ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ব্যাংকিং

এক বছরের ব্যবধানে সুদ মওকুফের পরিমাণ দ্বিগুণ!

শাহেদ ইরশাদ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫১১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৬, ২০২০
এক বছরের ব্যবধানে সুদ মওকুফের পরিমাণ দ্বিগুণ! .

ঢাকা: আয়-ব্যয়ের হিসাব-নিকাশের (ব্যালেন্সশিট) ভারসাম্য দেখাতে বছর বছর ঋণের সুদ মওকুফের পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে ব্যাংকগুলোতে। নিয়ম-নীতি উপেক্ষা করে সুদ মওকুফের কারণে ব্যাংকের আয় কমে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন ব্যাংকাররা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ২০১৯ সালের প্রথম ৯ মাসে ব্যাংকগুলোর মন্দ ঋণের সুদ মওকুফ করার পরিমাণ আগের বছরের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি হয়েছে। প্রায় ৯০০ কোটি টাকার সুদ মওকুফ করেছে ব্যাংকগুলো।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গর্ভনর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, সরকার এবং ব্যাংকের পরিচালকদের সঙ্গে ঋণ খেলাপিদের শক্তিশালী সম্পর্কের জন্য বার বার এ সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। এটি একটি অনৈতিক সুবিধা। সাধারণ ঋণ গ্রহিতারা সহজে এ সুবিধা পান না। উন্নয়নশীল দেশের ব্যাংকগুলো নামেমাত্র এ সুবিধা দিয়ে থাকে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেন, ব্যাংকগুলো মন্দ ঋণ গ্রহিতাদের সুবিধা দেওয়ায় ভালো গ্রাহকদের সমস্যা হয়। সুদ মওকুফ করায় ব্যাংকগুলোর মুনাফায় সরাসরি প্রভাব পড়ছে। গত বছর ব্যাংকগুলো ভালো মুনাফা করেছিল। মুনাফা নিশ্চিত করার জন্য ব্যাংকগুলো অপ্রদর্শিত চার্জ আদায় করতে পারে।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, ভালো এবং ইচ্ছা করে খেলাপিদের সুদ মওকুফ করা বাংলাদেশের সংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে।

ফাহমিদা খাতুন বলেন, বড় অংকের সুদ মওকুফ করায় ব্যাংকের বাণিজ্যিক সুশাসেনর ওপর প্রভাব পড়ছে। সুদ মওকুফের প্রবণতা খেলাপি ঋণ বাড়ার পেছনে ভূমিকা পালন করছো।  

চলতি বছরের সেপ্টেম্বর শেষে দেশের ব্যাংকিং খাতের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১ লাখ ১৬ হাজার ২৮৮ কোটি ৩১ লাখ টাকা। যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ২৩ শতাংশ বেশি। ব্যাংকগুলো সুদ মওকুফ করে ব্যালেন্সশিটে ভারসাম্য রাখছে। তবে সুদ মওকুফের কারণে ব্যাংকের স্বাস্থ্যে দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব পড়বে।

খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ এবং সালেহউদ্দিন উভয়ই বলেছেন, ইচ্ছা করে খেলাপিদের এভাবে ছাড় না দিয়ে খেলাপি ঋণ আদায়ের ওপর জোর দেওয়ার উচিত।  

ব্যাংক এশিয়ার ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরফান আলী বলেন, ব্যাংকগুলো কোনো ঋণ যদি এককালীন আদায় করতে পারে তাহলে সুদ মওকুফ করে। কিন্তু ব্যাংকগুলো সুদ মওকুফের ক্ষেত্রে এ নীতি অনুসরণ করছে না। একারণে ব্যাংকগুলোর আয়ের ওপর প্রভাব পড়ছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকগুলো ৮৫৮ কোটি টাকার সুদ মওকুফ করেছে। এর মধ্যে বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলো মওকুফ করেছে ৬৩৯ কোটি টাকা। আগের বছরের তুলনায় মওকুফের পরিমাণ বেড়েছে ১৩১ কোটি টাকা।

রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সোনালী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক, বেসিক ব্যাংক ও বাংলাদেশ ডেভলপমেন্ট ব্যাংক (বিডিবিএল) মওকুফ করেছে এই টাকা। যা আগের বছরের (২০১৮ সাল) একই সময়ের তুলনায় ২০শতাংশ বেশি।

অন্যদিকে, ২০১৯ সালের প্রথম ৯ মাসে বিদেশি খাতের ব্যাংকগুলো মওকফু করেছে ২৩ কোটি টাকা। যা আগের বছরের তুলনায় ৯ দশমিক ৩৬শতাংশ বেশি। ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকগুলো সুদ মওকুফ করেছিল ৪২১ কোটি টাকা।  

বাংলাদেশ সময়: ১০১১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৬, ২০২০
এসই/ওএইচ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।