ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বইমেলা

প্রতারণাই ঐতিহ্য’র পুঁজি!

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩৩৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২০, ২০১৭
প্রতারণাই ঐতিহ্য’র পুঁজি! ঐতিহ্য

ঢাকা: রিয়াদুল ইসলাম লিটন, গ্রাফিক্স ডিজাইনার। কাজ করেন রাজধানীর গুলশানের একটি ট্যুরিজম কোম্পানিতে। কবিতা ও ছড়া লেখায় তিনি সিদ্ধহস্ত। বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত তার কবিতা ও ছড়া পাঠক প্রিয়তা অর্জন করেছে। বড় ইচ্ছা ছিলো বই বের করার। তাই অমর একুশে গ্রন্থমেলার আগে দেশের তথাকথিত স্বনামধন্য প্রকাশনা সংস্থা ঐতিহ্য’র শরণাপন্ন হন তিনি।

পরের খবর হলো- অর্থলোভী ঐতিহ্য কর্তৃপক্ষ এই লেখকের কাছ থেকে তার বই’র পাণ্ডুলিপি এবং বই প্রকাশ বাবদ হ্যান্ডস্যাম একটা অ্যামাউন্ট গ্রহণ করে। প্রতিশ্রুতি দেয় ২০১৭ সালে অমর একুশে গ্রন্থমেলায় রিয়াদুল ইসলাম লিটনের প্রথম কাব্যগ্রন্থ তারা প্রকাশ করবে।

প্রথম বই আসছে অমর একুশে গ্রন্থমেলায়-এই আনন্দের সংবাদ আত্মীয় স্বজন, প্রতিবেশী, অফিস কলিগ, বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে জানান লিটন। মেলা প্রায় শেষের দিকে কিন্তু এখনো আসেনি রিয়াদুল ইসলাম লিটনের প্রথম কাব্যগ্রন্থ।

প্রতিদিনই মেলায় আসেন লিটন। ফিরে যান স্বপ্ন ভাঙার যন্ত্রণা নিয়ে। যে সব বন্ধুদের তিনি বলেছিলেন মেলায় তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ আসছে, তাদের সামনে পড়তেও এখন লজ্জা পান লিটন।

রোববার (১৯ ফেব্রুয়ারি) সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে কথা হয় রিয়াদুল ইসলাম লিটনের সঙ্গে। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, সুন্দর একটা লোগো ও পরিচয়ের অন্তরালে ‘ঐতিহ্য’ নবীন লেখকদের সঙ্গে প্রতারণা করছে। এভাবে অনেক নবীন লেখকের প্রথম বই ছাপার কথা বলে তাদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা সংগ্রহ করছে। বলা যায় প্রতারণাই ঐতিহ্য’র পুঁজি।

সূত্র মতে, শুধু রিয়াদুল ইসলাম লিটন নয়, অসংখ্য নবীন লেখকদের কাছে থেকে পাণ্ডুলিপির সঙ্গে মোটা অংকের টাকা সংগ্রহ করে ঐতিহ্য- বই প্রকাশ করে না। প্রতি বছর মেলার আগে ফান্ড সংগ্রহের জন্য এই কৌশল অবলম্বন করে তারা।

প্রতারণাই ঐতিহ্য’র পুঁজি!

জানা গেছে, এ ধরনের কাজ করার পর চাপে পড়লে কখনো কখনো নবীন লেখক বা গ্রাহকদের টাকা ফেরৎ দেয় ঐতিহ্য। আর বড় ধরনের চাপে না পড়লে প্রতারণার মাধ্যমে সংগ্রহ করা অর্থ দিয়েই চালিয়ে যায় নিজেদের ব্যবসা-বাণিজ্য।

কয়েকজন ভুক্তভোগীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঐতিহ্য’র সব চেয়ে বড় প্রকল্প ৩০ খণ্ডে রবীন্দ্র রচনাবলী সমগ্র প্রকাশের শুরুতে এই হীন কৌশল অবলম্বন করেছিলো তারা।

২০১৩ সালের বইমেলায় ব্যাপক প্রপাগান্ডা চালিয়ে ৩০ খণ্ডে রবীন্দ্র রচনাবলী সমগ্রের জন্য আগাম টাকা সংগ্রহ করে তারা। প্রায় ১৫শ’ গ্রহকের কাছ থেকে কয়েক কোটি টাকা সংগ্রহ করে সেই টাকায় নিজেদের ব্যবসা চাঙ্গা করে ঐতিহ্য। ২০১৫ সাল পর্যন্ত গ্রাহকের হাতে বই তুলে দিতে ব্যর্থ হয়ে অবশেষে একটি বহুজাতিক কোম্পানির পৃষ্ঠপোষকতায় ২০১৬ সালে ৩০ খণ্ডে রবীন্দ্র সমগ্র বের করে ঐতিহ্য।

কিন্তু পূর্ব নির্ধারিত দাম ১৩ হাজার ৫শ’ টাকায় কাউকে বই দেয়নি ঐতিহ্য। অনেক দেন-দরবার, রফা-দফা শেষে আগাম টাকা দেওয়া গ্রাহকরা সেই বই হাতে পান সাড়ে ১৪ ও সাড়ে ১৫ হাজার টাকায়। এবারের বই মেলায় ৩০ খণ্ডে রবীন্দ্র সমগ্র ঐতিহ্য বিক্রি করছে সাড়ে ১৮ হাজার টাকায়!

এদিকে মেলায় আসা বেশিরভাগ পাঠক ও বই ক্রেতাদের অভিযোগ, অন্য যে কোনো প্রকাশনীর তুলনায় ঐতিহ্য’র বইয়ের দাম বেশি। ১৫০ পৃষ্ঠার বই কখনো ৩শ’ টাকা, কখনো সাড়ে ৩শ’ টাকা দাম ধরেছে ঐতিহ্য। এ ক্ষেত্রে কোনো প্রকার নীতিমালা মানছে না এ প্রকাশনা সংস্থাটি!

অবশ্য এসব অভিযোগ অস্বীকার করে ঐতিহ্য’ প্রকাশনীর বিক্রয় ব্যবস্থাপক আমজাদ হোসেন খান কাজল বাংলানিউজকে বলেন, ছাপার যোগ্য কোনো বইয়ের লেখকের কাছে থেকে আমরা টাকা নিই না। ছাপার অযোগ্য বই আমরা ছাপাই না।

বইয়ের অতিরিক্ত মূল্য সম্পর্কে তিনি বলেন, ভালো প্রিন্ট, ভালো কাগজ ও মান সম্পন্ন বইয়ের বিচারে আমরা সবচেয়ে কম দামে বই বিক্রি করি। সুতরাং এ অভিযোগটিও ঠিক না।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৩৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২০, ২০১৭
এজেড/এটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।