বইমেলা থেকে: বিকেল সাড়ে ৪টা। বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ থেকে বেরিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মেলার প্রবেশ দ্বারে পৌঁছাতে প্রাণ ওষ্ঠাগত।
ভাষার জন্য আত্মদানের দিন '২১ ফেব্রুয়ারি’র আগের বিকেলে বাংলা একাডেমির অমর একুশে গ্রন্থমেলায় তিল ধারণের জায়গটুকু ফাঁকা নেই। মেলার দুই অংশেই পাঠক, দশর্নার্থী, লেখক ও প্রাকশকদের প্রচণ্ড ভিড়।
এই ভিড়ই বলে দিচ্ছে ঘড়ির কাটা রাত ১২টার ঘর স্পর্শ করলেই বাঙালি জাতির মহান গৌরবের দিন অমর একুশের প্রথম প্রহর শুরু হবে।
তাই বইয়ের টানে মেলায় আসা মানুষগুলোর হৃদয়ে এখনই দোল খাচ্ছে অমর একুশে ফেব্রুয়ারির আমেজ, উত্তেজনা, চেতনা।
বিকেল পৌনে ৫টার দিকে ভিড় ঠেলে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ঢোকার পর দুই তরুণী তাদের মোবাইলফোনটি হাতে দিয়ে অনুরোধ জানান একটি ছবি তুলে দেওয়ার জন্য। কিন্তু ছবির যে ব্যাকগ্রাউন্ড তারা চাচ্ছিলেন তা কিছুতেই ক্যামেরার ফ্রেমে আনা যাচ্ছিলো না। মানুষের প্রচণ্ড ভিড়ে বার বার হারিয়ে যাচ্ছিল তাদের কাঙ্ক্ষিত ব্যাকগ্রাউন্ড।
![](files/February_2015/February_20/MELAbom_Banglanews24_940233882.jpg)
অগত্যা হুমায়ূন আহমেদের আলোকচিত্রের সঙ্গে বেশ কয়েকজন হুমায়ূন ভক্ত ওই দুই তরুণীর ছবির ব্যাগ্রাউন্ডে ধরা পড়লো।
একুশের আগের বিকেলে মেলার দুই অংশে এমন ভিড় সম্পর্কে ওই দুই তরুণীর প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে বলেন, ‘আর কয়েকঘণ্টা পরেই তো শুরু হবে একুশের প্রথম প্রহর। তাই ভাষার প্রতি যাদের প্রগাঢ় টান; তারা ঘরে বসে থাকবে কেন? তাছাড়া আজ ছুটির দিন হওয়ায় সব শ্রেণী-পেশার মানুষ মেলায় আসার সুযোগ পেয়েছে। ’
দেখতে হুবহু এক। পোশাক-আশাকে শতভাগ মিল। চলন বলনেও তাই! যেন মানুষের ফটোকপি মানুষ! সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের অস্থায়ী ফোয়ারার সামনে দাঁড়িয়ে ছবি তুলছিলেন তারা।
![](files/February_2015/February_19/MELAboim2_Banglanews24_397972373.jpg)
এগিয়ে গিয়ে নাম জিজ্ঞেস করতেই দুইজোড়া ঠোঁট এক সঙ্গে বলে ওঠে, আমার নাম মিতালী, আমার নাম গিতালী।
জমজবোন মিতালী আর গিতাল এসেছেন উত্তরা থেকে। একুশে ফেব্রুয়ারি প্রচণ্ড ভিড় হবে মেলায়। তাই একদিন আগেই পছন্দের বইগুলো কিনতে হবে। কিন্তু মেলার এই ভিড় দেখে চোখ চড়কে উঠেছে ওদের। এত্ত মানুষ মেলায়!
গিতালীর অভিব্যক্তিটা ছিলো এমন-‘বাব্বারে!!!!! মেলায় ঢোকার সময় জান বেরিয়ে যাওয়ার উপক্রম। আজ (২০ ফেব্রুয়ারি) এই অবস্থা, কাল (২১ ফেব্রুয়ারি) কী হবে?
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মেলার সবচেয়ে খোলা-মেলা জায়গায় যখন পা ফেলানোর জো নেই, তখন বাংলা একাডেমির ছোট্ট প্রাঙ্গণের অবস্থাটা কী?- তা দেখার জন্য বিকেল সাড়ে ৫টায় একাডেমি চত্বরে যাত্রা।
অতঃপর আর্চওয়ে পার হয়ে মূলমঞ্চের সামনে দিয়ে পুকুর পারের দিকে এগুতেই জান জেরবার।
এরই মধ্যে বাংলা একাডেমির তথ্যকেন্দ্র থেকে ভেসে আসছে, ‘প্রিয় পাঠক দর্শনার্থী, আপনরা মেলায় এসেছেন, বই কিনছেন, গল্প করছেন, আড্ডা দিচ্ছেন-আমরা প্রচণ্ড রকমভাবে তা উপভোগ করছি। সঙ্গে যারা বাচ্চা নিয়ে আসছেন, তাদের জন্য বলছি, আপনার বাচ্চাটাকে শক্ত করে ধরে রাখুন, কোনো অবস্থাতেই ছাড়বেন না!
এই ঘোষণা যখন চলছে, ঠিক তখন ইডেন মহিলা কলেজের ছাত্রী সোনিয়া রহমান হন্যে হয়ে খুঁজে ফিরছেন তার সঙ্গে থাকা সহপাঠীকে। মেলার ভিড়ে কখন তাকে হারিয়ে ফেলেছেন বুঝতে পারেননি তিনি।
বাংলানিউজের কাছে মেলার ভিড় সম্পর্কে সোনিয়া রহমানের অভিব্যক্তি অনেকটা এ রকম-‘যে কোনো ধরনের মেলাই হোক, লোকে লোকারণ্য না হলে মজা লাগে না। সহপাঠী যে হারিয়ে গেছে, তাকে অবশ্যই খুঁজে পাবো। কিন্তু ভিড়ের মধ্যে মেলায় আসার যে আনন্দ, সেটি মিস করলে আর ফিরে পাওয়া যাবে না। ’
বাংলাদেশ সময়: ১৮৩৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২০, ২০১৫
** মধুসূদনকে বিকৃত উপস্থাপন বাংলা একাডেমির!