ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বইমেলা

শেষ হইয়াও হইলো না শেষ

সাজেদা সুইটি, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১২৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০১৬
শেষ হইয়াও হইলো না শেষ ছবি: দীপু মালাকার / বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

অমর একুশে গ্রন্থমেলা থেকে: এ যেন বিশ্বকবির ছোটগল্প, মাসজুড়ে যা একটু একটু করে পরিণতি পায়, কিন্তু শেষ হয়েও যেন শেষ হয় না, মনে অতৃপ্তি রেখে দেয়।

রোববার (২৮ ফেব্রুয়ারি) মেলার ২৮তম দিন, শেষ দিনের আগের দিনও বলা চলে।

একইসঙ্গে শেষের সুর, আর অপেক্ষার পালাও যেন শুরু হলো।
 
লেখক, প্রকাশক, স্টলকর্মীদের অনেকেই বিষণ্নতার কথা জানান বাংলানিউজের সঙ্গে আলাপে। অনেকেই বলছেন, সবটুকু ঠিক ছিল, মাঝে বৃষ্টি মন খারাপ করিয়ে দিয়ে গেলো। লোকসান গোনা প্রকাশকদের অনেকের মনেই অভিমান, যদিও তারা জানেন, প্রকৃতি নিয়ন্ত্রণ মানুষের কর্ম নয়।
 
বাস্তবতাও জানেন তারা, সবকিছু ছাপিয়ে আগামী বছরের অপেক্ষা তাই মনে, আরও ভালো কিছুর অপেক্ষা।
 
কম দামের আশায় স্টলে বইপ্রেমীরা
 ‘মেলার শেষের দিকে বই নিশ্চয়ই কিছু কম দামে পাওয়া যাবে, এমন ভেবেই এসেছিলাম। কিন্তু সেভাবে দাম কম পাচ্ছি না। শুধু একটা বই ৪০০ টাকা দামের, তারা ৩০০ টাকায় দিয়েছে। এটা দাম কমিয়ে রেখেছে, নাকি যত শতাংশ কম রাখার কথা সেটাই রেখেছে, জানি না’- বলছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী জসিম উদ্দিন।
 
যথারীতি অন্যপ্রকাশ, তাম্রলিপি, অনন্যা, অন্বেষা, যুবজাগরণসহ কয়েকটি স্টলে ভিড় দেখা গেছে এদিনও। কেউই দাম কমিয়ে বই দিচ্ছেন না বলে জানালেন।
 
শেষের বিষণ্নতা, আবার অপেক্ষার আনন্দও
অনন্যার স্টলে লেখক ইমদাদুল হক মিলন অটোগ্রাফ দেওয়ার অবসরে বলছিলেন, মেলা আমাদের কাছে খুব পবিত্র একটি বিষয়। প্রতি মেলার শেষে মনটা কিছুটা বিষণ্ন হয়, কিন্তু আরেক মেলার অপেক্ষায় থাকি।
 
তরুণ লেখিকা জান্নাতুন নাঈম প্রীতি বললেন, শেষ হতে চললো মেলা, মনটাতো একটু খারাপ লাগছেই। বইমেলা আমাদের কাছে উৎসবের মতো। তবে শেষ হওয়া মানেইতো শেষ নয়, সামনের বছরটির অপেক্ষা শুরু।
 
তাম্রলিপির প্রকাশক একে এম তারিকুল ইসলাম রনি বলেন, বৃষ্টিতে ছন্দপতন ঘটেছে বলে অনেকেরই লোকসান হয়েছে। তবে সার্বিক বিচারে মেলা ভালো হয়েছে। শেষের দিকে এসে আগামীতে আরও ভালো মেলার আশা করছি। আমরা আশায় বেঁচে থাকি।
 
নিরাপত্তায় নির্বিঘ্নে সমাপ্ত হচ্ছে বইমেলা: ডিএমপি কমিশনার
 
শেষ বিকেলে মেলা পরিদর্শনে আসেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া।

সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপে তিনি বলেন, জোরদার নিরাপত্তা থাকায় বইমেলা নির্বিঘ্নে শেষ হচ্ছে। প্রথম থেকে আমাদের বিপুল সংখ্যক সদস্য এখানে কর্মরত রয়েছেন। এ পর্যন্ত কোনো দুর্ঘটনা ঘটানোর সুযোগ কেউ পায়নি। সম্মিলিতভাবে সমন্বয়ের মাধ্যমে এটি সম্ভব হয়েছে। প্রকাশক, লেখক, স্টল মালিকরা সন্তুষ্টি ও ধন্যবাদ জানিয়েছেন।

ব-দ্বীপের বিরূদ্ধে আইনি ব্যবস্থা অব্যাহত থাকবে বলেও জানান এ কর্মকর্তা। তিনি বলেন, দেশের কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়, মত প্রকাশের অধিকার যেমন আছে, তেমনি অন্যের অনুভূতিতে আঘাতও ঠিক নয়।

প্ল্যাটফর্মের স্টলে খোঁজখবর নিয়ে তাদের নিরাপত্তার আশ্বাস দেন তিনি।

২৮তম দিনের নতুন বই
মেলার তথ্যকেন্দ্র থেকে পাওয়া হিসেবে মেলার ২৮তম দিনে নতুন বই এসেছে ৯২টি।
 
এর মধ্যে রয়েছে গল্পের বই ৬, উপন্যাস ৭, প্রবন্ধ ৪, কবিতা ২৯, গবেষণা ৩, ছড়া ৩, শিশুতোষ ৪, জীবনী ১, রচনাবলি ১, মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক ৫, নাটক ২, বিজ্ঞান ২, ইতিহাস ২, চিকিৎসা/স্বাস্থ্য বিষয়ক ৩, অনুবাদের ২, সায়েন্স ফিকশন ২ এবং অন্যান্য ধরনের ১৬টি বই।
 
এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য- কাজী আব্দুল কাদেরের পেদা টিং টিং, হারুন-অর-রশিদের বীরাঙ্গনা, সুকোমল বড়ুয়ার বাংলাদেশে পালি ও বৌদ্ধ বিদ্যা চর্চা, তারেক মাহমুদের তথ্য অধিকার আইনের ময়না তদন্ত, হাওলাদার মাকসুদের কদমতলার বিয়ে, হাসনাইন সাজ্জাদীর বিজ্ঞান যুগের সাংবাদিকতা, ড. মো. ফজলুল কবীর ভূঁইয়ার দেহের বিভিন্ন অসুখ ও তার প্রতিকার, লুৎফর চৌধুরীর একাত্তর।
 
‘জ্ঞানভিত্তিক সমাজ পেতে ডিজিটাল বাংলাদেশ’
বিকেল ৪টায় গ্রন্থমেলার মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘ডিজিটাল মুক্তিযুদ্ধের কৌশল’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিশিষ্ট তথ্যপ্রযুক্তিবিদ মোস্তফা জব্বার।
 
তিনি বলেন, সার্বিক বিবেচনায় ডিজিটাল বাংলাদেশ কেবলমাত্র প্রযুক্তির প্রয়োগ নয়, এটি বস্তুত একটি রাজনৈতিক আন্দোলন। এর মূল লক্ষ্য একটি জ্ঞানভিত্তিক সমাজ। ধর্মভিত্তিক জঙ্গি রাষ্ট্র গড়ে জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গড়া যায়না। বরং ডিজিটাল বাংলাদেশ আন্দোলনটি আমাদের মুক্তিযুদ্ধের প্রবহমান ধারারই অংশ।
 
জব্বার বলেন, অব্যাহত প্রযুক্তিক ও সামাজিক লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে ২০১৮ সালের মধ্যেই আমাদের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে হবে।
 
আলোচনায় অংশ নেন জাতীয় সংসদ সদস্য নাহিম রাজ্জাক, তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিব শ্যামসুন্দর সিকদার, ড. মাহবুবুল হক এবং তারিক সুজাত। এতে সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান।
 
সাম্প্রতিক সময়ে সরকারের গৃহীত নানা পদক্ষেপের মধ্য দিয়ে ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিপুল অগ্রগতি অর্জন করে বিশ্বে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে বলে মন্তব্য করেন অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান।
 
