অমর একুশে গ্রন্থমেলা থেকে: এবারের বইমেলার বিভিন্ন দিক নিয়ে সাধারণ পাঠক, লেখক-প্রকাশকদের সন্তুষ্টি থাকলেও মেলায় খাবারের হোটেল মাত্র একটি। আর দামও চড়া।
প্রতিবারের মতো এ বছরও দু’ভাগে ছড়িয়েছে মেলা; বাংলা একাডেমি অংশ এবং বিশাল পরিসরের সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। তবে পুরো মেলায় ক্যান্টিন রয়েছে মাত্র একটি। তাও আবার বাংলা একাডেমি অংশে। যার পরিচালনার দায়িত্ব বাংলা একাডেমি কর্মচারী ইউনিয়নের। তারা নিজেরাই মূল্য নির্ধারণ করেছে খাদ্যপণ্যের, যা বাইরের তুলনায় প্রায় দুই-তিনগুণ।
এদিকে মেলা উপলক্ষে ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র-টিএসসি থেকে বিপরীত পাশের শিশু একাডেমি-দোয়েল চত্বর পর্যন্ত উঠিয়ে দেওয়া হয়েছে সব রকম দোকান, এমনকি টঙও। দুই প্রাঙ্গণে (মেলার) দায়িত্বরত দুই উপ-পরিদর্শকের (এসআই) দাবি, দোকান উঠানো হয়েছে নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনা করে। এতে একটি মাত্র ক্যান্টিনে বাধ্য হয়েই যেতে হচ্ছে আগতদের। তারপর আবার খাবারের দাম নিয়ে অভিযোগ রয়েছে ঢের। ধুলাবালি, পরিবেশ নিয়েও মন্তব্য কম নয়।
রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থেকে মেলায় এসেছিলেন মো. আবদুল বারী। সঙ্গে তার দুই সন্তান ও স্ত্রী। সারাটা সময় মেলা ঘুরে সন্ধ্যার পর ক্যান্টিনে বসে পরোটা-শিক চাইলেন (অর্ডার দিলেন)। চাহিদা মতো দেওয়াও হলো। তবে পরোটাকে- লুচি বললেই ভালো হতো- মত দেন আবদুল বারী।
তিনি বলেন, এটি পরোটা নয়। আকারে এতো ছোট যে লুচি বলতে হবে, কিন্তু মূল্য ১০ টাকা করে। আর শিক কাবাবের দাম ২২০ টাকা, যা অত্যধিক চড়া। বাইরে কোথাও এতো দাম হয় না শিকের।
‘পরিবার নিয়ে পুরো মেলা আনন্দের সঙ্গে ঘুরে শেষে এতো দাম দিয়ে খেতে হবে তা বুঝতে পারিনি,’ যোগ করেন তিনি।
এক প্লেট ফুচকা ৮০ টাকা। দাম শুনেই দ্রুত হাঁটা ধরলেন দুই যুবক। যাওয়ার পথে বলে গেলেন, দাম শুনেই খেতে আগ্রহী নই। আর কিছু বলা যাবে না- আসি আসি...।
আজিবুর রহমান নামে এক ব্যক্তি তার ছোট দুই ভাই মেহেদী ও শাহ সুলতানকে নিয়ে মেলায় আসেন। কফি খাচ্ছিলেন। খেতে খেতে বাংলানিউজকে বললেন, ছোট্ট একটা ওয়ান টাইম ইউজ (এক বার ব্যবহারযোগ্য) কাপে কফি দিলো, মূল্য ৩০ টাকা। এতো বেশি দাম হয় কী করে! বইমেলা তো বাণিজ্য মেলা নয়! এই মেলা ভাষার, চেতনার, ইতিহাসের- কর্তৃপক্ষ কেন বেশি মূল্যে খাদ্য বিক্রি করে পাঠকদের এতো ভোগাবে!
ক্যান্টিনের সমন্বয় করছেন কর্মচারী ইউনিয়নের সহ-সভাপতি সুরাইয়া আক্তার। আর কোষাধ্যক্ষ হিসেবে আছেন ইউনিয়ন সদস্য আকলিমা আক্তার। খাদ্যের অতিরিক্ত দামের বিষয়ে তারা এড়িয়ে যান। সঙ্গে জানিয়ে দেন, একাডেমির কর্মীদের জন্য সব খাদ্য অর্ধেক মূল্যে বিক্রি হচ্ছে, শুধু পরিচয় দিলেই হবে।
বিভিন্ন খাদ্যপণ্যের মধ্যে রয়েছে- অর্ধেক চিকেন টিকা ২২০ টাকা, হাঁসের মাংস ২০০ টাকা, চিকেল ঝাল ফ্রাই ২০০ টাকা, গরু ভুনা ২০০ টাকা, চটপটি ৭০ টাকা, দই ফুসকা ১০০ টাকা, সাধারণ ফুসকা ৮০ টাকা, চিকেন বিরিয়ানি ১৫০ টাকা, হালিম ৮০ টাকা, লুডুলস ২০০ টাকা, বার্গার ৮০ টাকা, পিজা ১২০ টাকা, পিঠা ৩০ টাকা, ড্রিংস ৪০ টাকা ও কফি ৩০ টাকা। বাইরের মূল্য থেকে প্রতিটি খাদ্যেই রয়েছে অতিরিক্ত দাম।
অন্বেষা প্রকাশনের প্রধান নির্বাহী মোহাম্মাদ শাহাদাত হোসেনের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা হয় বাংলানিউজের। তিনি শুনেই ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এটিকে অব্যবস্থাপনা উল্লেখ করে বলেন, এতো বড় সোহরাওয়ার্দী অংশ, কোথাও কোনো খাবারের ব্যবস্থা নেই। শুধু তাই নয়- নেই বসার স্থানটুকুও। নারী-শিশুরা সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ঘুরে বসতে পারছেন না, খেতে পারছেন না। তবে মানুষকে আমরা কী সেবা দিচ্ছি!
মেলা আয়োজনে প্রকাশক কমিটিতে থাকা শাহাদাত হোসেন বলেন, মানুষ খাবে-বসবে তবেই না মেলার পুরো আনন্দ নিতে পারবে। সোহরাওয়ার্দীতেও একটি ক্যান্টিন হওয়ার কথা ছিল কিন্তু তা হয়নি কেন বলতে পারছি না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক প্রকাশক বলেন, মেলাকে কেন্দ্র করে বাংলা একাডেমির একটি অংশ অর্থ কামাতে চায়।
তিনি বলেন, আমরা বাসা থেকে মুড়ি-চানাচুর নিয়ে আসি সন্ধ্যার জন্য। কিন্তু পাঠক-দর্শনার্থীদেরও কি বাসা থেকে খাবার বেঁধে নিয়ে আসতে হবে!
বাংলা একাডেমির পরিচালক ও মেলা আয়োজক কমিটির সদস্য সচিব ড. জালাল আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, ক্যান্টিনে কেউ যদি দাম বেশি নিয়েই থাকেন- আর এমন অভিযোগ আসে, তাহলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দাম কমানো উচিত, এতো বেশি তো রাখার কোনো কারণ নেই।
বাংলাদেশ সময়: ১৪০৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০১৬
আইএ/জেডএম