ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ব্যাংকিং

৯ শতাংশ সুদহার টেকসই হবে না

শাহেদ ইরশাদ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৫০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৫, ২০২০
৯ শতাংশ সুদহার টেকসই হবে না

ঢাকা: ক্রেডিট কার্ড ছাড়া সব ধরনের ঋণের সুদহার ৯ শতাংশ বাস্তবায়ন করলে তা টেকসই হবে না। বরং ব্যাংকগুলোর আয় ও মুনাফা কমে যাবে। শুধু ঋণ নয়, আমানতের সুদহারও বাজারভিত্তিক না হলে তা কখনই টেকসই হয় না।

বিশ্লেষকরা বলছেন, সুদহারের এই নীতি চলতি বছরের ১ এপ্রিল থেকে বাস্তবায়ন হলে সুদহার না কমে উল্টো তা ব্যাংকিং খাতের কাঠামোকে নষ্ট করবে। উৎপাদন খাতে ঋণের সুদহার ১ জানুয়ারি থেকে ৯ শতাংশ বাস্তবায়নের পূর্ব ঘোষণা দেওয়া হলেও গেলো বছরের ৩০ ডিসেম্বর অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে ব্যাংক মালিকদের এক জরুরি বৈঠকে তা বদলে যায়।

বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন ব্যাংকসের (বিএবি) সঙ্গে ওই বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় ক্রেডিট কার্ড ছাড়া অন্য সব ঋণের সুদহার এক অংকের ঘরে অর্থাৎ ৯ শতাংশ হবে। এই নীতির বাস্তবায়ন হবে ১ এপ্রিল থেকে। যার ফলে নতুন বছরের শুরুতেই ব্যবসা কমে যাওয়ার আশঙ্কায় পড়েছে ব্যাংকগুলো।

এ বিষয়ে মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের (এমটিবি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের কাজ হচ্ছে সিস্টেমে সুদের হারটি ঠিক করে গ্রাহকদের জানিয়ে দেওয়া। আমাদের এতে কোনো সমস্যা নাই। যেহেতু নির্দেশনা এসেছে, আমরা এটি বাস্তবায়ন করবো। সেক্ষেত্রে প্রভাব পড়বে মুনাফায়। প্রায় দেড়শ’ কোটি টাকা আয় কমে যাবে। তার বেশিও কমতে পারে।

সব ব্যাংকের আর্থিক অবস্থা একরকম নয়। আগের ৩০টির মতো ব্যাংক সমস্যা কাটিয়ে যেতে পারলেও নতুন আসা ৯-১০টি ব্যাংকের অবস্থা খারাপ হবে বলে মনে করেন মাহবুবুর রহমান।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে ব্যাংক ভেদে উৎপাদনশীল খাতে সুদহার ১১ থেকে ১৪ শতাংশ, ট্রেডিং খাতে ৯ থেকে ১৬.৫ শতাংশ, ক্ষুদ্র উদ্যোগ ৯ থেকে ১৬ শতাংশ, গৃহ ঋণের সুদহার ১২ থেকে ১৪ শতাংশ, পারসোনাল ঋণের সুদহার ১২ থেকে ১৮ শতাংশ আর ক্রেডিট কার্ডেও সুদহার ১৫ থেকে ২৫ শতাংশ।

ক্রেডিট কার্ড ছাড়া সব ঋণের সুদহারের এই নীতি বাস্তবায়নে ইতোমধ্যে সরকারি আমানতের অর্ধেক ৬ শতাংশ সুদে বেসরকারি ব্যাংকে রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তবে বিদায়ী বছরের এই নীতি কার্যকর করা যাবে না বলে মতামত দিয়েছেন বিশ্লেষকরা।

সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, এটি করা হলে উল্টো সামনের দিনগুলোতে তা ব্যাংকিং কাঠামোকে ঝুঁকিপুর্ণ করে তুলবে। কারণ ব্যাংকগুলো তো জনগণের আমানত নিয়ে লেন্ডিং করছে। যেখানে সঞ্চয়পত্রের সুদহার ৯ শতাংশের বেশি, সেখানে ৯ শতাংশ সুদে কীভাবে ঋণ দেবেন? ব্যাংকাররা এটা বাস্তবায়ন করতে পারবে না। এছাড়া ব্যাংকগুলো ঋণ বিতরণও কমিয়ে দেবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গর্ভনর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, সুদের হারটা কমান্ডভিত্তিক না হয়ে বাজারভিত্তিক হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে ১৯৯১ সালে। এখন আবার কমান্ডে চলে যাচ্ছি, এটা মোটেও ভালো কথা নয়। এক কথায় ৯-৬ শতাংশ সুদে সমাধান হবে না। এটা তো সার্বজনীন না, কিছু লোকের লাভ হবে। বেশিরভাগ লোকের ক্ষতি হবে। কাজেই বাজারের দিকেই যেতে হবে।

ঋণের সুদহার ৯ শতাংশের ঘরে নামিয়ে আনতে দেড় বছর ধরে নানাবিধ সুবিধা দিয়েছে সরকার। করপোরেট কর কমানো হয়েছে আড়াই শতাংশ। কৃষি ও আবাসন ঋণের নিরাপত্তা সঞ্চিতির (প্রভিশন) হার কমানো হয়েছে। বেড়েছে পরিচালকদের মেয়াদ। একই পরিবারের তিনজন পরিচালক থাকতে পারবেন একটানা ৯ বছর।

অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান ও ইস্টার্ন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আলী রেজা ইফতেখার বাংলানিউজকে বলেন, সরকারি আমানত ৬ শতাংশ সুদে পাওয়ার পর আসলে বোঝা যাবে অবস্থাটা কেমন হবে। কারণ কম সুদে আমানত না পেলে লেন্ডিং করা যাবে না। আমরা অপেক্ষা করছি ৬ শতাংশ সুদের আমানতের জন্য।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৪৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৫, ২০১৯
এসই/এইচজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।