ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বইমেলা

অপেক্ষা বইমেলার

মহিউদ্দিন মাহমুদ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৩৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩১, ২০১৪
অপেক্ষা বইমেলার

ঢাকা: বাংলা একাডেমির মূল চত্বর ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান জুড়ে ভিন্ন আঙ্গিকে, আগের চেয়ে অনেক বড় পরিসরে অমর একুশে বইমেলা ২০১৪’র সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। তবে পয়ঃনিষ্কাশন ও খাবার পানির ব্যবস্থাসহ কিছু ত্রুটি এখনো রয়ে গেছে এবারের মেলায়।

 

শুক্রবার সকালে বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে মেলা প্রস্তুতির কথা জানান বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান।

 

শামসুজ্জামান খান বলেন, এবার ভিন্ন আঙ্গিকে, ভিন্ন পরিবেশে বই মেলা হতে যাচ্ছে। বাংলা একাডেমির ভিতর গিঞ্জি পরিবেশ থেকে মেলাকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সম্প্রসারিত করা হয়েছে। এটা সময়ের দাবি ছিলো।

 

মেলা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গেলেও বইমেলা বাংলা একাডেমি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে না। বরং এর মাধ্যমে মেলাকে আর্ন্তজাতিক মানের করা যাবে।



এক্ষেত্রে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বড় পর্দার ব্যবস্থা করা হবে বলেও জানান তিনি।

 

কিছু সমস্যার কথা স্বীকার করে নিয়ে তিনি বলেন, বইমেলাকে আমরা যতটা নিখুঁত করতে চাই ততটা এবার করা সম্ভব হবে না। নতুন জায়গা, পরীক্ষা নিরীক্ষার বিষয় আছে।

 

এদিকে ৩১ জানুয়ারি দুপুর ১২টার মধ্যে স্টল তৈরির কাজ শেষ করার কথা থাকলেও এখনো শেষ হয়নি অনেক স্টলের কাজ। অনেকের ক্ষেত্রে স্টল তৈরির কাজ শেষ করতে মেলার শুরুর পরও কয়েকদিন লেগে যেতে পারে।

 

এ সমস্যা সমাধানে আগামীতে দোকান বরাদ্দে টেন্ডার বেশ সময় নিয়ে করার কথা বলেন বাংলা একাডেমির ডিজি।

মেলায় বহুজাতিক কোম্পানিসহ কোনো কোম্পানির বিজ্ঞাপন ব্যবহারের ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকলেও বিলবোর্ড ও দোকানের সাইনবোর্ডে অনেকে এ ধরনের বিজ্ঞাপন ব্যবহার করছেন।  

 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে শামসুজ্জামান খান বলেন, সন্ধ্যায় বই মেলা পরিচালনা কমিটির মিটিং এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

সংবাদ সম্মেলনে বাংলা একাডেমির সচিব ও বইমেলার নিরাপত্তা বিষয়ক কর্মকর্তা আলতাফ হোসেন জানান, বইমেলাকে ঘিরে গোটা এলাকায় কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বইমেলার প্রবেশ পথগুলোতে আর্চওয়ে বসানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। নিরাপত্তার জন্য মেলা প্রাঙ্গণে একটি র‌্যাব ক্যাম্প থাকবে।  

 

এছাড়া মেলার সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবে পুলিশ, র‌্যাব, আনসার ও গোয়েন্দা সংস্থা। নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে মেলা প্রাঙ্গণে ক্লোজসার্কিট ক্যামেরার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

 

বইমেলাকে পলিথিন ও ধূমপানমুক্ত রাখা হবে বলেও জানান তিনি।

 

পয়ঃনিষ্কাশন ও খাবার পানির ব্যবস্থার ত্রুটি প্রসঙ্গে আলতাফ হোসেন বলেন,  আমরা এ সমস্যা থেকে উত্তরণের চেষ্টা করছি। এ বিষয়ে গণপূর্ত এবং ওয়াসার সঙ্গে কথা হয়েছে।  

 

