ পাবেন। এরপর নতুন কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া যাবে। একইভাবে পদোন্নতির ক্ষেত্রেও কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে কমপক্ষে ৫০ শতাংশ দিতে হবে। বাকি পদে সরাসরি নিয়োগ দিতে হবে।
একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের মাধ্যমে গ্রামের দরিদ্র মানুষের কাছ থেকে তহবিল সংগ্রহ করা হলেও তা জমা রয়েছে ১৬টি ব্যাংকে। চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকের (এমডি) স্বেচ্ছাচারিতায় বন্ধ রয়েছে দারিদ্র বিমোচনে ঋণ বিতরণ কার্যক্রম। এতে ভেস্তে যাচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্নের ক্ষুদ্র সঞ্চয় মডেল।
ফলে প্রকল্পের আওতায় থাকা ৪০ হাজার সমিতি এখন বন্ধের পথে। এতে বঞ্চিত হচ্ছে ২২ লাখ গরিব পরিবার তথা দেড় কোটি মানুষ। সম্প্রতি এ প্রকল্প এবং ব্যাংক প্রকল্পের জন্মলগ্ন থেকে যারা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তুলছে তাদের বঞ্চিত করে নতুন লোক নিয়োগ দিয়েছেন ব্যাংকের চেয়ারম্যান মিহির কান্তি মজুমদার।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের চেয়ারম্যান মিহির কান্তি মজুমদার কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
বাংলাদেশ সময়: ১০২৪ ঘণ্টা, জুলাই ১০, ২০১৯
এসই/এসএ