ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বইমেলা

রক্তদানের ৬৪ বছর, আইনের ২৯ বছরেও নেই সর্বস্তরে বাংলা

ইলিয়াস সরকার, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৩১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১, ২০১৬
রক্তদানের ৬৪ বছর, আইনের ২৯ বছরেও নেই সর্বস্তরে বাংলা ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: ভাষার জন্য রক্তদানের ৬৪ বছর আর আইন প্রণয়নের ২৯ বছর পরও দেশে সর্বস্তরে বাংলা ভাষার প্রচলন সম্ভব হয়নি। বেসরকারিভাবে বলা চলে বাংলাভাষার ব্যবহার অপেক্ষাকৃত কমছেই।

আর সরকারি কাজ কর্মে এখনও থেকে গেছে ইংরেজি ভাষার ব্যবহার। সাইনবোর্ডে বিনা দরকারেও বিদেশি ভাষার ব্যবহার হচ্ছে অহরহ। আর অনেক প্রতিষ্ঠানের নামটিও থেকে গেছে ইংরেজিতে।

এ নিয়ে আদালতের নির্দেশনা থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। আর খোদ আদালতেই এখনও বিচারের রায় লেখা হচ্ছে ইংরেজিতে।
 
২০১৩ সালে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা ছিলো সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান পরপর্যায়ক্রমে বাংলার প্রচলন করতে হবে। ইংরেজি নামগুলো বদলে ফেলতে হবে। তবে কিছু ব্যাংক বীমা প্রতিষ্ঠান ওই নির্দেশনার পর তাদের ইংরেজি নাম পাল্টাতে পারবে না মর্মে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে। যা নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে।
 
আদালতে রিট আবেদনটি করেছিলেন আইনজীবী ড.মো.ইউনুচ আলী আকন্দ। তিনি ক্ষোভের সঙ্গে বাংলানিউজকে বলেন, ৫২ সালে রক্ত দিয়ে ভাষা পেয়েছি। কিন্তু সর্বত্র এ ভাষার প্রচলন হলো না। ১৯৮৭ সালে আইনও করা হয়েছে। কিন্তু সরকারের তাতেও তোয়াক্কা নেই। কি করবো বাধ্য হয়ে আদালতের দ্বারস্থ হলাম। আদালতও আদেশ দিলো সর্বস্তরে বাংলাভাষা ব্যবহারের পক্ষে। কিন্তু সে আদেশও অমান্য হয়ে চলছে। বিবাদীরা বাস্তবায়ন নিয়ে করছি-করবো বলে গরিমসি করছে। শুধু সময় নিচ্ছে। কেউ কেউ  আবার আপিলও করেছেন তারা ইংরেজি নাম পরিবর্তন করবেন না বলে। এর মধ্যে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক এ মামলায় বিবাদী হয়েছে।

তবে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তাপস কুমার বিশ্বাস বলেন, পর্যায়ক্রমে আদালতের আদেশ বাস্তবায়ন হচ্ছে।

বাংলা ভাষা প্রচলন আইন, ১৯৮৭  এর ৩ (১) এ বলা হয়েছে, ‘এই আইন প্রবর্তনের পর বাংলাদেশের সর্বত্র তথা সরকারী অফিস, আদালত, আধা-সরকারী, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান কর্তৃক বিদেশের সাথে যোগাযোগ ব্যতীত অন্যান্য সকল ক্ষেত্রে নথি ও চিঠিপত্র, আইন আদালতের সওয়াল জবাব এবং অন্যান্য আইনানুগত কার্যাবলী অবশ্যই বাংলায় লিখিতে হইবে। ’

‘(২) ৩(১) উপ-ধারায় উল্লেখিত কোন কর্মস্থলে যদি কোন ব্যক্তি বাংলা ভাষা ব্যতীত অন্য কোন ভাষায় আবেদন বা আপিল করেন তাহা হইলে উহা বেআইনি ও অকার্যকর বলিয়া গণ্য হইবে। ’

