ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ব্যাংকিং

খেলাপি ঋণ আদায়ে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল প্রতিষ্ঠার দাবি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২৫৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৩, ২০১৯
খেলাপি ঋণ আদায়ে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল প্রতিষ্ঠার দাবি

ঢাকা: খেলাপি ঋণ আদায়ে বিচার প্রক্রিয়ার অকার্যকর অবস্থা ও দীর্ঘসূত্রিতা থাকায় ভালো ফল পাওয়া যাচ্ছে না। এ সমস্যা সমাধানে বিশেষ ‘খেলাপি ঋণ ট্রাইব্যুনাল’ প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন বলে অভিমত জানিয়েছেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ মইনুল ইসলাম।

শনিবার (১২ অক্টোবর) রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) আয়োজিত ‘ব্যাংকিং খাত নিয়ে উল্টোপাল্টা পদক্ষেপ বন্ধ করুন: ব্যাংকিং সংস্কার কমিশন গঠন করুন’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে এ মন্তব্য করেন মইনুল ইসলাম।

এ অর্থনীতিবিধ বলেন, দেশে ব্যাংক ঋণ নিয়ে যে পাতানো খেলা চলছে, তা বন্ধ করতে তিন বছরের জন্য ‘খেলাপি ঋণ ট্রাইব্যুনাল’ প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

এর কাজ হবে ব্যাংকের সর্বোচ্চ ১০ জন খেলাপিকে নিয়ে চূড়ান্ত বিচারে দ্রুত শাস্তির আওতায় নিয়ে আসা।

তিনি বলেন, আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার সুযোগে বিচার প্রক্রিয়াকে বছরের পর বছর ঘুম পাড়িয়ে রাখা যায়। ফলে খেলাপি ঋণের কোনো সুরাহা হচ্ছে না। ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে দীর্ঘসূত্রিতার এমন আপিল রোধ করতে হবে। তবে ঋণের ৫০ শতাংশ ব্যাংকে ফেরত দিলে অভিযুক্তের আপিল করার সুবিধা থাকার পক্ষে মতপ্রকাশ করেন তিনি।  

মইনুল ইসলাম প্রস্তাব করেন, ব্যাংকিং খাতের জন্য আলাদা ন্যায়পাল নিয়োগ করা হবে, যাদের   দুদকের সঙ্গে প্রাতিষ্ঠানিক যোগাযোগ থাকবে। ট্রাইব্যুনালে চূড়ান্ত রায় হলে সহ-জামানত বা বন্ধকি সম্পত্তি নিলাম করার জন্য পুনরায় যে মামলা করতে হয়, তা বাতিল করতে হবে। ব্যাংক মালিক-পরিচালকদের ইনসাইডার লেন্ডিং এবং লোন সোয়াপ বন্ধ করার আইনকে কঠোর করতে হবে। একইসঙ্গে ব্যাংক মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকস-কে বেআইনি ঘোষণা করার পাশাপাশি তাদের লবিং তৎপরতা বন্ধ করতে হবে। তাহলে ব্যাংক ঋণ নিয়ে যে পাতানো খেলা চলছে তা বন্ধ হবে বলে জানান তিনি।

খেলাপি ঋণ হওয়ার পেছনের কারণ সম্পর্কে এ অর্থনীতিবিদ বলেন, ঋণখেলাপিরা নানা সময় সুযোগ বুঝে রাজনৈতিক দল পরিবর্তন করেন। এমনও হয়েছে কোনো কোনো খেলাপি ঋণ পেতে রাজনৈতিক সম্পর্ক ব্যবহারের উদ্দেশ্যে তিনবার পর্যন্ত দল পরিবর্তন করেছেন। ঋণখেলাপি এসব ব্যক্তির মধ্যে শতকরা ৪৬.৪ শতাংশ রাষ্ট্রপতি থেকে মন্ত্রীর সম্পর্ক ব্যবহার করেন, ৩৫.১ সংসদ সদস্য এবং ১৩.৪ শতাংশ ক্ষমতাসীন দলের প্রত্যক্ষ সহায়তায় ঋণ পেয়েছেন। খেলাপি ঋণের ১৫.২১ শতাংশ জিয়াউর রহমানের আমলে, ৪৩.৪৮ শতাংশ এরশাদের আমলে এবং ৩৬.৯৬ শতাংশ খালেদা জিয়ার আমলে দেওয়া হয়। এসব ঋণের মধ্যে ৪৩.৪ শতাংশ ১৯৯১-৯৬ সালের মধ্যে মন্দঋণে পরিণত হয়েছে, আর ৩৫.৮৫ শতাংশ ১৯৯৬ সালে পরম মন্দঋণে পরিণত হয়েছে।

সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারের পরিচালনায় আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- সাবেক মন্ত্রীপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার, ব্যাংকার ও অর্থনীতিবিদ ইব্রাহিম খালেদ, সৈয়দ আবু নাসের বখতিয়ার আহমেদ, কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ, সুজন সভাপতি এম হাফিজ উদ্দিন, অধ্যাপক আবু সাঈদ, রাশেদ আল প্রিতম প্রমুখ।  

বাংলাদেশ সময়: ২২৫৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ১২, ২০১৯
ইএআর/এবি/এইচজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।