লোপা খানের পরিচালনায় আবৃত্তি সংগঠন ‘আবৃত্তিশীলন’ এবং শেখ উজ্জ্বলের পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘বাঙালি ফাউন্ডেশন’-এর শিল্পীরা সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশ নেন।
 
সংগীতে ছিলেন কণ্ঠশিল্পী অদিতি মহসিন, বুলবুল ইসলাম, ডা. অরূপ রতন চৌধুরী, লাইসা আহমেদ লিসা, মকবুল হোসেন, শারমিন সাথী ইসলাম, ছায়া রাণী কর্মকার, জান্নাত এ ফেরদৌসী, সেমন্তী মঞ্জরী এবং সুমা রাণী রায়।
 
এ অনুষ্ঠানে যন্ত্রাণুষঙ্গে ছিলেন এনামুল হক ওমর (তবলা), গাজী আবদুল হাকিম (বাঁশি), আবু কামাল (বেহালা), দীপঙ্কর রায় (প্যাড) এবং সুনীল কুমার সরকার (কী-বোর্ড)।
 
শেষ দিনে মেলা শুরু দুপুর ১টায়
২৯তম ও শেষ দিনে মেলা উন্মুক্ত হবে দুপুর ১টায়। সমাপনী দিনের মেলা চলবে রাত ৮টা পর্যন্ত। তার আগেই মেলার দু’ভাগের সংলগ্ন রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যাবে।
 
বিকেলে গুণী স্মরণ
বিকেল ৪টায় গ্রন্থমেলার মূল মঞ্চে রয়েছে ‘নওয়াজেশ আহমেদ ও নাইবুদ্দিন আহমদকে স্মরণ’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান আয়োজন হবে। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন শিল্প-সমালোচক অধ্যাপক নজরুল ইসলাম।
 
আলোচনায় অংশ নেবেন শামসুল আলম এবং নাসিম আহমেদ নাদভী। সভাপতিত্ব করবেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর এমপি।
 
মেলার প্রতিবেদন সন্ধ্যায়
সন্ধ্যা ৬টায় গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা-২০১৬’র সমাপনী অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা ভাষণ দেবেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান।
 
গ্রন্থমেলা ২০১৬’র প্রতিবেদন উপস্থাপন করবেন অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৬-এর সদস্য-সচিব ড. জালাল আহমেদ।
 
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব বেগম আক্তারী মমতাজ। এতে সভাপতিত্ব করবেন বাংলা একাডেমির সভাপতি ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান।
 
অবদানের স্বীকৃতি
অনুষ্ঠানে প্রবাসে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের চর্চায় অবদানের জন্য ফরাসি গবেষক ও অনুবাদক ফ্রাঁস ভট্টাচার্য ও প্রবাসী বাঙালি কথাশিল্পী মন্জু ইসলামকে সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্ পুরস্কার-২০১৫ আনুষ্ঠানিকভাবে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে বাংলা একাডেমি।
 
এছাড়া ২০১৫ সালে প্রকাশিত বিষয় ও গুণমানসম্মত সর্বাধিক সংখ্যক গ্রন্থ প্রকাশের জন্য চিত্তরঞ্জন সাহা স্মৃতি পুরস্কার-২০১৬, ২০১৫ সালে প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্যে গুণমান ও শৈল্পিক বিচারে সেরা গ্রন্থের জন্য তিনটি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানকে মুনীর চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার-২০১৬, ২০১৫ সালে প্রকাশিত শিশুতোষ গ্রন্থের মধ্য থেকে গুণমান বিচারে সর্বাধিক গ্রন্থ প্রকাশের জন্য রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই স্মৃতি পুরস্কার-২০১৬ এবং ২০১৬ সালের অমর একুশে গ্রন্থমেলায় অংশগ্রহণকারী প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে থেকে নান্দনিক অঙ্গসজ্জায় সেরা প্রতিষ্ঠানকে শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার-২০১৬ দেওয়া হবে।
 
এছাড়া শেষের দিকে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান থাকবে।
 
বাংলাদেশ সময়: ২১২২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০১৬
এসকেএস/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।