‘(৩) যদি কোন কর্মকর্তা বা কর্মচারী এই আইন অমান্য করেন তাহা হইলে উক্ত কার্যের জন্য তিনি সরকারী কর্মচারী শৃঙ্খলা ও আপীল বিধির অধীনে অসদাচরণ করিয়াছেন বলিয়া গণ্য হইবে এবং তাহার বিরুদ্ধে সরকারী কর্মচারী শৃঙ্খলা ও আপীল বিধি অনুসারে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হইবে। ’
 
ইউনুচ আলী বলেন, সরকারি কর্মকর্তা বা কর্মচারী এই আইন ঢালাউভাবে অমান্য করলেও এপর্যন্ত কারও বিরুদ্ধে সরকারি শৃংখলা ও আপিল বিধি অনুসারে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। উক্ত আইন বাস্তবায়নে সরকার নিষ্ক্রিয় এবং  সরকার কোন কোনো ক্ষেত্রে কোন পদক্ষেপই নিচ্ছে না।

সরকারের কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের নাম, চিঠিপত্র আদান প্রদান, আইন আদালতের সওয়াল জবাব এবং অন্যান্য আইনানুগত কার্যাবলী বাংলায় লিখিত হচেছ না। সরকারি ব্যাংকসহ অন্যান্য ব্যাংকের কার্যক্রমও বাংলা ভাষায় প্রচলন হচ্ছে না।

কিছু কিছু ক্ষেত্রে ইংরেজি শব্দ দিয়ে আইনও  করা হচ্ছে। উদাহরণ স্বরূপ সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর আগেও ইংরেজিতে নাম ছিলো “বাংলাদেশ রাইফেলস। নতুন নামকরণের সময় সেটি বাংলায় রূপান্তরের সুযোগ থাকলেও তা করা হয়নি।   ‘বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ’ (বিজিবি) নামে ইংরেজি শব্দ দিয়েই আইন পাশ করা হয়েছে। যা সংবিধানের ৩/৭/২৬ অনুচ্ছেদের সঙ্গে  সাংঘর্ষিক।

দৈনিক পত্রিকা, টেলিভিশনসহ অন্যান্য মিডিয়ার বিজ্ঞাপনেও বাংলার পরিবর্তে ইংরেজি ব্যবহার দেখা যায়।

এসব বিষয় নিয়েও হাইকোর্টে রিট করেন ইউনুচ আলী। রিটের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট ইলেকট্রিক সাইনবোর্ড, বিলবোর্ড ও গাড়ির নাম্বার প্লেট এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় ইংরেজি সংবাদ ছাড়া সব অনুষ্ঠান ও বিজ্ঞাপনে বাধ্যতামূলভাবে বাংলা ভাষা ব্যবহারের আদেশ দেন।

এছাড়া স্বরাষ্ট্র সচিব ও পুলিশ বিভাগকে তাদের অধীনস্থ সকল বিভাগে ইংরেজিতে লেখা সকল নেমপ্লেট, নাম্বারপ্লেট ও সাইনবোর্ডও অপসারণ করতে নির্দেশ দেন আদালত।
 
তবে ভালো উদাহরণও রয়েছে। আদালতের এই নির্দেশ পালনে সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে পুলিশ বিভাগ। সূত্র জানিয়েছে, উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুসারে বেশিরভাগ সাইনবোর্ডসহ বিভিন্ন কাজে বাংলার ব্যবহার নিশ্চিত করেছে পুলিশ কর্তৃপক্ষ। এমনকি পুলিশ বিষয়ক বিভিন্ন আইন কানুন বাংলায় পরিবর্তন করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে এই বিভাগ।
 
পুলিশ সদর দফতরের এআইজি ডেভেলপমেন্ট  গাজী মো. মোজ্জাম্মেল হক বাংলানিউজকে জানান, পুলিশের সকল স্থাপনা, সাইনবোর্ড বাংলায় করা হয়েছে। কেবল মাত্র যে সকল সংস্থার সাথে বিদেশি নাগরিকদের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে সেসব প্রতিষ্ঠানে বাংলার পাশাপাশি ইংরেজি লেখা রাখা হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ০৮২৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০১, ২০১৬
ইএস/এমএমকে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।