বাংলা একাডেমির পরিচালক ও বইমেলার পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব শাহিদা খাতুন জানান, এবারের বই মেলায় ২৯৯টি প্রতিষ্ঠানকে ৫৩৪টি ইউনিট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ২৩২টি মূল প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানকে ৪৩২টি ইউনিট, বাংলা একাডেমির ভিতরের অংশে ২৪টি শিশু-কিশোর প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানকে ৩৩টি ইউনিট, সরকারি প্রতিষ্ঠান, মিডিয়া ও অন্যান্য ৪৩টি প্রতিষ্ঠানকে ৬৯টি ইউনিট এবং উন্মুক্তসহ ৫৫টি লিটল ম্যাগাজিনকে লিটল ম্যাগাজিন কর্নারে জায়গা দেওয়া হয়েছে। নজরুল মঞ্চের সামনে শিশু কর্নারে থাকবে শিশু-কিশোর বিষয়ক প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান।

 

শনিবার বেলা ৩টায় মেলার উদ্বোধনের পর থেকে সবার জন্য উম্মুক্ত করে দেওয়া হবে মেলা। মেলার উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

 

এবারের বই মেলা সদ্যপ্রয়াত ভাষাসংগ্রামী, লেখক-গবেষক, বাংলা একাডেমির ফেলো, বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমানকে উৎসর্গ করা হয়।

 

মেলা চলবে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। বইমেলা প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। ছুটির দিন বেলা ১১টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত এবং ২১ ফেব্রুয়ারি সকাল ৮টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত বইমেলা খোলা থাকবে।

 

এবারের বইমেলায় ৪দিন শিশু প্রহর ঘোষণা করা হবে।

 

২ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রতিদিন বিকেল ৪টায় বইমেলার মূল মঞ্চে সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে।

 

মাসব্যাপী মেলায় প্রতিদিন সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান থাকবে। এছাড়া মেলা উপলক্ষ্যে বাংলা একাডেমি শিশু-কিশোর চিত্রাঙ্কন, সংগীত, সাধারণ জ্ঞান  ও উপস্থিত বক্তৃতা প্রতিযোগীতার আয়োজন করেছে।

 

পুরো মেলা প্রাঙ্গণকে সালাম, রফিক, জব্বার, বরকত ও শফিউর ভাষা শহীদ চত্বর, রবীন্দ্র, নজরুল, আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদ, ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ, সোমেন চন্দ, রোকেয়া, সুফিয়া কামাল, ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত চত্বর এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি লাভের অন্যতম প্রস্তাবক প্রয়াত রফিকুল চত্তরে বিন্যস্ত করা হয়েছে।  

 

মেলায় তথ্যকেন্দ্রের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় তথ্য সরবরাহের ব্যবস্থার পাশাপাশি মূল মঞ্চ থেকে মোড়ক উন্মেচনসহ সর্বশেষ তথ্য সরবরাহ করা হবে। বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি মিডিয়া মেলার কার্যক্রম সম্প্রচার করবে।  

 

বইমেলায় ৬৫টি নতুন বই প্রকাশ করতে যাচ্ছে বাংলা একাডেমি।

 

মেলায় বাংলা একাডেমির বই ৩০ শতাংশ কমিশনে এবং অন্য প্রতিষ্ঠানের বই ২৫ শতাংশ কমিশনে বিক্রি করা হবে।

 

এবার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানেই বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ও ফেলোশিপ প্রদান করা হবে।

 

এবার বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার প্রাপ্তরা হলেন- কবিতায় হেলাল হাফিজ, কথাসাহিত্যে পূরবী বসু, প্রবন্ধে মফিদুল হক, গবেষণায় জামিল চৌধুরী ও প্রভাংশু ত্রিপুরা, অনুবাদে কায়সার হক, মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক সাহিত্যে হারুন হাবীব, স্মৃতিকথা ও ভ্রমণ কাহিনিতে মাহফুজুর রহমান, বিজ্ঞান প্রযুক্তি পরিবেশ এ শহিদুল ইসলাম, শিশুসাহিত্যে কাইজার চৌধুরী ও আসলাম সানী। তবে নাটকে এ বছর কেউ পুরস্কার পাননি।

 

আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন মূকাভিনয় শিল্পী পার্থপ্রতিম মজুমদারকে বাংলা একাডেমির সম্মানসূচক ফেলোশিপ প্রদান করা হবে।

বাংলাদেশ সময়:  ১৫৪২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩১, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।